এস.এম. রুবেল, কক্সবাজার : বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপের প্রভাবে উত্তাল সমুদ্রের ঢেউয়ে কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতের বিভিন্ন অংশে দেখা দিয়েছে ভয়াবহ ভাঙন। ঢেউয়ের তীব্র আঘাতে ধসে পড়ছে জিও ব্যাগের বাঁধ, বিলীন হচ্ছে ঝাউবাগান এবং ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে সৈকতসংলগ্ন পর্যটন অবকাঠামো। জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হচ্ছে উপকূলীয় নিচু এলাকা ও শহরের বিভিন্ন স্থান।
সরেজমিন গতকাল শনিবার সকালে দেখা গেছে, সমুদ্রের উত্তাল ঢেউয়ের আঘাতে সৈকতের শৈবাল, লাবণী ও কবিতা চত্বর পয়েন্টের বালিয়াড়ি ভাঙতে শুরু করেছে। পাশাপাশি মেরিন ড্রাইভের পাশের ঝাউবাগানের বড় একটি অংশ ধসে পড়েছে। এর প্রভাব পড়েছে টেকনাফের দিকে প্রসারিত তিন কিলোমিটার মেরিন ড্রাইভ সড়কেও। বাহারছড়া ঘাট থেকে জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত অন্তত ১৫টির বেশি স্থানে সড়কে ফাটল ও ভাঙন দেখা দিয়েছে।
স্থানীয়দের আশঙ্কাÑমেরিন ড্রাইভের পশ্চিম পাশে জিও ব্যাগ বসিয়ে গড়া বাঁধের একাধিক অংশ ধসে যাওয়ায় জোয়ারের পানি জমির ভেতরে ঢুকে পড়ছে। সড়ক পুরোপুরি ভেঙে গেলে আশপাশের কয়েকটি গ্রাম সরাসরি প্লাবিত হওয়ার ঝুঁকিতে পড়বে।
স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা জানান, এলাকাবাসীর কাছ থেকে ভাঙনের খবর পাওয়ার পর তাৎক্ষণিকভাবে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা প্রশাসনকে জানানো হয়েছে। ভাঙন রোধে দ্রুত কাজ শুরু হবে বলে জানা গেছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, মেরিন ড্রাইভে ভাঙনের পেছনে একটি বড় কারণ জায়গা ভরাটে সমুদ্র থেকে বালু তোলা। তারা জানান, ট্যুরিজম পার্ক গড়ে ওঠায় জমির দাম বাড়ায় প্রভাবশালীরা অবৈধভাবে বালু তুলে জমি ভরাট করছেন। এতে সড়কের ভিত্তি দুর্বল হয়ে পড়ছে। তারা জানান, মেরিন ড্রাইভের পূর্বপাশে হোটেল-মোটেল গড়ার তোড়জোড় চলছে। অনেক প্রভাবশালী অবৈধভাবে সৈকতের বালু তুলছেন। এসব কারণে এখন একটু বড় ঢেউ এলেই সড়ক ভাঙছে।
সড়ক ও জনপথ বিভাগের কক্সবাজার কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী রোকন উদ্দিন খালেদ চৌধুরী বলেন, ‘মেরিন ড্রাইভ সড়কটি সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন ব্যাটালিয়নের (ইসিবি) তত্ত্বাবধানে। টেকনাফ অংশে ভাঙনের খবর পেয়েছি। ইসিবি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছে।’
আবহাওয়া অধিদপ্তরের কক্সবাজার কার্যালয়ের সহকারী আবহাওয়াবিদ আবদুল হান্নান জানান, উত্তর বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপের কারণে সমুদ্র উত্তাল রয়েছে এবং ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় ৪৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। ফলে শহরের কয়েকটি জায়গায় পাহাড়ধসের ঘটনাও ঘটেছে, যদিও হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।
এদিকে সমুদ্র উত্তাল থাকায় সৈকতে ভিড় করা পর্যটকদেরও সমুদ্রে নামতে দেয়া হচ্ছে না। তবে অনেকেই লাইফগার্ড ও ট্যুরিস্ট পুলিশের নির্দেশনা অমান্য করে পানিতে নামায় প্রশাসনকে বেগ পেতে হচ্ছে।