শেয়ার বিজ ডেস্ক : বাড়তি শুল্কহার কার্যকর হওয়ার মাত্র কয়েক ঘণ্টা আগেই শুল্কবিরতির সময় বাড়াল যুক্তরাষ্ট্র ও চীন। দুদেশ তাদের বাণিজ্যবিরতি আগামী ১০ নভেম্বর পর্যন্ত বাড়িয়েছে। এক যৌথ বিবৃতিতে বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ দুটি জানিয়েছে, চলতি বছরের শুরুর দিকে ঘোষিত একে অপরের পণ্যের ওপর তিন অঙ্কের শুল্ক আরও ৯০ দিনের জন্য স্থগিত থাকবে। খবর: বিবিসি।
উভয় পক্ষই গত মাসে শেষ হওয়া আলোচনাকে গঠনমূলক বলে উল্লেখ করেছে। সে সময় চীনের প্রধান মধ্যস্থতাকারী বলেছিলেন, দুই দেশই সাময়িক এই বিরতি বজায় রাখতে কাজ করবে।
আর মার্কিন কর্মকর্তারা প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের চূড়ান্ত অনুমোদনের অপেক্ষায় আছেন বলে জানিয়েছেন। গত সোমবার প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এই শুল্ক বিরতি বাড়ানোর এক নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করেছেন। এর মানে হলো ওয়াশিংটন চীনা পণ্যের ওপর ১৪৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ আরও বিলম্বিত করবে এবং বেইজিং যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যের ওপর ১২৫ শতাংশের শুল্ক বিরতি অব্যাহত রাখবে।
এই চুক্তি অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্র চীনা আমদানির ওপর ৩০ শতাংশ শুল্ক রাখবে এবং চীন যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যের ওপর ১০ শতাংশ শুল্ক রাখবে। হোয়াইট হাউস বলেছে, এই বিরতি বাড়লে বাণিজ্যে ভারসাম্যহীনতা নিরসন এবং অন্যায্য বাণিজ্য আচরণ মোকাবিলার জন্য আরও সময় মিলবে।
তারা জানিয়েছে, ২০২৪ সালে চীনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য ঘাটতি প্রায় ৩০০ বিলিয়ন ডলার, যা তাদের যে কোনো বাণিজ্য অংশীদারের মধ্যে সবচেয়ে বড়।
ওয়াশিংটনে অবস্থিত চীনা দূতাবাসের একজন মুখপাত্র বলেন, চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে উইন-উইন সহযোগিতাই সঠিক পথ; দমন ও নিয়ন্ত্রণ করা কোনো সমাধানে নিয়ে যাবে না। চীন বিবৃতিতে যুক্তরাষ্ট্রকে তাদের অযৌক্তিক বাণিজ্যিক নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।
উভয় পক্ষের কোম্পানিগুলো লাভবান হওয়ার জন্য একই সঙ্গে কাজ করা এবং বিশ্বব্যাপী সেমিকন্ডাক্টর উৎপাদনের স্থিতিশীলতা বজায় রাখার আহ্বান জানিয়েছে চীন।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, এই আলোচনার লক্ষ্য যুক্তরাষ্ট্রের রপ্তানিকারকদের চীনে প্রবেশ বাড়ানো এবং জাতীয় নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক বিষয়গুলোও এর আওতায় থাকবে। দাম ও অর্থনীতিতে শুল্কের প্রভাব নিয়ে উদ্বেগের মধ্যে উচ্চ শুল্ক ফিরিয়ে আনা হলে বাণিজ্যে আরও অস্থিরতা এবং অনিশ্চয়তার আরও ঝুঁকি থাকত।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যখন এপ্রিল মাসে সারা বিশ্বের অনেক দেশের ওপর নতুন শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেন, তখন যুক্তরাষ্ট্র-চীন বাণিজ্য উত্তেজনা চরমে পৌঁছায়। কেননা চীনের ওপর সবচেয়ে বেশি শুল্ক নির্ধারণ করা হয়েছিল। এর প্রতিশোধ হিসেবে বেইজিংও শুল্ক আরোপ করেছিল। ফলে একে অপরের ওপর পাল্টা আক্রমণের কারণে শুল্ক তিন অঙ্কে পৌঁছায়। এতে দুই দেশের বাণিজ্য প্রায় বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়। তবে দুই পক্ষই মে মাসে কিছু পদক্ষেপ স্থগিত রাখতে রাজি হয়েছিল।
ওই চুক্তির ফলে যুক্তরাষ্ট্রে চীনা পণ্য ঢুকতে হলে বছরের শুরুর তুলনায় অতিরিক্ত ৩০ শতাংশ শুল্ক গুনতে হবে। অন্যদিকে চীনে যুক্তরাষ্ট্রের পণ্য প্রবেশে নতুন করে ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়। দুই পক্ষই এখনো চীনের বিরল খনিজের প্রবেশাধিকার, রাশিয়ার কাছ থেকে তেল ক্রয় এবং চীনের কাছে চিপসসহ উন্নত প্রযুক্তির বিক্রির ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞাসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনায় রয়েছে। সম্প্রতি কিছু রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা শিথিল করেছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প।
এর ফলে এএমডি ও এনভিডিয়ার মতো প্রতিষ্ঠানগুলো নির্দিষ্ট চিপ চীনা কোম্পানিগুলোর কাছে আবার বিক্রি শুরু করতে পেরেছে। বিনিময়ে তাদের আয়ের ১৫ শতাংশ সরকারকে দিতে হবে।
যুক্তরাষ্ট্র টিকটককে তার চীনা মালিক বাইটড্যান্সের কাছ থেকে আলাদা করতে চেষ্টা করছে। কিন্তু এর বিরোধিতা করে আসছে চীন। সোমবার ট্রাম্প সাংবাদিকদের এই শুল্ক বিরতি বাড়ানোর প্রতিশ্রুতি দেননি, তবে আলোচনা ভালোভাবে চলছে বলে মন্তব্য করেছেন। এর এক দিন আগে বেইজিংকে যুক্তরাষ্ট্রের সয়াবিন আরও বেশি পরিমাণে কেনার আহ্বান জানান তিনি। শুল্কবিরতি থাকলেও চলতি বছর দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্যপ্রবাহ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালের জুন মাসের তুলনায় ২০২৫ সালের জুনে যুক্তরাষ্ট্রে চীনা পণ্য আমদানি প্রায় অর্ধেকে নেমে এসেছে। বছরের প্রথম ছয় মাসে যুক্তরাষ্ট্র চীন থেকে ১৬৫ বিলিয়ন ডলারের পণ্য আমদানি করেছে, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় ১৫ শতাংশ কম। একই সময়ে চীনে যুক্তরাষ্ট্রের রপ্তানি প্রায় ২০ শতাংশ কমে গেছে।
গত ৯ এপ্রিল যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে চীনা পণ্যের ওপর শুল্ক ৩৪ শতাংশ অতিরিক্তি শুল্ক কার্যকরের কথা বলা হয়। তবে নির্ধারিত এই হার কার্যকর হওয়ার কয়েক ঘণ্টা আগেই তা বাড়িয়ে ৮৪ শতাংশ করা হয়। ফলে সে সময় চীনা পণ্যের ওপর মোট শুল্ক ১০৪ শতাংশে দাঁড়িয়েছিল। এর আগেও যুক্তরাষ্ট্র চীনা পণ্যের ওপর ২০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছিল। এখন নতুন সিদ্ধান্তের ফলে চীনা পণ্যে শুল্কহার আকাশচুম্বী হয়ে গেছে। গত ২ এপ্রিল যুক্তরাষ্ট্র চীনের ওপর আরও ৩৪ শতাংশ শুল্ক আরোপ করার পর গত ৪ এপ্রিল চীনও সমান হারে যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যের ওপর শুল্ক আরোপ করে। এর আগে হোয়াইট হাউস জানিয়েছে, চীনে যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যে পাল্টা শুল্ক আরোপ করায় তারা দেশটির বিরুদ্ধে এই পদক্ষেপ নিয়েছে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আগেই বলেছিলেন, চীন যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে পাল্টা শুল্ক প্রত্যাহার না করলে দেশটির ওপর আরও ৫০ শতাংশ আমদানি শুল্ক বসানো হবে। তিনি বলেন, আমি আগেই সতর্ক করেছিলাম, যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে যদি কোনো দেশ পাল্টা শুল্ক আরোপ করে, তবে তারা সঙ্গে সঙ্গে নতুন এবং অনেক বেশি হারে শুল্কের মুখোমুখি হবে। এই প্রতিক্রিয়ায় চীন বলেছিল, চীনকে চাপ বা হুমকি দিয়ে কখনোই লাভ হবে না।

Discussion about this post