তৈয়ব আলী সরকার, নীলফামারী : উত্তরের জেলা নীলফামারীর বাণিজ্যিক শহর সৈয়দপুরের তৈরি জ্যাকেট, টুপি, ট্রাউজার, মোবাইল প্যান্ট ও সোয়েটার প্রতি বছর বিভিন্ন দেশে রপ্তানি হয়। তবে গত বছর থেকে পার্শ^বর্তী দেশ ভারতে রপ্তানি বন্ধ রয়েছে। এতে আর্থিক সংকটে পড়েছেন স্থানীয় ব্যবসায়ীরা।
এ ব্যাপারে সৈয়দপুর বস্ত্র ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি সৈয়দ মনজুর হোসেন জানান, ২০২২-২৩ সালে এসব পোশাকের বড় অংশ রপ্তানি হতো ভারত, নেপাল ও ভুটানসহ দেশের অন্যান্য বাজারে। ২০২৪ সালের পর থেকে ভারতে রপ্তানি বন্ধ থাকায় অনেকটা লোকসানের মুখে পড়েছেন জ্যাকেট ও টুপি প্রস্তুতকারী ব্যবসায়ীরা। ফলে শ্রমিকদের পাওনা ঠিকমতো মেটাতে পারছেন না। এতে সামগ্রিকভাবে ক্ষতির মুখে পড়েছে এই খাত।
রপ্তানিমুখী ক্ষুদ্র গার্মেন্ট মালিক সমিতি সূত্রে জানা যায়, শীত আসার আগে থেকেই সৈয়দপুরে জ্যাকেট তৈরির কাজ শুরু হয়েছে। এসব জ্যাকেট এখন গুদামজাত করা হচ্ছে। শহরের প্রায় দুই শতাধিক গার্মেন্ট কারখানায় দিন-রাত তৈরি হচ্ছে জ্যাকেট, টুপি, ট্রাউজার ও অন্যান্য শীতের পোশাক। এখানে কারখানা গড়ে উঠেছে শহরের পাড়া-মহল্লায়। প্রতিটি কারখানায় রয়েছে ২০ থেকে ২০০টি আত্যাধুনিক সেলাই মেশিন। শীতের তৈরি পোশাকের কাঁচামাল (ঝুট কাপড়) সংগ্রহ করা হয় ঢাকা, চট্টগ্রাম ও নারায়ণগঞ্জের বড় বড় গার্মেন্ট থেকে।
শহরের নয়াটোলা মহল্লার এইচ আর গার্মেন্টের মালিক হামিদুর রহমান জানান, এ বছর তিনি ৫০ লাখ টাকার অর্ডার পেয়েছেন। অথচ ২০২৪ সালের আগে শীত মৌসুমে কোটি টাকারও বেশি অর্ডার পেতেন। এসব শীতবস্ত্র নভেম্বরের শেষে পাঠানো হতো; কিন্তু সেটা এবারে হচ্ছে না। স্থানীয় চাহিদা মেটাতে সামান্য কয়েকজন দর্জি দিয়ে সেলাইয়ের কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন বলে জানান তিনি।
শহরের নিয়ামতপুর নিমবাগান মহল্লার বাসিন্দা রনো জানান, আধুনিক ৫০টি সেলাই মেশিন নিয়ে একটি মাঝারি কারখানা নিজ বাড়িতেই গড়ে তুলেছেন তিনি। একেকজন শ্রমিক দিনে ৮-১০টি জ্যাকেট তৈরি করেন। এতে তারাও যেমন লাভবান হচ্ছে, পাশাপাশি ব্যবসায়ীরাও খরচ মিটিয়ে লাভের মুখ দেখছিলেন। তিনি জানান, ২০২৪ সালের আগে তার কারখানায় তৈরি জ্যাকেট ভারতের শিলিগুড়িতে পাঠানো হতো। চলতি শীত মৌসুমে বিভিন্ন কারখানায় সাত-আট কোটি টাকার জ্যাকেট সৈয়দপুরে তৈরি হলেও ভারতে রপ্তানি না হওয়ায় শ্রমিক ও মালিক লোকসানে পড়বেন।
উপজেলা শহরের মুন্সিপাড়া, সাহেবপাড়া, মিস্ত্রিপাড়া, কয়ানিজপাড়া, চাঁদনগর, সৈয়দপুর প্লাজাসহ গ্রামীণ জনপদে গড়ে উঠেছে কয়েকশ কারখানা। এসব কারখানায় তৈরি শীতের পোশাক বিদেশে রপ্তানি করতে না পেরে স্থানীয়ভাবে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলেও সরবরাহ করা হচ্ছে। দেশের পাইকারি ব্যবসায়ীদের কাছে প্রতিটি জ্যাকেট ৪০০ থেকে ১২০০ টাকা দামে বিক্রি করা হচ্ছে।
সৈয়দপুরের রপ্তানিমুখী ক্ষুদ্র গার্মেন্ট কারখানা মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সাহিন আকতার জানান, এবার স্থানীয়ভাবে কিছু অর্ডার পাওয়া গেছে। ব্যাংকগুলো সুদমুক্ত আর্থিক সহায়তা দিলে ব্যবসায়ীরা এ ব্যবসা আরও বাড়াতে পারতেন। এতে কর্মসংস্থানের সুযোগও বাড়বে। তিনি জানান, সৈয়দপুরের বেশির ভাগ গার্মেন্ট কারখানা রেলের জমিতে গড়ে ওঠায় ঋণ দিতে চায় না ব্যাংকগুলো। ফলে অনেক ব্যবসায়ী অর্থের অভাবে তাদের ব্যবসা বাড়াতে পারছেন না। এসব বিষয়ে সরকারের সুদৃষ্টি দেয়ার অনুরোধ জানান তিনি।
এ ব্যাপারে বস্ত্র ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি সৈয়দ মনজুর হোসেন জানান, রাজনৈতিক নানা জটিলতায় বাইরের দেশে শীতের কাপড় পাঠানো যাচ্ছে না। তবে দ্রুত এটির সমাধান হবে বলে আশা করেন এই ব্যবসায়ী নেতা।
প্রিন্ট করুন




Discussion about this post