নিজস্ব প্রতিবেদক: বাংলাদেশের আর্থিক খাতে অপরাধ প্রতিরোধ সক্ষমতা জোরদার করতে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড বাংলাদেশ ও ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌথ উদ্যোগে পরিচালিত ফাইন্যান্সিয়াল ক্রাইম অ্যান্ড কমপ্লায়েন্স (এফসিসি) সার্টিফিকেশন প্রোগ্রাম সফলভাবে চারটি ব্যাচ সম্পন্ন করেছে। বর্তমানে পঞ্চম ব্যাচের প্রশিক্ষণ চলমান। এই কর্মসূচির সাফল্য উদযাপন করতে সম্প্রতি ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে এক বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর মো. জাকির হোসেন চৌধুরী। বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও বিএফআইইউ প্রধান মো. মফিজুর রহমান খান চৌধুরী। আরও উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংক, স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ও ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
বক্তারা জানান, এ কর্মসূচি চালুর আগে একটি পর্যালোচনায় দেখা যায়—দেশে আর্থিক অপরাধ প্রতিরোধে প্রয়োজন অন্তত ২৫০ জন বিশেষ প্রশিক্ষিত জনশক্তি, অথচ তখন ছিলেন মাত্র হাতে গোনা কয়েকজন। ঋণ ঝুঁকি দীর্ঘদিনের পরিচিত হলেও আর্থিক অপরাধের ঝুঁকি তুলনামূলকভাবে নতুন, জটিল ও দ্রুত বিস্তৃত হওয়ায় বিশেষায়িত দক্ষতার চাহিদা বাড়ছিল। এই পরিস্থিতি বিবেচনায় ২০২৪ সালের শুরুতে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ও ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় যৌথভাবে এফসিসি সার্টিফিকেশন প্রোগ্রাম চালু করে।
শিক্ষাগত যোগ্যতা ও শিল্প অভিজ্ঞতার সমন্বয়ে সাজানো এই কোর্সে অর্থপাচার ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধ, জালিয়াতি শনাক্তকরণ, নৈতিকতা ও কমপ্লায়েন্স ব্যবস্থাপনা—এসব গুরুত্বপূর্ণ মডিউল অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। অংশগ্রহণকারীরা স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড বাংলাদেশ, বিএফআইইউ এবং ব্র্যাক বিজনেস স্কুলের বিশেষজ্ঞদের কাছ থেকে মেন্টরশিপ গ্রহণের সুযোগ পাচ্ছেন।
এ পর্যন্ত চারটি ব্যাচে মোট ১৭৭ জন অংশগ্রহণকারী সনদ অর্জন করেছেন, এবং পঞ্চম ব্যাচে ভর্তি হয়েছে আরও ৫৫ জন। দেশের আর্থিক খাতের দক্ষতা উন্নয়নে এই প্রোগ্রামটি ইতোমধ্যে একটি টেকসই প্ল্যাটফর্মে পরিণত হয়েছে।
স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড বাংলাদেশের সিইও নাসের এজাজ বিজয় বলেন, ‘এফসিসি প্রোগ্রাম একাডেমিয়া ও ইন্ডাস্ট্রির সফল সমন্বয়ের দৃষ্টান্ত। দক্ষ মানবসম্পদের ঘাটতি পূরণে এই কর্মসূচি গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে।’
ব্র্যাক বিজনেস স্কুলের ডিন অধ্যাপক মোহাম্মদ মুজিবুল হক দেশে আর্থিক অপরাধের নাজুক পরিস্থিতির কথা উল্লেখ করে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড, বিএফআইইউ ও ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সংশ্লিষ্ট সকলকে ধন্যবাদ জানান। ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক আরশাদ চৌধুরী এবং কোষাধ্যক্ষ আরিফুল ইসলাম দক্ষ পেশাজীবী তৈরিতে প্রতিষ্ঠানের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেন।
বাংলাদেশে আর্থিক অপরাধ এখনও একটি বড় চ্যালেঞ্জ। এফসিসি প্রোগ্রামের মাধ্যমে তৈরি হওয়া বিশেষজ্ঞরা অবৈধ লেনদেন শনাক্ত ও প্রতিরোধে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখবেন, যা দেশের আর্থিক খাতের স্থিতিশীলতা ও নিরাপত্তা বাড়াবে।
স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড গত ১২০ বছর ধরে দেশের অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রায় অবদান রেখে আসছে। অন্যদিকে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় উচ্চশিক্ষা ও গবেষণায় দক্ষ মানবসম্পদ গঠনে কাজ করে যাচ্ছে। যৌথ এই উদ্যোগ দেশের আর্থিক খাতকে আরও শক্তিশালী করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে।
প্রিন্ট করুন








Discussion about this post