শেয়ার বিজ ডেস্ক : ইসরায়েলকে যুক্তরাষ্ট্রের ‘শেকলে বাঁধা কুকুর’ বলে আখ্যায়িত করেছেন ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি। সেইসঙ্গে নতুন করে যেকোনো ধরনের সামরিক হামলার জবাব দেয়ার জন্য ইরান প্রস্তুত আছে বলেও হুঁশিয়ার দিয়েছেন তিনি।
গত বুধবার ইরানের রাষ্ট্রায়ত্ত সংবাদমাধ্যমে প্রচারিত এক বক্তৃতায় খামেনি বলেন, ‘আমাদের দেশ যুক্তরাষ্ট্র ও এর শেকলে বাঁধা কুকুর ইহুদিবাদী ইসরায়েলের মুখোমুখি হওয়ার জন্য প্রস্তুত। আর এটা অত্যন্ত প্রশংসনীয়।’
গত মাসে ইরানের পারমাণবিক স্থাপনা ও সামরিক অবকাঠামো লক্ষ্য করে হামলা চালায় ইসরায়েল। ইসরায়েলকে সমর্থন জানিয়ে একই সময়ে ইরানের তিনটি পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালায় যুক্তরাষ্ট্র। যুক্তরাষ্ট্রের এই হামলার জবাবে কাতারে অবস্থিত মার্কিন ঘাঁটিতে হামলা চালায় ইরান।
কাতারে অবস্থিত যুক্তরাষ্ট্রের আল উদেইদ ঘাঁটিতে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলার কথা উল্লেখ করে খামেনি বলেন, ইরান যে ঘাঁটিতে হামলা চালিয়েছিল, সেটি ছিল যুক্তরাষ্ট্রের অত্যন্ত সংবেদনশীল আঞ্চলিক ঘাঁটি। যুক্তরাষ্ট্র ও অন্যদের আরও বড় আঘাত দেওয়া সম্ভব।
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে পারমাণবিক আলোচনায় ফেরার জন্য আন্তর্জাতিক চাপের মুখে রয়েছে ইরান। যুক্তরাষ্ট্রে ও ইউরোপের তিনটি প্রধান দেশ ইরানের সঙ্গে পারমাণবিক চুক্তিতে পৌঁছানোর জন্য আগস্ট মাসের শেষ পর্যন্ত সময়সীমা নির্ধারণ করেছে।
ফ্রান্সের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, ওই সময়ের মধ্যে ইরানের সঙ্গে পারমাণবিক চুক্তির বিষয়ে যদি অগ্রগতি না হয়, তাহলে জাতিসংঘের ‘স্ন্যাপব্যাক’ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে আবারও আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করা হবে।
খামেনি বলেন, ‘আমরা কূটনৈতিক বা সামরিক ক্ষেত্রে সবসময় পূর্ণাঙ্গ প্রস্তুতি নিয়েই প্রবেশ করি; দুর্বলতা থেকে নয়।’ তিনি কূটনীতিকদের ‘নির্দেশনা’ অনুসরণ করে জোরদারভাবে চালিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। তবে এই বিষয়ে বিস্তারিত কিছু বলেননি তিনি। গত বুধবার এক বিবৃতিতে ইরানের পার্লামেন্ট বলেছে, পূর্বশর্তগুলো পূরণ না হওয়া পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে পারমাণবিক আলোচনা পুনরায় শুরু করা উচিত নয়।
এদিকে ইরানের পার্লামেন্ট বলেছে, পূর্বশর্ত পূরণ না হওয়া পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ফের পরমাণু আলোচনা শুরু করা তেহরানের উচিত হবে না। গত বুধবার শিয়া সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশটির রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমে তাদের এ বিবৃতি এসেছে বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
‘ইরানকে ধোঁকা দিতে ও জায়নবাদী শাসকদের (ইসরায়েল) আকস্মিক হামলাকে আড়াল করতে যুক্তরাষ্ট্র যখন আলোচনাকে কৌশল হিসেবে ব্যবহার করে, তখন আগের মতো আলোচনা হওয়া উচিত নয়। সুনির্দিষ্ট পূর্বশর্ত ঠিক করতে হবে এবং সেসব পুরোপুরি পূরণ হওয়ার আগ পর্যন্ত কোনো নতুন আলোচনা হতে পারে না,’ বিবৃতিতে বলেছে ইরানের পার্লামেন্ট।
বিবৃতিতে পূর্বশর্ত নিয়ে বিস্তারিত বলা না হলেও দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগচি কয়েকদিন আগেই বলেছিলেন, ইরানের ওপর আর হামলা হবে নাÑ এমন নিশ্চয়তা না দিলে তারা আলোচনায় রাজি হবেন না।
তেহরান পারমাণবিক অস্ত্র বানানোর দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে গেছে- এমন দাবি করে গত মাসে ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্র। তেহরান শুরু থেকেই বারবার বলে আসছে, তাদের পারমাণবিক কর্মসূচির উদ্দেশ্যই হচ্ছে বেসামরিক উন্নয়ন, অস্ত্র বানানো নয়।
ইসরায়েলের সঙ্গে ইরানের গত মাসের ১২ দিনের আকাশ যুদ্ধের আগে ওমানের মধ্যস্থতায় তেহরান ও ওয়াশিংটনের মধ্যে পাঁচ দফা পরোক্ষ আলোচনা হয়েছিল। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র ইরানের ঘরোয়া ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কর্মসূচি বন্ধের দাবি তুললে ওই আলোচনা কার্যত থমকে যায়।
তেহরানের অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করে দিনকয়েক আগেই আরাগচি বলেছেন, তারা এমন কোনো পরমাণু চুক্তিতে রাজি হবেন না যেখানে তাদের ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরার সুযোগ থাকবে না। পরমাণু কর্মসূচির বাইরে কোনো কিছু নিয়ে আলোচনা হলে সেখানেও তারা ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচির মতো কিছু নিয়ে কথা বলবেন না।
এদিকে মঙ্গলবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, ইরানের সঙ্গে আলোচনায় বসতে তাড়া নেই তার কারণ তেহরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলো ‘পুরোপুরি ধ্বংস’ করে দেয়া হয়েছে।
তবে তিন ইউরোপীয় দেশের সঙ্গে সমন্বয় রেখে ওয়াশিংটনও একটি চুক্তির জন্য অগাস্ট পর্যন্ত ইরানকে সময়সীমা বেঁধে দেয়ার পক্ষে।
ফ্রান্সের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জঁ নোয়েল বারোও গত মঙ্গলবার বলেছেন, আগস্ট শেষ হওয়ার আগে চুক্তির পথে কোনো অগ্রগতি দেখা না গেলে প্যারিস, লন্ডন ও বার্লিন জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞা পুনরায় কার্যকরের পদ্ধতি চালু করে দেবেন। তেমনটা হলে তেহরানের ওপর আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা ফের বলবৎ হবে।