রাজধানীর দিয়াবাড়ী এলাকায় মাইলস্টোন স্কুল ও কলেজ ক্যাম্পাসে বিমানবাহিনীর প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্তজনিত হূদয়বিদারক দুর্ঘটনায় দেশবাসী শোকাহত ও স্তম্ভিত। মর্মান্তিক এই ট্র্যাজেডি কেবল হতাহতদের পরিবার ও প্রতিষ্ঠানের জন্য নয়—সমগ্র জাতির জন্যই অপরিমিত বেদনা ও অপূরণীয় ক্ষতি। সোমবার দুপুরে সংঘটিত এই দুর্ঘটনার পর রাষ্ট্রপতি, প্রধান উপদেষ্টা ও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা শোক প্রকাশ করেছেন। সংবাদমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমও নাগরিক শোকের আবহ ধারণ করে সন্তান-স্বজন হারানো পরিবারের প্রতি সহমর্মিতা প্রকাশ করছে। তাদের সমবেদনা জানানোর ভাষা আমাদের নেই। মূলত ফুটফুটে নিষ্পাপ শিশু-কিশোরসহ হতাহতদের অগ্নিদগ্ধ শরীর এবং হাসপাতালে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করা মানুষকে সান্ত্বনা দেয়ার মতো কোনো মাধ্যম যথেষ্ট নয়। এ সময় আমাদের অনেকে সর্বোচ্চ আন্তরিকতায় আহতদের উদ্ধারে প্রাণান্ত চেষ্টা করেছেন। এর বাইরে কিছু বিপরীত চিত্রও চোখে পড়েছে। মাইলস্টোন স্কুলসংলগ্ন এলাকার আকাশ ও হাসপাতালগুলোয় স্বজনদের আহাজারি করুণ পরিবেশ সৃষ্টি করেছে। কোমলমতি শিশুদের গায়ে আগুন নিয়ে ছুটোছুটির মর্মন্তুদ দৃশ্যে মুহূর্তেই নেমে এসেছে বিষাদের কালো ছায়া। ভয়াবহ দুর্ঘটনার যারা প্রত্যক্ষ করেছেন, তাদের পক্ষে ওই দৃশ্য ভুলে যাওয়ার মতো নয়। ওই ঘটনার দৃশ্য মনে পড়লে শিউরে উঠবেন সংবেদনশীল যেকোনো মানুষ। ভাব যেখানে প্রবল, ভাষা সেখানে মূক। এখন আমাদের যাবতীয় কর্মপ্রচেষ্টা আহতদের চিকিৎসায় নিবেদত হওয়া উচিত। আমরা জানি, কোনো বাক্যই শোকসন্তপ্ত পরিবারগুলোর জন্য যথেষ্ট নয়।
দাপ্তরিক তথ্য অনুসারে এ পর্যন্ত অন্তত ২২ জনের প্রাণহানি ও ১৫০ আহত হয়েছে। আহত অনেকেরই শরীরের উল্লেখযোগ্য অংশ পুড়ে গেছে। বলা হয়ে থাকে, শিশুর জন্য স্বীয় গৃহের বাইরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নিরাপত্তার দ্বিতীয় আশ্রয়। প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনা এটিই প্রথম নয়; পাঁচ বছরে ছয়টি বিমান দুর্ঘটনার শিকার হয়েছে। প্রশ্ন ওঠে, দুর্ঘটনার হার এত বেশি কেন? প্রশিক্ষণ বিমানের ক্ষেত্রে যেমন সার্বক্ষণিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হয়, সেগুলো হয়নি।
স্বস্তির বিষয়, বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার পরপরই সেনাবাহিনী, বিমানবাহিনী, পুলিশ, র্যাব ও ফায়ার সার্ভিস দুর্ঘটনাস্থলে উদ্ধারকাজ পরিচালনা করেছে। আহতদের দ্রুততম সময়ে হাসপাতালে নেয়ার ক্ষেত্রে প্রতিটি সংস্থা দায়িত্বশীলতার পরিচয় দেখিয়েছে। দলমত নির্বিশেষে দেশের আপামর জনসাধারণও উদ্বিগ্ন। দলমত নির্বিশেষ সাধারণ মানুষের রক্তদানের আন্তরিকতাও অভূতপূর্ব। হাসপাতালে দ্রুততম সময়ে পৌঁছানোর অবকাঠামোর অপর্যাপ্ততা পরিক্ষিত হয়েছে। শিশুরা দেশ ও জাতির ভবিষ্যৎ কর্ণধার। এ মর্মান্তিক দুর্ঘটনার পুনর্ঘটন রোধে কী পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে, সেটিও গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করতে হবে। রাজধানীর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর অবস্থান নিয়েও নতুন করে ভাবতে হবে। হাসপাতালে ভর্তি শিশুদের সর্বোচ্চ চিকিৎসা নিশ্চিত করতে হবে। প্রাণ হারানো শিশুর পরিবারগুলোকে ক্ষতিপূরণ দান এবং চিকিৎসার সব ব্যয় অবশ্যই রাষ্ট্রের বহন করতে হবে।

Discussion about this post