নিজস্ব প্রতিবেদক : প্রথমে একীভূত হতে রাজি হয় ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক। এরপর একীভূতকরণ উদ্যোগে সম্মতি জানাল ইউনিয়ন ব্যাংক। গতকাল বুধবার বাংলাদেশ ব্যাংকের সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত বৈঠকে এ সম্মতি জানায় ব্যাংকটি। সভায় বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর ভার্চুয়ালি যুক্ত ছিলেন। এ সময় চার ডেপুটি গভর্নর, রেজল্যুশন বিভাগের কর্মকর্তারা, ইউনিয়ন ব্যাংকের চেয়ারম্যান এম ফরিদ উদ্দীন ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) হুমায়ন কবির উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠক শেষে চেয়ারম্যান এম ফরিদ উদ্দীন সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমানতকারীরা টাকা তুলতে আসছেন, কিন্তু আমরা দিতে পারছি না। যত দ্রুত এসব ব্যাংক নিয়ে সিদ্ধান্ত হবে, ততই সবার জন্য ভালো। এক্ষেত্রে ব্যাংকগুলো একীভূত, পুনর্গঠন বা অন্য কোনও পদক্ষেপ নেয়া হতে পারে।’
তিনি আরও জানান, ইউনিয়ন ব্যাংক থেকে প্রায় ২৮ হাজার কোটি টাকা এস আলম গ্রুপ নিয়ে গেছে। যাদের নামে ঋণ নেয়া হয়েছে, তাদের খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে আমানতকারীদের অর্থ ফেরত দিতে ব্যাংকটি মারাত্মক সমস্যায় পড়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের একীভূতকরণ কার্যক্রমের অংশ হিসেবে গতকাল বিকালে এক্সিম ব্যাংকের সঙ্গে বৈঠক হওয়ার কথা ছিল। আজ বৃহস্পতিবার সকালে গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক এবং বিকালে সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের সঙ্গে বৈঠক নির্ধারিত আছে।
আগের দিন একীভূতকরণে সমর্থন জানিয়েছিল ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক। একীভূতকরণের মাধ্যমে পাঁচ ব্যাংক মিলে গঠিত ব্রিজ ব্যাংকের পক্ষে নিজেদের সমর্থন জানিয়েছে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক। মঙ্গলবার বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুরের সঙ্গে বৈঠকে এ তথ্য জানিয়েছেন ব্যাংকটির চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবদুল মান্নান।
বৈঠক শেষে আবদুল মান্নান বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে তার সঙ্গে আমাদের দ্বিমত নেই। আমানতকারীদের সুরক্ষার বিষয়টি বাংলাদেশ ব্যাংক দেখবে। বৈঠকে ডেপুটি গভর্নর ড. কবির আহমেদসহ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
মোহাম্মদ আবদুল মান্নান জানান, তিনটি পৃথক অডিট নিশ্চিত করেছে যে, এস আলম গ্রুপ বেনামি ঋণের মাধ্যমে ৩৮ হাজার কোটি টাকা নিয়েছে। নিজের নামে ঋণ নেয়ার সুযোগ না থাকায় তারা বেনামি পথে অর্থ নেন। এই ঋণ আদায় না হওয়ায় ব্যাংকটি মারাত্মক সংকটে পড়েছে।
সূত্র জানায়, ধারাবাহিকভাবে পাঁচটি ব্যাংকের সঙ্গে পূর্বনির্ধারিত বৈঠকের মঙ্গলবার ছিল তৃতীয় দিন। এর আগে রোববার এক্সিম ও সোমবার সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের সঙ্গে বৈঠক হওয়ার কথা থাকলেও গভর্নরের অসুস্থতার কারণে তা হয়নি। গত বৃহস্পতিবার গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকের সঙ্গে বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। নতুন করে এক্সিম ও সোশ্যাল ইসলামীর সঙ্গে বৈঠকের বিষয়ে এখনও কিছু জানায়নি কেন্দ ীয় ব্যাংক।
জানা গেছে, গত এক-দেড় বছর ধরে গোটা বিশেক ব্যাংক কমবেশি তারল্য সংকটে ছিল। গতবছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মধ্যে দিয়ে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটলে ব্যাংক খাত সংস্কারের উদ্যোগ নেয় কেন্দ ীয় ব্যাংক। এর পর থেকে এই পাঁচটি ব্যাংক নিয়ে একীভূতকরণের আলোচনা চলছে। তবে একীভূতকরণে রাজি ছিল না এক্সিম।
বাংলাদেশ ব্যাংকের করা অ্যাসেট কোয়ালিটি রিভিউর (একিউআর) তথ্য মতে, এক্সিম ব্যাংকের ৫২ হাজার ৭৬ কোটি টাকার বিতরণকৃত ঋণের মধ্যে ২৫ হাজার ১০১ কোটি টাকাই খেলাপি, যা মোট ঋণের ৪৮ দশমিক ২০ শতাংশ। প্রভিশন ঘাটতি রয়েছে ১৫ হাজার ১১৭ কোটি টাকা।

Discussion about this post