সাইফুল আলম, চট্টগ্রাম : বেসরকারি কনটেইনার ডিপো ব্যবস্থাপনা-বিষয়ক প্রতিষ্ঠান এছাক ব্রাদার্স ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড বড় অঙ্কের ঋণ খেলাপি হয়ে পড়েছে। শরিয়াহভিত্তিক এক্সিম ব্যাংকের আগ্রাবাদ শাখায় প্রতিষ্ঠানটির ৫৪০ কোটি টাকার ঋণ খেলাপি হয়ে রয়েছে। ঋণের বিপরীতে বন্ধকিতে সম্পত্তি রয়েছে ১৫ একর। এ দিকে ঋণ আদায়ে অনিশ্চয়তা তৈরি
হয়েছে। এ নিয়ে চরম উদ্বেগে আছেন ব্যাংক কর্মকর্তারা।
জানা গেছে, আমদানি-রপ্তানি কনটেইনার ব্যবস্থাপনা করে থাকে এছাক ব্রাদার্স ইন্ডাস্ট্রিজ। এ লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠানটি একাধিক ব্যাংক থেকে ঋণ সুবিধা নেয়। কিন্তু নিয়মিত ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হওয়ায় এক্সিম ব্যাংকে খেলাপি হয়ে পড়ে এছাক ব্রাদার্স।
জানা যায়, দেশে বেসরকারি খাতে ২১টি প্রতিষ্ঠান আমদানি-রপ্তানি পণ্যবাহী কনটেইনার বেসরকারি কনটেইনার ডিপোগুলোয় সংরক্ষণ ও ব্যবস্থাপনা সেবা দেয়। এর মধ্যে একটি এছাক ব্রাদার্স ইন্ডাস্ট্রিজ।
চট্টগ্রাম বন্দরে এছাক ডিপো ১৯৮৮ সালে বেসরকারিভাবে পণ্য খালাস কার্যক্রম শুরু করেছিল। এরপর ২০০২ সালে এছাক ব্রাদার্স ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড (কনটেইনার ইয়ার্ড) বেসরকারি কনটেইনার ডিপো হিসাবে যাত্রা শুরু করে। এরপর দ্রুত চট্টগ্রামের একটি শীর্ষস্থানীয় ইনল্যান্ড কনটেইনার ডিপো (আইসিডি) হয়ে ওঠে, যা পরিচালনার তিন বছরের মধ্যে সর্বাধিক সংখ্যক রপ্তানি এবং খালি কনটেইনার পরিচালনা করে। আর ২০০৭ সালে আমদানি-বোঝাই কনটেইনার পরিচালনার জন্য প্রাথমিকভাবে অনুমতি দেওয়া হলে বেসরকারি ডিপোগুলো চট্টগ্রাম বন্দরের পূর্ণাঙ্গ সহযোগী হয়ে ওঠে। বর্তমানে এছাক ব্রাদার্স ইন্ডাস্ট্রিজ বিপুল পরিমাণ আমদানি, রপ্তানি ও খালি কন্টেইনার পরিচালনা করছে। পাশাপাশি অন্য খাতে ব্যবসা পরিচালনা করছে। এসব ব্যবসা পরিচালনা করতে গিয়ে বিপুল পরিমাণে ব্যাংকঋণ নেয়। এরমধ্যে এক্সিম ব্যাংক লিমিটেড অন্যতম। গত এক বছর ধরে এক্সিম ব্যাংকের পাওনা ঋণ পরিশোধ করতে পারছে না। ব্যাংকটির আগ্রাবাদ শাখায় ৫৪০ কোটি টাকা খেলাপি। এ খেলাপি ঋণ আদায়ে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ বারবার তাগাদ দিলেও ঋণ পরিশোধ করছে না। এ খেলাপি ঋণের বিপরীতে বন্ধকিতে সম্পত্তি আছে চট্টগ্রাম মহানগরে মাধ্যম হালিশহরে ১৩ একর ৭২ শতক এবং পটিয়া উপজেলার কর্ণফুলী থানার চর পাথরঘাটা এলাকায় ১৪৯ শতক জমি। এসব জমির বাজারমূল্য ৩০০ কোটি টাকারও কম। আর খেলাপি পাওনা আদায়ে এসব জমি আগামী ২৪ আগস্ট আগ্রাবাদ নিলামে বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। তবে ঋণের চেয়ে বন্ধকি থাকা সম্পত্তির মূল্য তুলনামূলকভাবে অনেক কম হওয়ায় পাওনা আদায় নিয়ে রীতিমতো উদ্বেগে আছে সংশ্লিষ্ট ব্যাংক কর্মকর্তারা।
এ বিষয়ে এক্সিম ব্যাংক পিএলসি’র আগ্রাবাদ শাখার ব্যবস্থাপক এনায়েত করিম শেয়ার বিজকে বলেন, দেশের বেসরকারি খাতে আমদানি-রপ্তানি ও খালি কনটেইনার ব্যবস্থাপনাকারী প্রতিষ্ঠান এছাক ব্রাদার্স ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড আমাদের খেলাপি গ্রাহক। প্রতিষ্ঠানটির কাছে ৫৪০ কোটি ৭২ লাখ টাকা ঋণ খেলাপি হয়ে পড়েছে। এ খেলাপি পাওনা আদায়ে একাধিক বার তাগাদা দেওয়া হলেও ঋণ পরিশোধ করেনি। এমনকি পর্যাপ্ত টাকা না থাকায় একাধিক চেক নগদায়ন হয়নি। ফলে তাদের বিরুদ্ধে হস্তান্তরযোগ্য দলিল আইনে একাধিক মামলা চলমান আছে। এখন খেলাপি পাওনা আদায়ে বন্ধকিতে থাকা সম্পত্তিও নিলামে তোলা হচ্ছে। তাদের খেলাপি ঋণ পরিশোধে আগ্রহ তেমন দেখা যাচ্ছে না। এমনকি ঋণ পুনঃতফসিলের আবেদনও করেনি। আর এটা প্রজেক্টের লোন হওয়ায় ঋণ রিকভারি করা যাবে।
অপরদিকে এছাক ব্রাদার্স ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের মহাব্যবস্থাপক ও বেসরকারি কনটেইনার ডিপো মালিকদের সংগঠন বিকডার মহাসচিব রুহুল আমিন সিকদারের ব্যবহƒত মুঠোফোন নাম্বারে একাধিক বার যোগাযোগ করা হলে তিনি তাতে সাড়া দেননি।
উল্লেখ্য, গত ২০২৪ সালে চট্টগ্রাম বন্দরে সহযোগী বেসরকারি কনটেইনার ডিপোগুলো রপ্তানিবাহী কনটেইনার হ্যান্ডেলিং করেছিল সাত লাখ ৫০ হাজার ৫৫৯ টিইইউএস। এ সময়ের আমদানিবাহী কনটেইনার দুই লাখ ৬৮ হাজার ৪৯৯ টিইইউএস এবং খালি কনটেইনার ছয় লাখ ২৪ ৩০২ টিইইউএস। এর মধ্যে এছাক ব্রাদার্স রপ্তানি কনটেইনার হ্যান্ডেলিং করেছিল ৫৬ হাজার ৪৫ টিইইউএস, আমদানি কনটেইনার ১১ হাজার ৯৯১ এবং খালি কনটেইনার ৪৩ হাজার ১৭৩ টিইইউএস।
এদিকে খেলাপি ঋণ বেড়ে যাওয়ায় এক্সিম ব্যাংক বর্তমানে কঠিন সময়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। গত বছরের আগস্ট রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর এক্সিম ব্যাংকের পর্ষদ পুনর্গঠন করা হয়। পুনর্গঠিত পর্ষদ ব্যাংকের খেলাপি ঋণ আদায়ে তৎপরতা বাড়ানোর ফলে দ্রুত আর্থিক সূচকগুলোর উন্নতি হতে থাকে। তবে এর মধ্যেই আবার ব্যাংকটি একীভূতকরণের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে বলে জানা গেছে।

Discussion about this post