সাইফুল আলম : পুঁজিবাজারের তালিকাভুক্ত পোশাক খাতের কোম্পানি আলিফ ম্যানুফেকচারিং গত এক বছর আগের ঘোষিত শেয়ারপ্রতি এক পয়সা করে মোট এক কোটি ৮০ লাখ ৭৬ হাজার টাকা লভ্যাংশ পরিশোধ করেনি। অথচ একই মালিকের আরেকটি প্রতিষ্ঠান আলিফ ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের ১০ শতাংশ নগদ ও ১০ শতাংশ স্টক লভ্যাংশ পরিশোধ করছে। এতে কোম্পানিটির শেয়ারমূল্যও বাড়ছে।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ সূত্রে জানা যায়, দেশের পুঁজিবাজারে আলিফ গ্রুপে পোশাক খাতের দুই সহযোগী প্রতিষ্ঠান আলিফ ম্যানুফেকচারিং কোম্পানি এবং আলিফ ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড তালিকাভুক্ত। এর মধ্যে আলিফ ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানি লিমিটেড গত ২০২৪ সালের ৩০ জুন সমাপ্ত হিসাববছরের জন্য লভ্যাংশ ঘোষণা করেছিল। কোম্পানিটি সাধারণ শেয়ারহোল্ডারদের ১ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা করেছিল। অর্থাৎ মোট লভ্যাংশের পরিমাণ মাত্র এক কোটি ৮০ লাখ ৭৬ হাজার টাকা। কিন্তু আট মাসেও এ লভ্যাংশ পরিশোধ করতে পারেনি। ফলে নিয়মিতভাবে শেয়ারের দাম কমেছে। তখন কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি মুনাফা হয়েছে ৩৩ পয়সা। আগের বছর মুনাফা হয়েছিল ৫০ পয়সা। আর শেয়ারপ্রতি নিট সম্পদ মূল্য ছিল ১৫ টাকা ১৫ পয়সা।
অপরদিকে আলিফ ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বিনিয়োগকারীদের জন্য ১০ শতাংশ নগদ ও ১০ শতাংশ স্টক লভ্যাংশ ঘোষণা করেছিল। এ লভ্যাংশ কিছুটা দেরিতে হলেও উদ্যোক্তারা পরিশোধও করে। তবে কোম্পানিটি বিভিন্ন সময়ে বি্িযভন্ন প্রতিষ্ঠান অধিগ্রহণের কথা বলা হলেও সেসব ঘোষণার তেমন বাস্তবায়ন করতে পারেনি। কয়েক বছর আগে ডেনিম প্রস্তুতকারী কোম্পানি রয়েল ডেনিম লিমিটেডের মালিকানা অধিগ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বস্ত্র খাতের কোম্পানি আলিফ ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড। তখন রয়েল ডেনিমের উদ্যোক্তাদের কাছে থেকে শেয়ার ক্রয়, শ্রমিকদের বেতন, বোনাস, বেপজা বকেয়া পাওনা এবং ইসলামী ব্যাংকের ঋণ পরিশোধের কার্যকর পদক্ষেপ ও অধিগ্রহণের সকল প্রক্রিয়া পরিপালনের কথা ছিল। কিন্তু অধিগহণের শর্ত পরিপালনে ব্যর্থ হয়েছে আলিফ ইন্ডাস্ট্রিজ। বিষয়টি নিয়ে আলিফ ইন্ডাস্ট্রিজের চেয়ারম্যান ও এমডিকে আইনগত নোটিশ দিয়েছে রয়েল ডেনিমের সাবেক চেয়ারম্যান সাইদুর রহমান।
বেশ কয়েকজন সাধারণ বিনিয়োগকারীরা বলেন, আলিফ গ্রুপের দুই প্রতিষ্ঠানের লভ্যাংশ বিতরণে দুই রকমের মনোভাব প্রকাশ পেয়েছে, যা আমাদের জন্য হতাশাজনক। আর আলিফ গ্রুপ বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন কোম্পানি অধিগ্রহণের কথাও বলা হলেও নির্দিষ্ট সময়ে তেমন কোনো কিছু ঘোষণা বাস্তবায়ন করতে পারেনি। যা ছিল শুধুমাত্র নিজেদের দাম বাড়ানোর জন্য ঘোষণা। এসব আয়োজন নিজেরাই লাভবান হওয়ার উদ্যোগ, যা কমিশনের তদন্ত করা উচিত।
এ বিষয়ে আলিফ ইন্ডাস্ট্রিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আজিমুল ইসলাম শেয়ার বিজকে বলেন, দুই কোম্পানির লভ্যাংশ বিতরণ করা হয়েছে কিনা তা আমি জানি না। এ বিষয়ে খোঁজখবর নিয়ে আপনাকে আমি জানাব। আর আমাদের সঙ্গে রয়েল ডেনিমের সঙ্গে এমওইউ আছে। আমরা সিঅ্যান্ডএ টেক্সটাইল, রয়েল ডেনিম অধিগ্রহণে কমিশনে বন্ডের জন্য আবেদন করেছিলাম। সেই বন্ড এখনও হয়নি। এর মধ্যে দেশের সরকার পরিবর্তন হয়ে গেল। এতে অনেক প্রক্রিয়া সেøা হয়ে যায়। তবে আমরা বসে নেই। আমাদের কাজ আমরা করছি।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের মুখপাত্র আবুল কালামের বক্তব্য জানার জন্য যোগাযোগ করা হলে ফোন রিসিভ করেননি। ফলে উনার মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
উল্লেখ্য, চলতি বছরের জুলাইয়ে আলিফ ইন্ডাস্ট্রিজের পরিচালকদের কাছে শেয়ার ইস্যু করে ২০০ কোটি টাকা তহবিল সংগ্রহের আবেদনটি বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) বাতিল করে। ফলে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত রুগ্ন প্রতিষ্ঠান সিঅ্যান্ডএ টেক্সটাইলসকে পুনরুজ্জীবিত করার আলিফ ইন্ডাস্ট্রিজের পরিকল্পনা আবারও ধাক্কা খেয়েছে।

Discussion about this post