শেয়ার বিজ ডেস্ক : ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা শহর দখলে নেয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর পরিকল্পনায় অনুমোদন করেছে দেশটির নিরাপত্তা মন্ত্রিসভা। ইসরায়েলের এই পদক্ষেপের নিন্দা জানিয়েছে জাতিসংঘ, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়াসহ বিভিন্ন দেশ। এমনকি ইসরায়েলি সেনাপ্রধানও এই পরিকল্পনার বিরোধিতা করেছেন।খবর: আল জাজিরা।
গতকাল শুক্রবার নেতানিয়াহুর কার্যালয় থেকে দেয়া বিবৃতিতে বলা হয়েছে, নেতানিয়াহুর ‘হামাসকে পরাজিত করার প্রস্তাব’ নিরাপত্তা মন্ত্রিসভায় অনুমোদিত হয়েছে। এছাড়া যুদ্ধক্ষেত্রের বাইরে বেসামরিক মানুষের জন্য মানবিক সহায়তা প্রদানেরও সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, হামাসের সঙ্গে যুদ্ধ বন্ধ করার বিনিময়ে ইসরায়েল পাঁচটি প্রধান শর্ত দাবি করবে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে হামাসকে নিরস্ত্রীকরণ, তাদের হাতে আটক বাকি ৫০ জন জিম্মিকে ফিরিয়ে আনা (যাদের মধ্যে ২০ জন জীবিত বলে ধারণা করা হচ্ছে), গাজা উপত্যকাকে নিরস্ত্রীকরণ, সেখানে ইসরায়েলের নিরাপত্তা নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা এবং হামাস বা ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ নয়, এমন একটি বিকল্প বেসামরিক সরকারের হাতে গাজার শাসনভার তুলে দেয়া।
জাতিসংঘের মানবাধিকার-বিষয়ক হাইকমিশনার প্রধান ফলকার তুর্ক বলেছেন, অধিকৃত গাজা উপত্যকার সম্পূর্ণ দখলের জন্য ইসরায়েলি সরকারের পরিকল্পনা অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে।
ইসরায়েলি নিরাপত্তা মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্তকে ‘মারাত্মক ভুল’ বলে অভিহিত করেছেন যুক্তরাজ্যের ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী স্যার কিয়ার স্টারমার। তিনি বলেন, ‘এই পদক্ষেপ এই সংঘাতের অবসান ঘটাতে বা জিম্মিদের মুক্তি নিশ্চিত করতে কোনো সাহায্য করবে না। এটি কেবল আরও রক্তপাত ডেকে আনবে।
অন্যদিকে অস্ট্রেলিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী পেনি ওং ইসরায়েলকে ‘এই পথে না যাওয়ার’ আহ্বান জানিয়েছেন।
শুক্রবার ইসরায়েলি সরকারের ঘোষণার পরপরই জারি করা এক বিবৃতিতে ওং বলেন, এই পদক্ষেপ গাজার মানবিক বিপর্যয়কে আরও ভয়াবহ করে তুলবে। একটি স্থায়ী শান্তি নিশ্চিত করার একমাত্র পথ হলো দুই-রাষ্ট্রীয় সমাধান—একটি ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র ও ইসরায়েল রাষ্ট্র, যারা আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত সীমান্তের মধ্যে শান্তি ও নিরাপত্তায় পাশাপাশি বসবাস করবে।
এদিকে নেতানিয়াহুর পরিকল্পনা নিয়ে ইসরায়েলের রাজনৈতিক ও সামরিক নেতৃত্বের মধ্যেও উদ্বেগ দেখা দিয়েছে।
ইসরায়েলের বিরোধীদলীয় নেতা ইয়ার ল্যাপিড বলেছেন, ‘গাজা দখলের নিরাপত্তা মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্ত আরও অনেক বিপর্যয়ের দিকে নিয়ে যাবে। এতে অবশিষ্ট জিম্মিদের মৃত্যু হবে এবং অনেক ইসরায়েলি সৈন্য নিহত হবে।’ তিনি অভিযোগ করেছেন, নেতানিয়াহু অতি-ডানপন্থি নিরাপত্তামন্ত্রী ইতামার বেন-গভির এবং বেজালেল স্মোট্রিচের চাপের কাছে নতিস্বীকার করেছেন। কারণ ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রীর জোট অতি-জাতীয়তাবাদী মন্ত্রীদের সমর্থনের ওপর নির্ভর করে, যারা হামাসের সঙ্গে কোনো চুক্তি হলে সরকার ছেড়ে দেয়ার হুমকি দিয়েছেন। অন্যদিকে ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর চিফ অব স্টাফ লেফটেন্যান্ট জেনারেল ইয়াল জমিরও মন্ত্রিসভার এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেছেন।
ইসরায়েলি গণমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুসারে, নেতানিয়াহুর সঙ্গে এক বৈঠকে গাজার সম্পূর্ণ দখল সেনাদের জন্য ‘ফাঁদে পা দেওয়ার সমান’ বলে মন্তব্য করেছেন জেনারেল ইয়াল জামির।
ইসরায়েলি সেনাপ্রধান নেতানিয়াহুর সরকারকে সতর্ক করে আরও বলেছেন, ‘এই আক্রমণ হামাসের কাছে এখনও জিম্মি ২০ জন, যাদের জীবিত বলে মনে করা হচ্ছে, তাদের জীবনকে আরও বিপন্ন করে তুলবে।’