শেয়ার বিজ ডেস্ক : ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য আসামের বাংলাদেশের সীমান্তলাগোয়া এলাকায় আদিবাসীদের অস্ত্রের লাইসেন্স দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে রাজ্য সরকার। এতে রাজ্যটির মুসলিমদের মাঝে ব্যাপক উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। খবর: এএফপি।
গত বুধবার আসামের কট্টর হিন্দুত্ববাদী মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা একটি ওয়েবসাইট চালুর ঘোষণা দিয়েছেন। এই ওয়েবসাইটের মাধ্যমে রাজ্যের যেসব আদিবাসী জনগোষ্ঠী নিজেদের জীবনের জন্য হুমকি অনুভব এবং সংবেদনশীল এলাকায় বসবাস করেন, তারা অস্ত্রের লাইসেন্সের জন্য আবেদন করতে পারবেন।
এর আগে হিমন্ত বিশ্ব শর্মা দাবি করেন, ‘অসমীয়া ভাষাভাষী জনগণ বাংলাদেশ সীমান্ত থেকে, এমনকি নিজেদের গ্রামেও হামলার হুমকির মুখোমুখি হয়েছেন।’
এদিকে ভারতের কঠোর অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ আইন থাকলেও রাজ্যজুড়ে হঠাৎ করে ঢালাওভাবে অস্ত্রের লাইসেন্স উন্মুক্ত করে দেয়ায় এই উদ্যোগের তীব্র সমালোচনা করেছেন বিরোধীদলীয় নেতারা।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেয়া এক পোস্টে রাজ্যের বিরোধী দল কংগ্রেসের আইনপ্রণেতা গৌরব গগৈ বলেছেন, ‘রাজ্য সরকারের অস্ত্রের লাইসেন্স দেয়ার এই উদ্যোগে গ্যাং সহিংসতা ও ব্যক্তিগত প্রতিশোধমূলক অপরাধ বৃদ্ধি পাবে। এটি সুশাসন নয়, বরং আইনহীনতার দিকে এক বিপজ্জনক পশ্চাৎগামী পদক্ষেপ।’
এই পদক্ষেপকে ব্যাপকভাবে বাংলা ভাষাভাষী মুসলমানদের লক্ষ করেই নেয়া হয়েছে বলে ধারণা করা হয়। তবে অনেক জাতিগত বাঙালিই আসামের বহু পুরোনো বাসিন্দা ও তারা ভারতীয় নাগরিক। এমনকি ১৯৪৭ সালে রক্তক্ষয়ী সংঘাতে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের পতনের সময় বাংলাদেশ আলাদা হয়ে যাওয়ার অনেক আগে থেকেই তাদের শিকড় আসামে রয়ে গেছে।
তবে ২০১৯ সালে ভারতের বিতর্কিত জাতীয় নাগরিক নিবন্ধন (এনআরসি) আইন চালু করা প্রথম রাজ্য আসাম। নাগরিকত্ব যাচাইয়ের এই প্রক্রিয়া রাজ্যে চালু করার পর প্রায় ২০ লাখ মানুষ নাগরিকত্বের তালিকা থেকে বাদ পড়েন, যাদের বেশিরভাগই মুসলমান।
বাংলাদেশে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বিজেপির ঘনিষ্ঠ মিত্র স্বৈরাচারী সরকারের পতনের পর গত এক বছরে আসামে ব্যাপক উত্তেজনা তৈরি হয়েছে।
মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মার দাবি, রাজ্যের সীমান্তবর্তী জেলাগুলোর আদিবাসী জনগণ বাংলাদেশের সাম্প্রতিক পরিস্থিতির কারণে এক ধরনের নিরাপত্তাহীনতার পরিবেশে বসবাস করছেন।
প্রসঙ্গত, ২০১১ সালের সর্বশেষ জাতীয় আদমশুমারি অনুযায়ী, আসামের বর্তমান জনসংখ্যা প্রায় ৩ কোটি ১০ লাখ। এর মধ্যে প্রায় ৩৫ শতাংশ মানুষ মুসলিম, যাদের বেশিরভাগই বাংলাভাষী।