শেয়ার বিজ ডেস্ক : ইরাকে একটি শপিংমলে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় কমপক্ষে ৬৯ জন নিহত হয়েছেন। হতাহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। গতকাল বৃহস্পতিবার এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম আল আরাবিয়া।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইরাকের একটি শপিংমলে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে অন্তত ৬৯ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন ওই অঞ্চলের গভর্নর। গতকাল বৃহস্পতিবার ফ্রান্সের বার্তাসংস্থা এএফপি এই খবর নিশ্চিত করেছে।
যদিও আগুনের ঘটনাটি ইরাকের ঠিক কোন স্থানে ঘটেছে, তা সরকারি সূত্রে এখনও পরিষ্কারভাবে জানানো হয়নি। তবে সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া কিছু পোস্ট ও ভিডিওতে দাবি করা হয়েছে, এই ভয়াবহ আগুন লেগেছে আল-কুট শহরের একটি সুপারমার্কেটে।
ভাইরাল ভিডিওগুলোতে দেখা গেছে, একটি বড় ভবনের বেশ কিছু অংশ দাউদাউ করে জ্বলছে এবং সেখান থেকে ঘন কালো ধোঁয়া আকাশে ছড়িয়ে পড়ছে। স্থানীয় কর্তৃপক্ষ এখনও তদন্তের কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। হতাহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
পৃথক প্রতিবেদনে সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা বলছে, পূর্ব ইরাকের কুট শহরের একটি হাইপার মার্কেটে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে কমপক্ষে ৫০ জন নিহত এবং আরও অনেকে আহত হয়েছেন বলে প্রদেশটির গভর্নরের বরাত দিয়ে জানিয়েছে রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা আইএনএ।
সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রকাশিত ভিডিওতে দেখা গেছে, রাতভর কুটের একটি পাঁচতলা ভবনে আগুন জ্বলছে এবং দমকল কর্মীরা আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করছেন।
আগুন লাগার কারণ তাৎক্ষণিকভাবে জানা যায়নি, তবে গভর্নর জানিয়েছেন, তদন্তের প্রাথমিক ফলাফল ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ঘোষণা করা হবে। গভর্নরের উদ্ধৃতি দিয়ে আইএনএ জানিয়েছে, ‘আমরা ভবন এবং মলের মালিকের বিরুদ্ধে মামলা করেছি।’
সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা গেছে, শহরের কেন্দ্রস্থলের কর্নিশ হাইপার মার্কেটের একাধিক তলায় আগুন ছড়িয়ে পড়ছে। ছাদে কিছু মানুষ আশ্রয় নিয়েছিলেন এবং ফায়ার সার্ভিস তাদের উদ্ধার করে।
ভোররাত ৪টা পর্যন্ত কুত শহরের হাসপাতালগুলোতে অ্যাম্বুলেন্সে করে আহতদের নিয়ে যাওয়া হয়। শহরটি রাজধানী বাগদাদের দক্ষিণ-পূর্বে প্রায় ১৬০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত।
একজন প্রত্যক্ষদর্শী চিকিৎসক নাসির আল-কুরাইশি বলেন, ‘আমার পরিবারের পাঁচ সদস্য মারা গেছেন। আমরা শুধু খাবার খেতে এসেছিলাম এবং ঘরের লোডশেডিং এড়াতে মলে এসেছিলাম। হঠাৎ দ্বিতীয় তলার একটি এসি বিস্ফোরিত হয়, তারপর আগুন লেগে যায়। আমরা পালাতে পারিনি।’
ইরাকে ভবন নির্মাণে নিরাপত্তামানের অভাব এবং দুর্নীতি অনেক পুরোনো সমস্যা। ২০২৩ সালে উত্তরাঞ্চলীয় হামদানিয়া এলাকায় একটি খ্রিস্টান বিবাহ অনুষ্ঠানে অগ্নিকাণ্ডে ১০০ জনের বেশি মানুষ মারা যান। ২০২১ সালে নাসিরিয়া শহরে একটি কভিড আইসোলেশন ওয়ার্ডে আগুনে মারা যান প্রায় ৯০ জন। এই দুর্ঘটনা আবারও ইরাকের নিরাপত্তা অব্যবস্থার করুণ চিত্র তুলে ধরেছে। নিরাপত্তা ব্যবস্থা পুনর্মূল্যায়নের আহ্বান জানিয়েছেন গভর্নর আল-মিয়াহী।
উল্লেখ্য, ইরাকে অগ্নিকাণ্ডজনিত দুর্ঘটনা আগেও ঘটেছে। তবে সেসময় নিরাপত্তা ব্যবস্থা ও ভবন নির্মাণের ত্রুটিকে দায়ী করা হয়েছে। এ ঘটনার পর ফের দেশটির বিপণি ও জনসমাগমস্থলে নিরাপত্তাব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন সামনে এসেছে।

Discussion about this post