শেয়ার বিজ ডেস্ক : ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) দেশগুলোয় টানা চতুর্থবারের মতো জনসংখ্যা বেড়েছে। চলতি বছরের ১ জানুয়ারি পর্যন্ত জোটের দেশগুলোতে মোট জনসংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪৫ কোটি ৪০ লাখে। ফলে টানা চতুর্থ বছরের মতো এসব দেশে জনসংখ্যা বেড়েছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলোতে অভিবাসীদের আগমনকে জনসংখ্যা বৃদ্ধির গুরুত্বপূর্ণ কারণ হিসেবে ধরা হচ্ছে। খবর ইনফোমাইগ্রেন্টস।
পরিসংখান বলছে, গত ১ জানুয়ারি পর্যন্ত ইইউর দেশগুলোতে মোট জনসংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৪৫ কোটি ৪০ লাখ। এই সংখ্যা তার আগের বছরের তুলনায় ১০ লাখ ৭০ হাজার বেশি। অবশ্য শেগুলোতে গত কয়েক বছর ধরেই টানা জনসংখ্যার বৃদ্ধি লক্ষ্য করা গেছে। করোনা মহামারির কারণে ২০২১ সালে এসব দেশে জনসংখ্যা তার আগের বছরের তুলনায় হ্রাস পেয়েছিল।
জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণ হিসেবে করোনা মহামারির পরবর্তী সময়ে অভিবাসীরে আগমনকে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাবক হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। ইউরোস্ট্যাটের পরিসংখ্যানে বলা হয়েছে, ২০১২ সালের পর থেকে ইইউর জনসংখ্যার প্রাকৃতিক বৃদ্ধির (জন্ম-মৃত্যুর হিসাব) যেই নেতিবাচক ধারা ছিল, তার চেয়ে বেশি অভিবাসী এসব দেশে এসেছেন।
এদিকে গত ৬৪ বছরে জোটের দেশগুলোর জনসংখ্যা প্রায় ১০ কোটি বেড়েছে। পরিসংখ্যান বলছে, ১৯৬০ সালে এই শেগুলোতে মোট জনসংখ্যা ছিল ৩৫ কোটি ৪৫ লাখ। আর ২০২৪ সালের শেষ নাগা এই সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৪৫ কোটি ৪০ লাখে। সেই হিসাবে ৬৪ বছরে জোটের দেশগুলোতে জনসংখ্যা ৯ কোটি ৯০ লাখ বেড়েছে।
এই সময়ে সবচেয়ে বেশি জনসংখ্যার দেশ হয়ে উঠেছে জার্মানি। ইউরোপের শক্তিশালী অর্থনীতির এই দেশটিতে গত ১ জানুয়ারি পর্যন্ত মোট জনসংখ্যা দাঁড়িয়েছে আট কোটি ৩৬ লাখ। উল্লেখ্য, ইইউর মোট জনসংখ্যার ১৯ ভাগ জার্মানিতে বাস করেন।
পরিসংখ্যানে সবচেয়ে কম জনসংখ্যার দেশ হিসেবে ওঠে এসেছে দ্বীপ রাষ্ট্র মাল্টার নাম। ইউরোপের ক্ষুদ্র দেশটিতে ওই সময় পর্যন্ত মোট জনসংখ্যা দাঁড়িয়েছে ছয় লাখে।
এদিকে চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে বহিঃসীমান্ত দিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) দেশগুলোতে ঢুকেছেন ৭৫ হাজার ৯০০ জন অভিবাসনপ্রত্যাশী। তাদের মধ্যে শীর্ষে রয়েছেন বাংলাদেশিরা। ইউরোপীয় ইউনিয়নের সীমান্ত সুরক্ষা সংস্থা ফ্রন্টেক্স এ তথ্য জানিয়েছে।
ইতালির সরকারি পরিসংখ্যান বলছে, চলতি বছর ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে দেশটিতে ঢোকা অভিবাসনপ্রত্যাশীদের মধ্যে বাংলাদেশিরা শীর্ষে রয়েছেন। পূর্ব ভূমধ্যসাগরীয় এবং পশ্চিম আফ্রিকান রুট দিয়ে অভিবাসনপ্রত্যাশী আসার সংখ্যা তীব্রভাবে কমে যাওয়ায় ইউরোপীয় ইউনিয়নের অনিয়মিত সীমান্ত অতিক্রম গত বছরের প্রথম ছয় মাসের তুলনায় ২০ শতাংশ কমেছে বলে জানিয়েছে ফ্রন্টেক্স।
সংস্থাটি বলেছে, সার্বিকভাবে অভিবাসনপ্রত্যাশী আসার হার কমে আসলেও মধ্য ভূমধ্যসাগরীয় অভিবাসন রুট এখনও ব্যস্ত রয়েছে। তবে পশ্চিম বলকান, পূর্ব স্থল সীমান্ত এবং পশ্চিম আফ্রিকান অভিবাসন রুট দিয়ে আসা অভিবাসনপ্রত্যাশীর সংখ্যা তীব্রভাবে কমেছে।
ফ্রন্টেক্স বলেছে, প্রথম ছয় মাসে আসা অভিবাসীদের মধ্যে সবার শীর্ষে রয়েছেন বাংলাদেশিরা। এরপরই আছেন মিসর ও আফগানিস্তানের নাগরিকরা। পূর্ব ভূমধ্যসাগরীয় অভিবাসন রুট দিয়ে আসা অভিবাসনপ্রত্যাশীর সংখ্যা ২৫ ভাগ কমে ১৯ হাজার ৬০০ হয়েছে। তবে লিবিয়ার উপকূল থেকে গ্রিক দ্বীপ ক্রিট পর্যন্ত নতুন প তৈরি হওয়ায় সাম্প্রতিক মাসগুলোতে এই রুটে অভিবাসনপ্রত্যাশীর সংখ্যা বেড়েছে।
সেন্ট্রাল ভূমধ্যসাগরীয় রুটে ২৯ হাজার ৩০০ জন অভিবাসনপ্রত্যাশী এসেছেন বলে জানিয়েছে ফ্রন্টেক্স। এই সংখ্যা ২০২৪ সালের একই সময়ের তুলনায় ১২ শতাংশ বেশি।
ইতালির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তার শাখার তথ্য বলছে, চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ১০ জুলাই পর্যন্ত আসা দেশটিতে আসা অনিয়িমত অভিবাসীর সংখ্যা ৩১ হাজার ৯৪৮ জন। এই সংখ্যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় কিছুটা বেশি। কিন্তু ২০২৩ সালের তুলনায় প্রায় অর্ধেক কম।
চলতি বছর ১০ হাজার ৩১১ জন বাংলাদেশি পৌঁছেছেন ইতালিতে, যা মোট আগমনের ৩২ শতাংশ। বাংলােেশর পরই রয়েছে ইরিত্রিয়া। ৪ হাজার ৪৬১ জন ইরিত্রিয়ান ইটালিতে পৌঁছেছেন। তৃতীয় অবস্থানে থাকা মিসরের নাগরিকের সংখ্যা ৩ হাজার ৭২৩ জন।
এরপরই আছে পাকিস্তান, ইথিওপিয়া, সুদান, সিরিয়া, সোমালিয়া, গিনি, তিউনিশিয়া, আলজেরিয়া, ইরান, নাইজেরিয়া, মালি ও আইভরিকোস্টের নাম। গত ৭ জুলাই পর্যন্ত ইতালিতে পৌঁছানো সঙ্গীবিহীন অপ্রাপ্তবয়স্ক অভিবাসীর সংখ্যা ৫ হাজার ৫৭৫ জনে পৌঁছেছে। আর ২০২৪ সালে পুরো বছর মিলিয়ে পৌঁছেছিলেন ৮ হাজার ৭৫২ জন।

Discussion about this post