Print Date & Time : 26 August 2025 Tuesday 11:17 pm

উন্নত সবজি বীজের উৎপাদন বাড়ানোর উদ্যোগ নিন

একসময় দেশের বাজারে শুধু শীত মৌসুমেই শিম, টমেটো, লাউ ও মিষ্টিকুমড়ার মতো সবজিগুলো পাওয়া যেত। এখন কিন্তু সারাবছরই লাউ, শসা, বেগুন, মিষ্টিকুমড়া, লালশাক, পালংশাক ও পুঁইশাক এসব শাকসবজি মিলছে। শাকসবজি কেবল বারো মাস উৎপাদনই হচ্ছে না, ফলনের পরিমাণও বেড়েছে। এমনকি রপ্তানিও হচ্ছে আমাদের সবজি। গত এক দশকে শাকসবজি উৎপাদন বেড়েছে প্রায় ১ কোটি টন, যা ভোক্তাদের সুষম খাদ্য গ্রহণ ও খাদ্য নিরাপত্তায় শক্ত ভিত্তি গড়ে তুলছে। এ ক্ষেত্রে উন্নত জাতের বীজ মুখ্য ভূমিকা রেখেছে বলে অভিমত কৃষিবিশেষজ্ঞদের।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, এক দশক আগে ২০১৫-১৬ অর্থবছরে দেশে মোট সবজির উৎপাদন ছিল ১ কোটি ৫২ লাখ টন। তা পাঁচ বছরের ব্যবধানে ২০২০-২১ অর্থবছরে বেড়ে দাঁড়ায় ১ কোটি ৯৭ লাখ টন। পরের ৫ বছরে সবজি উৎপাদন আরও ৫৩ লাখ টন বাড়ে। বদৌলতে সর্বশেষ ২০২৪-২৫ অর্থবছরে দেশে সবজি উৎপাদন ২ কোটি ৫০ লাখ বা আড়াই লাখ টনে উন্নীত হয়। অর্থাৎ গত এক দশকে শাকসবজি উৎপাদন বেড়েছে প্রায় ১ কোটি টন।

কৃষির মূল উপকরণ হচ্ছে বীজ। বীজই ফসল উৎপাদনে মুখ্য ভূমিকা পালন করে। সাধারণত আমাদের চাষিরা নিজ ফসলের অপেক্ষাকৃত ভালো অংশ পরবর্তী ফসলের বীজ হিসেবে ব্যবহার করেন। কিন্তু একই বীজ থেকে বারবার চাষ করলে ফসলের ফলন অনেক কমে যায়।

দেশের বীজশিল্পের বহুল প্রচলিত সেøাগান হচ্ছে, ‘ভালো বীজ ভালো ফসল।’ ভালো বীজ মানে উন্নত মানের বীজ। ভালো ফলনের জন্য মানসম্পন্ন বীজ ব্যবহার করা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। বীজ ও খাদ্যশস্যের ১০টি মৌলিক পার্থক্য আছে। বীজ জীবিত, কিন্তু খাদ্যশস্য জীবিত অথবা মৃত উভয়ই হতে পারে। বীজের মধ্যে সক্রিয় জীবনীশক্তি থাকা প্রয়োজন। বীজ থেকে সুস্থ ও সবল চারার জš§ হবে। খাদ্যশস্য থেকে দুর্বল চারা জš§ানোর আশঙ্কাই বেশি, চারা নাও জš§াতে পারে।

দেশের ‘বীজ বিধিমালা, ১৯৯৮’ মোতাবেক বীজের চারটি শ্রেণিবিভাগ করা হয়েছে। আমাদের দেশে মূলত বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন (বিএডিসি) তাদের নির্ধারিত খামারে কঠোর মান নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে ভিত্তি বীজ উৎপাদন করে। তবে কয়েক বছর ধরে কিছু বেসরকারি বীজ কোম্পানি এবং সংস্থাকে সরকারি বিধিবিধান পালনসাপেক্ষে ভিত্তি বীজ উৎপাদনের অনুমতি দেয়া হয়েছে। বিএডিসি কৃষক পর্যায়ে  বিপণনের জন্য যে বিপুল পরিমাণ বীজ উৎপাদন করে, তা এই শ্রেণির। বেসরকারি খাতের কোম্পানিগুলো আজকাল মানঘোষিত বীজ উৎপাদন করে, কিংবা আমদানি করে বিপণন করে আসছে। মূলত আমাদের কৃষকরা ভালো বীজের জন্য বেসরকারি খাতের ওপরই নির্ভর করেন। সংকট নিরসনে বীজ আমদানি স্বাভাবিক করতে বাস্তবোচিত উদ্যোগ নিতে হবে।