শেয়ার বিজ ডেস্ক : ইইউ প্রধান উরসুলা ভন ডার লেইন বুধবার ব্লকের আইনপ্রণেতাদের উদ্দেশে দেয়া এক ভাষণে ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে করা তার বাণিজ্য চুক্তিকে রক্ষার চেষ্টা করবেন বলে জানিয়েছেন। অনেকেই এই সমঝোতাকে ওয়াশিংটনের কাছে আত্মসমর্পণ হিসেবে দেখছেন ও ক্ষোভ প্রকাশ করছেন। খবর-এএফপি।
দ্বিতীয় মেয়াদের দ্বিতীয় বছরে প্রবেশ করে ভন ডার লেইন তার ‘স্টেট অব দ্য ইউনিয়ন’ ভাষণে প্রতিরক্ষা ও প্রতিযোগিতা, এই দুই অগ্রাধিকারকে ঘিরে সংসদকে তার কর্মসূচির পক্ষে ঐক্যবদ্ধ করার চেষ্টা করবেন।
তবে ট্রাম্পের সঙ্গে করা ওই চুক্তিতে আনন্দের তেমন কিছু খুঁজে না পাওয়া সংসদ থেকে তিনি শীতল অভ্যর্থনারই প্রত্যাশা করতে পারেন। যদিও ব্যাপকভাবে স্বীকার করা হচ্ছে যে, ইউরোপের নিরাপত্তা যুক্তরাষ্ট্রের ওপর নির্ভরশীল হওয়ায় শুল্কযুদ্ধে তাদের হাত ছিল বাঁধা।
পার্লামেন্টের মধ্যপন্থি ব্লক রিনিউয়ের নেতা ভ্যালেরি হায়ার বলেন, সবাই একমত যে এটি একটি খারাপ চুক্তি, যা ইউরোপের দুর্বলতা প্রতিফলিত করে। জুলাই চুক্তিতে বিমানসহ কিছু ক্ষেত্রে ছাড় দিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বেশির ভাগ ইইউ রপ্তানির ওপর ১৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। তবে ওয়াইন ও স্পিরিটের মতো গুরুত্বপূর্ণ অন্যান্য ক্ষেত্রে কোনো ছাড় দেয়া হয়নি। বিনিময়ে, ইউরোপ বলেছে যে, তারা মার্কিন জ্বালানি থেকে ব্যাপক ক্রয় করবে। মার্কিন শিল্প পণ্যের ওপর শুল্ক বাতিল করবে। এছাড়ও বিভিন্ন ধরনের সামুদ্রিক খাবার ও কৃষিপণ্যের জন্য অগ্রাধিকারমূলক প্রবেশাধিকার দেবে।
ইইউ বাম ঘরানার আইনপ্রণেতা মেরিনা মেসুর যিনি চুক্তিটিকে শিকারি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছে আত্মসমর্পণ বলে অভিহিত করে ভবিষ্যদ্বাণী করেন যে, ভন ডার লেইন তার চুক্তি আইন প্রণেতাদের কাছে বিক্রি করার চেষ্টা করবেন।
ইউরোপীয়বিষয়ক প্রকাশনা লে গ্র্যান্ড কন্টিনেন্টের জন্য ক্লাস্টার ১৭ দ্বারা পরিচালিত পাঁচ-জাতির জরিপ অনুসারে, অর্ধেকেরও বেশি ইউরোপীয়ান প্রায় ৫২ শতাংশ মানুষ এ চুক্তিটিকে অপমান হিসেবে দেখছেন।
অপমান: সংবেদনশীল বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করার জন্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে ভন ডার লেয়েনের ইউরোপীয় কমিশনের একজন কর্মকর্তা স্বীকার করেন যে, এটি একটি কঠিন সময়, ইউরোপ দুর্বল বলে মনে হচ্ছে।
চুক্তির কালি শুকিয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে, ট্রাম্প ইইউর প্রযুক্তিগত নিয়ন্ত্রণগুলোকে লক্ষ্য করে নতুন হুমকির সূচনা করেছেন। সম্প্রতি গুগলের বিরুদ্ধে বিশাল অ্যান্টিট্রাস্ট জরিমানা আরোপ করেছেন। আগামী সপ্তাহগুলোতে আইন প্রণেতারা ইইউ শুল্ক কমানোর একটি প্রস্তাবের ওপর ভোট দেবেন, যা ওয়াশিংটনের সঙ্গে সম্পূর্ণ চুক্তি বাস্তবায়নের মূল চাবিকাঠি।
এখন পর্যন্ত ভন ডার লেইনের প্রধান মিত্ররা বিভক্ত মধ্যপন্থিরা এখনও এই চুক্তি সমর্থন করার প্রতিশ্রুতি দেয়নি, অন্যদিকে সমাজতান্ত্রিক ব্লক বিপক্ষে ভোট দেয়ার হুমকি দিয়েছে।
মঙ্গলবার সমাজতান্ত্রিক ও ডেমোক্রেটদের নেতা ইরাটক্সে গার্সিয়া পেরেজ বলেন, চুক্তি না করার চেয়ে খারাপ চুক্তি থাকা ভালো, এমন যুক্তি দেয়া সম্পূর্ণ অগ্রহণযোগ্য।
ইপিপি নেতা ম্যানফ্রেড ওয়েবার বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে ১৫ শতাংশ রপ্তানি শুল্ক আমাদের খুশি করছে না। কিন্তু ট্রাম্পের মতো শুল্কপ্রেমী প্রেসিডেন্টের সঙ্গে এটিই সর্বোত্তম, যা আমরা পেতে পারি।
ভন ডার লেয়েনের নিজস্ব দল ইপিপি যদিও কোনো প্রলেপ না দিয়েই সমঝোতাকে সমর্থন দেবে। রাশিয়ার তেলের রাজস্বকে লক্ষ্য করে ইইউ’র ১৯তম নিষেধাজ্ঞা প্যাকেজেরও আভাস দিতে পারেন তিনি। তবে গাজা ইস্যুতে ইইউ’র ব্যর্থতা তাকে সংসদে কঠিন প্রশ্নের মুখে ফেলতে পারে।
ইসরাইল ও ফিলিস্তিনপন্থি দেশগুলোর বিভাজনের কারণে এ বিষয়ে ঐক্যমত্য গড়ে ওঠেনি। স্পেনের কমিশনার তেরেসা রিবেরা প্রকাশ্যে গাজার যুদ্ধকে ‘গণহত্যা’ আখ্যা দিয়ে ইইউ’র নিষ্ক্রিয়তাকে কঠোরভাবে সমালোচনা করেছেন।

Discussion about this post