নিজস্ব প্রতিবেদক : ঢাকা-৮ আসনের সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী ও ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদি রাজধানীর বিজয়নগরে সন্ত্রাসীদের গুলিতে গুরুতর আহত হয়েছেন। গতকাল শুক্রবার দুপুরে বিজয়নগরের বক্স কালভার্ট এলাকায় তাকে গুলি করা হয়। আশঙ্কাজনক অবস্থায় ওসমান হাদিকে প্রথমে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও পরে এভারকেয়ার হাসপাতালে নেওয়া হয়। এ ঘটনায় প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের গণমাধ্যম ও জনসংযোগ বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) মুহাম্মদ তালেবুর রহমান বলেন, বেলা ২টা ২৫ মিনিটের দিকে একটি মোটরসাইকেলে দুর্বৃত্তরা আসে। মোটরসাইকেল থেকে হাদিকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে। পুলিশ ঘটনাস্থলে তদন্ত করছে।
গুলিবিদ্ধ হওয়ার সময় ওসমান হাদির পেছনের রিকশায় ছিলেন মো. রাফি। তিনি ওসমান হাদির গুলিবিদ্ধ হওয়ার ঘটনার বর্ণনা দেন। মো. রাফি বলেন, ‘জুমার নামাজ শেষে আমরা হাইকোর্টের দিকে আসছিলাম। রিকশায় ছিলাম। বিজয়নগর আসতেই একটা মোটরসাইকেলে করে দুজন এসে হাদি ভাইয়ের ওপর গুলি ছুড়ে পালিয়ে যায়। আমি ভাইয়ের পেছনের রিকশায় ছিলাম।’
গতকাল সন্ধ্যায় ওসমান হাদির শারীরিক অবস্থা নিয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক বিগ্রেডিয়ার জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান জানান, ওসমান হাদির অবস্থা আশঙ্কাজনক। তাকে লাইফ সাপোর্টে নেওয়া হয়েছে। পরে তিনি জানান হাদির তার মাথার ভেতরে গুলি পাওয়া যায়নি। সার্জনরা জানিয়েছেন গুলি মাথা থেকে বের হয়ে গেছে। সরকারের উচ্চপর্যায়ের নির্দেশে তাকে এভারকেয়ার হাসপাতালে নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয় বলে তিনি জানান।
বিকালে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্য সচিব তাসনিম জারা হাসপাতালে হাদিকে দেখতে যান। ঢাকা-৮ আসনের বিএনপি মনোনীত প্রার্থী মির্জা আব্বাসও তাকে দেখতে যান।
এ ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি এক বিবৃতিতে বলেন, নির্বাচনী পরিবেশে এমন সহিংস হামলা একেবারে অগ্রহণযোগ্য এবং দেশের শান্তিপূর্ণ রাজনৈতিক অঙ্গনের জন্য এটি অত্যন্ত দুঃখজনক ঘটনা। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং এক বিবৃতিতে বিষয়টি জানিয়েছেন।
বিবৃতিতে বলা হয়, আহত ওসমান হাদির সর্বোচ্চ চিকিৎসা নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্টদের প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা। এছাড়া চিকিৎসা কার্যক্রম নিবিড়ভাবে তদারকি করার জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা প্রদান করেছেন।
একই সঙ্গে, প্রধান উপদেষ্টা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে দ্রুত সময়ের মধ্যে হামলায় জড়িতদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনার কঠোর নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি ঘটনাস্থল থেকে আলামত সংগ্রহ, প্রত্যক্ষদর্শীর তথ্য গ্রহণ, সিসিটিভি ফুটেজ পর্যালোচনা এবং হামলার পেছনে কোনো সংগঠিত পরিকল্পনা থাকলে তা উšে§াচনের জন্য তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ নিতে বলেছেন। প্রধান উপদেষ্টা বলেন, নির্বাচনকে বাধাগ্রস্ত করার উদ্দেশ্যে কোনো ধরনের সহিংসতা বরদাশত করা হবে না। জনগণের নিরাপত্তা এবং প্রার্থীদের অবাধ চলাচল নিশ্চিত করা আমাদের দায়িত্ব। দোষীরা যেই হোক, আইনের আওতায় আনা হবে। তিনি দেশের সব রাজনৈতিক পক্ষ, কর্মী-সমর্থক এবং নাগরিকদের প্রতি শান্তি ও সংযম বজায় রাখার আহ্বান জানান, যেন আসন্ন নির্বাচন শান্তিপূর্ণ, অংশগ্রহণমূলক ও নিরাপদ পরিবেশে অনুষ্ঠিত হতে পারে।
এদিকে ঢাকায় ইনকিলাব মঞ্চের নেতা ওসমান হাদির ওপর গুলিবর্ষণের নিন্দা জানিয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, দেশ এখন অত্যন্ত সংকটের ভেতর দিয়ে যাচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বে বিশ্বাসী প্রতিটি দল ও ব্যক্তিকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। লন্ডন থেকে ঢাকায় একটি অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে এ কথা বলেন তারেক রহমান। বিকালে ফার্মগেটে কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে ‘দেশ গড়ার পরিকল্পনা’ শীর্ষক ওই অনুষ্ঠান হয়।
প্রিন্ট করুন











Discussion about this post