Print Date & Time : 7 August 2025 Thursday 1:42 pm

আলুচাষিদের রক্ষায় প্রণোদনা দেয়া হোক

 

‘আলুর দরপতন, কেজিতে ১০ টাকা লোকসান কৃষকের’ শীর্ষক যে প্রতিবেদন গতকাল প্রকাশিত হয়েছে একটি সহযোগী দৈনিকে, তাতে কৃষকদের দুরবস্থার কথাই যেন সামনে এসেছে।  প্রতিবেদনে জানা যায়, যশোরে এবার ১ হাজার ৫৫০ হেক্টর জমিতে আলুর আবাদ হয়। ফলন পাওয়া গেছে ৩৬ হাজার ৩৪৮ টন। লোকসানে বিক্রি করতে হলে আগামী মৌসুমে অনেক কৃষকই আলু চাষে আগ্রহ হারাতে পারেন।

জেলার ১১টি হিমাগারে এবার সাড়ে ৪০ হাজার টন আলু সংরক্ষণ করা হয়। এখনও অবশিষ্ট আছে ৩০ হাজার ২৬৪ টন। বস্তা কেনাসহ পরিবহন ও  শ্রমিক খরচ মিলিয়ে রয়েছে আরও তিন টাকা। অর্থাৎ হিমাগারে এক কেজি আলু সংরক্ষণ করতে ২৪ টাকা খরচ হয়েছে। সংরক্ষণের পাঁচ মাস পরে এখন হিমাগারে পাইকারিতে সাড়ে ১৫ থেকে ১৬ টাকা কেজি দরে আলু বেচাকেনা হচ্ছে। অর্থাৎ প্রতি কেজি আলুতে কৃষকদের ১০ টাকার মতো লোকসান গুনতে হচ্ছে। সেই সঙ্গে ব্যাপারীরাও লোকসানে রয়েছেন। কৃষকের জীবিকা নির্বাহের প্রধান উৎস ফসল উৎপাদন। স্বভাবতই ভালো ফলন হলে তারা আনন্দিত হন।

লাভের আশায়ই আলু আবাদ করেছেন চাষিরা। ফলনও হয়েছে ভালো। কিন্তু দাম অস্বাভাবিক কমে যাওয়ায় উৎপাদন খরচ ওঠা নিয়ে তারা দুশ্চিন্তায় রয়েছেন, আবার হিমাগারে জায়গা না পাওয়ায় সংরক্ষণ করতে না পারায় তারা শঙ্কিত। এ অবস্থায় কৃষকদের ঘরোয়া পদ্ধতিতে আলু সংরক্ষণ করার পরামর্শ দিচ্ছে কৃষি বিভাগ। কৃষকরা কষ্টে-সৃষ্টে চাষ করবেন, আবার আলু সংরক্ষণ করতে পারবেন না, এটি দুঃখজনক। কৃষক অবশ্যই ঘরে সংরক্ষণ করার চেষ্টা করবেন। কিন্তু সবার তো ঘরে সংরক্ষণের সামর্থ্য নেই। তাই ঢালাও ‘পরামর্শ’ না দিয়ে কৃষি বিভাগের উচিত পর্যাপ্ত হিমাগারের ব্যবস্থা করা।

আলু চাষ করতে বেশ কয়েকটি ধাপ অতিক্রম করতে হয়। প্রথমে ভালোভাবে জমি চাষ দিতে হয়। এরপর প্রয়োজনীয় সার দিয়ে রোপণ করতে হয় আলুবীজ। ১০ থেকে ১২ দিনের মাথায় জমিতে সেচ দিতে হয়। এর ১৫ থেকে ১৬ দিনের মাথায় আলুগাছ বেঁধে দিতে হয়। তারপর শুরু হয় কীটনাশক ছিটানোর পালা। আবহাওয়া ভালো থাকলে ১৫ দিন পরপর আর আলুক্ষেতে কীটনাশক দিতে হয়। এভাবে ৮৫ থেকে ৯০ দিন পার করতে হয় প্রত্যেক আলুচাষিকে। এরপর শুরু হয় ক্ষেত থেকে আলু ওঠানোর পালা। তাই আলু চাষ শ্রম ও ব্যয়সাধ্য। কিন্তু আলু ঘরে তোলার সময়ই তারা পড়ছেন সমস্যায়। হিমাগারে রাখতে পারছেন না, ঘরেও রাখতে পারছেন না। এখন বিক্রি করলেও ভালো দাম পাবেন না।

কবি কৃষককে ‘দেশমাতারই মুক্তিকামী দেশের সে আশা’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। এখন কৃষককে রক্ষায় তাদের পাশে দাঁড়াতে হবে। আলু সংরক্ষণ করে বিক্রি করতে পারলে কৃষক ভালো দাম পেয়ে লাভবান হতেন। কিন্তু আলু চাষের ভরা মৌসুমে একশ্রেণির সুবিধাভোগী ব্যবসায়ী আগেভাগে হিমাগার দখল করে রেখেছেন। তারা কৃষকের কাছ থেকে কম দামে আলু কিনে সংরক্ষণ করেন। দাম বাড়লেই তা বিক্রি করে দেন। যশোর অঞ্চলের হিমাগারগুলোয় প্রভাবশালী ব্যবসায়ীরা আগেভাগে বুকিং দেয়ায় প্রান্তিক চাষিরা সেখানে আলু সংরক্ষণের সুযোগ পাচ্ছেন না। কৃষককে এভাবে জিম্মি হওয়া থেকে রক্ষার জন্য ব্যবস্থা নিতে হবে।