Print Date & Time : 18 September 2025 Thursday 5:12 am

ঋণ নিয়মিতকরণের নিয়ম যথারীতি পরিপালিত হোক

আবারও সুবিধা পাচ্ছেন ঋণখেলাপিরা। এবার দুই শতাংশ জমাতেই খেলাপি ঋণ নিয়মিত করতে পারবেন। নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলোক দুই শতাংশ অর্থ জমা দিয়ে খেলাপি ঋণ নিয়মিত করার সুযোগ দিয়েছে। এই ঋণের মেয়াদ হবে সর্বোচ্চ ১০ বছর। ঋণ নিয়মিত হলে শুরুতে দুই বছর ঋণ পরিশোধে বিরতি সুবিধা পাওয়া যাবে। এ সুবিধা পেতে চাইলে চলতি বছরের ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকে আবেদন করতে হবে।

পুনঃতফসিল করার সুবিধা দিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগ মঙ্গলবার একটি প্রজ্ঞাপন জারি করেছে। এতে বলা হয়েছে, ক্ষতিগ্রস্ত প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে ঋণ পুনঃতফসিলের আবেদন পাওয়ার পর ছয় মাসের মধ্যে ব্যাংককে তা নিষ্পত্তি করতে হবে।

ঋণ নিয়মিত করার সুবিধা দেয়ার মূল উদ্দেশ্য হিসেবে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বলেছে, গত বছর বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান সৃষ্টিকারী অনেক ঋণগ্রহীতা প্রতিষ্ঠান নিয়ন্ত্রণবহির্ভূত কারণে স্বাভাবিক ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরিচালনায় প্রতিবন্ধকতার শিকার হয়। এতে তারা খেলাপি হয়ে পড়ে। এমন প্রেক্ষাপটে ক্ষতিগ্রস্ত প্রতিষ্ঠানের পুনর্গঠন, ব্যাংক খাতে কাঙ্ক্ষিত গতি ফিরিয়ে আনার জন্য ব্যবস্থা নেয়া হয়। এর আগে ঋণ পুনঃতফসিল ও পুনর্গঠন প্রভৃতি সুবিধা যেসব প্রতিষ্ঠান পায়নি, তাদের অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে এই নীতি সহায়তা দেয়া হবে।

ব্যবসায়ীদের অতিরিক্ত সুবিধা এমনকি কখনও প্রশ্রয় দেয়ায় সাধারণ মানুষের মনে দুঃখবোধ আছে। কারণ তারা বড় আর্থিক কেলেঙ্কারি ও পাচারে লিপ্ত। যে দেশের জিডিপি ও কর্মসংস্থানে ভূমিকা রাখেন, তাদের এমন আচরণ প্রত্যাশিত নয়।

নতুন নির্দেশনার আশাব্যঞ্জক দিক হলো জালজালিয়াতি বা অন্য কোনো প্রতারণা বা অনিয়মের মাধ্যমে নেয়া ঋণ কিংবা ব্যাংক কর্তৃক চূড়ান্তভাবে ঘোষিত ইচ্ছাকৃত খেলাপি গ্রাহকেরা এই ঋণ সুবিধা পাবেন না।

দেশের ভালো ব্যবসায়ীরা যেন ব্যাংকের আনুকূল্য পান, তা নিশ্চিত করতে হবে। তবে ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপিদের কোনোভাবেই যেন প্রশ্রয় না দেয়া হয়।

খেলাপি ঋণ আমাদের ব্যাংক খাতের বড় সমস্যা। স্বচ্ছতা ও জবাবদিহির সংস্কৃতি চালু হলেও খেলাপি ঋণ রাতারাতি কমানো সম্ভব নয়। ঋণ নিয়ে ব্যবসা করতে গেলে লোকসানে পড়ে গ্রাহক খেলাপি হতে পারেন। এ ঝুঁকি নিয়েই ঋণ বিতরণ করে। গ্রাহকের দেয়া তথ্যে ব্যাংক সন্তুষ্ট হলেই ঋণ দেয়া হয়। আমাদের দেশে ঋণ নিয়ে ব্যবসা না করে আত্মসাতের দৃষ্টান্ত কম নয়। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার নির্দেশ বা রাজনৈতিক চাপে, কিংবা গ্রাহকের কাছ থেকে সুবিধা নিয়ে যাচাই-বাছাই না করে দেয়া ঋণ খেলাপি হয় বেশি। উচ্চ আদালতের স্থগিতাদেশ নিয়ে নির্বাচনে অংশ নেন ঋণখেলাপিদের অনেকে। নির্বাচনে প্রার্থী না হলে অনেকে ঋণখেলাপি কি না, জানা যেত না। কৌশলী গ্রাহকরা নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার প্রাক্কালে ঋণ পুনঃতফসিল করে রাখেন।

ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপিদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিয়ে সুফল পেয়েছে চীন-শ্রীলঙ্কাসহ কয়েকটি দেশ। আমাদের নিয়ন্ত্রক সংস্থা নৈতিকতা ও সুশাসন প্রতিষ্ঠা করলে আমাদের অর্থনীতি ও দেশ উপকৃত হবে।