নুরুন্নাহার চৌধুরী কলি : বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের শেষ দিকে আর্থিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়ায় অন্তর্বর্তী সরকারের ব্যাংক খাত সংস্কারের উদ্যোগের অংশ হিসেবে একীভূতকরণের আলোচনায় উঠে আছে বেসরকারি এক্সিম ব্যাংক। তবে আর্থিকভাবে ঘুরে দাঁড়াতে ব্যাংকটির নিরন্তর চেষ্টার ফলে এখন স্বাধীনভাবে চলতে চেষ্টা করছে এক্সিম।
এর অংশ হিসেবে সম্প্র্রতি ঋণ আদায় কার্যক্রম জোরদার করে এক্সিম ব্যাংক। ব্যাংকটির অভিনব ঋণ আদায় কার্যক্রম ব্যাংকপাড়ায় ইতোমধ্যে বেশ সাড়া ফেলেছে।
এক্সিম ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, এই কার্যক্রমের মাধ্যমে খেলাপি ঋণ পুনরুদ্ধারে বেশ ভালো অগ্রগতি অর্জন করেছে। ব্যাংকটির কর্মকর্তারা মাঠপর্যায়ে গিয়ে ব্যক্তিগতভাবে ঋণগ্রহীতাদের কাছ থেকে ঋণের টাকা আদায় করছেন।
এক্সিম ব্যাংকের ইনভেস্টমেন্ট মনিটরিং অ্যান্ড রিকভারি ডিভিশনের প্রধান মো. আসাদ মালেকের নেতৃত্বে রিকভারি টিম অভিনব পন্থায় ঋণ আদায় কার্যক্রম পরিচালনা করছে।
এ ব্যাপারে এক্সিম ব্যাংকের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শীর্ষ কর্মকর্তা শেয়ার বিজকে বলেন, ‘সামাজিক প্রচারণার মাধ্যমে ঋণের টাকা আদায়ের চেষ্টা করছি। মানুষের বাড়ি বাড়ি গিয়ে ঋণের টাকা তুলছি। এমনকি ব্যানার নিয়ে ঋণ গ্রাহকের বন্ধকী বাড়ি বা ফ্ল্যাটের সামনে দাঁড়িয়ে ঋণের টাকা ফেরত দিতে উদ্বুদ্ধ করছি।’
তিনি আরও জানান, খেলাপি গ্রাহকদের মানসিকভাবে চাপ প্রয়োগ করতেই এ ধরনের কৌশল নেয়া হয়েছে, তবে তা সম্পূর্ণ আইনি ও সামাজিকভাবে শোভন পদ্ধতিতে পরিচালিত হচ্ছে।
ব্যাংকপাড়ায় এক্সিম ব্যাংকের এ উদ্যোগ ইতোমধ্যে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। সংশ্লিষ্টদের মতে, এ ধরনের অভিনব ঋণ আদায় কার্যক্রম অন্য ব্যাংকগুলোর জন্যও অনুসরণীয় হতে পারে। বিশেষ করে যখন ব্যাংক খাত খেলাপি ঋণের ভারে জর্জরিত, তখন এমন কর্মসূচি ব্যাংকের টেকসই প্রবৃদ্ধি ও গ্রাহকের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে সহায়ক ভূমিকা রাখতে পারে।
এদিকে ব্যাংকটি সামগ্রিক কার্যক্রমেও গতি এনেছে। অভ্যন্তরীণ ব্যবস্থাপনা, ঋণ বিতরণ, ঝুঁকি নিয়ন্ত্রণ ও গ্রাহক সেবায় আধুনিকায়নের কাজ এগিয়ে চলছে। ব্যাংকটির পক্ষ থেকে জানানো হয়, খেলাপি আদায়ে সফলতা তাদের আমানত ও সেবার মানেও ইতিবাচক প্রভাব ফেলছে।
ব্যাংক খাত বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এক্সিম ব্যাংকের এ উদ্যোগ অন্য ব্যাংকগুলোর জন্যও উদাহরণ হতে পারে। বিশেষ করে যেসব ব্যাংকঋণ বিতরণে ঢিলেঢালা নীতি গ্রহণ করেছে এবং এখন খেলাপির ভারে কাবু, তাদের জন্য এমন কাঠামোগত ঋণ আদায় পরিকল্পনা কার্যকর মডেল হতে পারে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের করা অ্যাসেট কোয়ালিটি রিভিউর (একিউআর) তথ্য মতে, এক্সিম ব্যাংকের ৫২ হাজার ৭৬ কোটি টাকার বিতরণকৃত ঋণের মধ্যে ২৫ হাজার ১০১ কোটি টাকাই খেলাপি, যা মোট ঋণের ৪৮ দশমিক ২০ শতাংশ। প্রভিশন ঘাটতি রয়েছে ১৫ হাজার ১১৭ কোটি টাকা।
ব্যাংকটির সাবেক চেয়ারম্যান মো. নজরুল ইসলাম মজুমদারের অপকর্মের কারণে এক্সিম ব্যাংককে নিয়ে অনেক সমালোচনা হয়েছে। গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর এক্সিম ব্যাংকের চেয়ারম্যান পদ থেকে নজরুল ইসলাম মজুমদারকে সরিয়ে ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদ পুনর্গঠন করে বাংলাদেশ ব্যাংক। ২০০৭ সাল থেকে ব্যাংকটিতে চেয়ারম্যানের দায়িত্বে ছিলেন মজুমদার। প্রায় দেড় দশক বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকসের (বিএবি) সভাপতির দায়িত্বে ছিলেন তিনি। ৫ আগস্টের পর বিএবির সভাপতির দায়িত্ব থেকেও তাকে সরিয়ে দেয়া হয়। বর্তমানে তিনি কারাগারে আছেন।
পুনর্গঠিত পর্ষদ দায়িত্ব নেয়ার পর (১ সেপ্টেম্বর ২০২৪ থেকে ৩১ মে ২০২৫ পর্যন্ত) ৮ হাজার ১৯৫ কোটি টাকা খেলাপি ঋণ (শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংকে বিনিয়োগ হিসেবে পরিচিত) আদায় করতে সক্ষম হয়েছে এক্সিম ব্যাংক।