‘উৎপাদন বাড়তেই কপাল পুড়ল চাষির’ শীর্ষক যে প্রতিবেদন গতকাল প্রকাশিত হয়েছে একটি সহযোগী দৈনিকে তা নীতিনির্ধারকদের গোচরীভূত হবে বলেই ধারণা। তথ্যমতে, এ বছর দেশের ৩৫৩টি হিমাগারে আলু সংরক্ষণ করা হয়েছে প্রায় ৩৫ লাখ টন। দেশে আলুর বার্ষিক চাহিদা কমবেশি ৯০ লাখ টন। এ বছর আলু উৎপাদিত হয়েছে ১ কোটি ২৯ লাখ টন।
প্রতি কেজিতে কৃষকের ন্যূনতম লোকসান ১০ টাকার বেশি লোকসান হচ্ছে বলে দাবি। লোকসান কমাতে আলুর ন্যূনতম দাম বেঁধে দেয়ার সুপারিশ হিমাগারমালিকদের। কৃষি অর্থনীতিবিদরা বলছেন, চাহিদার চেয়ে উৎপাদন বেশি হওয়ায় এবার দাম পড়ে গেছে। এবার দাম না পেয়ে বড় লোকসান হলে কৃষকেরা আগামী বছর আলুর উৎপাদন আবার কমিয়ে দেবেন। এটা উৎপাদন ব্যবস্থাপনার বড় ব্যর্থতা। কৃষকদের বড় অঙ্কের লোকসান থেকে বাঁচাতে সরকারের পক্ষ থেকে মূল্য সহায়তা দিতে বলছেন কৃষি অর্থনীতিবিদরা। কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের তথ্যমতে, এবার প্রতি কেজি আলু উৎপাদনে কৃষকের খরচ পড়েছে ১৪ থেকে ১৫ টাকা। বেসরকারি হিসাবে তা ১৭ টাকা। আর সেই আলু হিমাগার গেটে (পাইকারি) বিক্রি হচ্ছে ১২ থেকে ১৩ টাকায়। অথচ হিমাগার ভাড়ার সঙ্গে পরিবহন ও শ্রমিক ব্যয় যুক্ত করে প্রতি কেজিতে আলুতে কৃষকের খরচ প্রায় ২৫ টাকা। এখন যে দামে বিক্রি হচ্ছে, তাতে প্রতি কেজি আলুতে কৃষকের ন্যূনতম লোকসান ১০ টাকার বেশি।
লাভের আশায়ই আলু আবাদ করেছেন চাষিরা। ফলনও হয়েছে ভালো। কিন্তু দাম অস্বাভাবিক কমে যাওয়ায় উৎপাদন খরচ ওঠা নিয়ে তারা দুশ্চিন্তায় রয়েছেন, আবার হিমাগারে জায়গা না পাওয়ায় সংরক্ষণ করতে না পারায় তারা শঙ্কিত। এ অবস্থায় কৃষকদের ঘরোয়া পদ্ধতিতে আলু সংরক্ষণ করার পরামর্শ দিচ্ছে কৃষি বিভাগ। কৃষকরা কষ্টে-সৃষ্টে চাষ করবেন, আবার আলু সংরক্ষণ করতে পারবেন না, এটি দুঃখজনক। কৃষক অবশ্যই ঘরে সংরক্ষণ করার চেষ্টা করবেন। কিন্তু সবার তো ঘরে সংরক্ষণের সামর্থ্য নেই। তাই ঢালাও ‘পরামর্শ’ না দিয়ে কৃষি বিভাগের উচিত পর্যাপ্ত হিমাগারের ব্যবস্থা করা।
আলু চাষ করতে বেশ কয়েকটি ধাপ অতিক্রম করতে হয়। প্রথমে ভালোভাবে জমি চাষ দিতে হয়। এরপর প্রয়োজনীয় সার দিয়ে রোপণ করতে হয় আলুবীজ। ১০ থেকে ১২ দিনের মাথায় জমিতে সেচ দিতে হয়। এর ১৫ থেকে ১৬ দিনের মাথায় আলুগাছ বেঁধে দিতে হয়। তারপর শুরু হয় কীটনাশক ছিটানোর পালা। আবহাওয়া ভালো থাকলে ১৫ দিন পরপর আর আলুক্ষেতে কীটনাশক দিতে হয়। এভাবে ৮৫ থেকে ৯০ দিন পার করতে হয় প্রত্যেক আলুচাষিকে। এরপর শুরু হয় ক্ষেত থেকে আলু ওঠানোর পালা। তাই আলু চাষ শ্রম ও ব্যয়সাধ্য। কিন্তু আলু ঘরে তোলার সময়ই তারা পড়ছেন সমস্যায়। হিমাগারে রাখতে পারছেন না, ঘরেও রাখতে পারছেন না। এখন বিক্রি করলেও ভালো দাম পাবেন না।
আলু চাষের ভরা মৌসুমে একশ্রেণির সুবিধাভোগী ব্যবসায়ী আগেভাগে হিমাগার দখল করে রেখেছেন। তারা কৃষকের কাছ থেকে কম দামে আলু কিনে সংরক্ষণ করেন। দাম বাড়লেই তা বিক্রি করে দেন। যশোর অঞ্চলের হিমাগারগুলোয় প্রভাবশালী ব্যবসায়ীরা আগেভাগে বুকিং দেয়ায় প্রান্তিক চাষিরা সেখানে আলু সংরক্ষণের সুযোগ পাচ্ছেন না। কৃষককে এভাবে জিম্মি হওয়া থেকে রক্ষার জন্য ব্যবস্থা নিতে হবে।

Discussion about this post