শেয়ার বিজ ডেস্ক : ৩৬ জুলাই। বর্ষপঞ্জির পাতায় দিনটি ৫ আগস্ট। এদিন সারা দেশ থেকে ছাত্র-জনতাকে ঢাকায় এসে সরকারের পদত্যাগের দাবিতে ‘মার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচি ছিল বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের।
আগের দিন আন্দোলনে সর্বোচ্চ মৃত্যুর ঘটনা ঘটায় পরিস্থিতি ছিল থমথমে। আন্দোলনকারীরা গণভবন (তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বাসভবন) ঘেরাওয়ের চেষ্টা করে। পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে পদত্যাগ করে দেশ ছাড়েন শেখ হাসিনা।
দুপুর ১২টার পর সেনাপ্রধান জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেওয়ার একটি ঘোষণা টেলিভিশন চ্যানেলগুলোর স্ক্রলে ভেসে উঠলে শেখ হাসিনার পদত্যাগের বিষয়টি আঁচ করে সাধারণ মানুষ রাস্তায় নেমে পড়ে। উল্লাসের জনপদে পরিণত হয় রাজধানী। ওই দিন সোমবার বিকালে জনতার ঢল নেমে আসে সড়কে সড়কে; জাতীয় পতাকা নিয়ে চলতে থাকে একের পর এক মিছিল। গণভবন, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ও সংসদ ভবনেও ঢুকে পড়ে জনতা, যা মনে করিয়ে দেয় দুই বছর আগে শ্রীলঙ্কার ঘটনাকে।
ওই দিন অনলাইন পত্রিকায় প্রকাশিত একটি সংবাদে বলা হয়, ‘২০০৯ সাল থেকে টানা ১৫ বছর শেখ হাসিনার শাসনকাল প্রহসনের নির্বাচন, মানবাধিকার লঙ্ঘন, মত প্রকাশের অধিকার সংকুচিত করা ও গুম-খুনের নানা অভিযোগে ছিল প্রশ্নবিদ্ধ।
গত দেড় দশকে বিরোধী দলকে কঠোর হাতে দমন আওয়ামী লীগ সভাপতি করতে পারলেও এবার সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সামনে তাকে নতি স্বীকার করে দেশ ছাড়তে হলো।
৫ আগস্ট সোমবার দিনটা পুলিশের কঠোরতার মধ্য দিয়ে শুরু হলেও সময় গড়াতেই পাল্টে যায় দৃশ্যপট। সাবেক সেনাপ্রধান ইকবাল করিম ভূইয়াসহ অবসরপ্রাপ্ত একদল সেনা কর্মকর্তা আন্দোলন সমর্থন করে রাজপথে নামার কিছুক্ষণের মধ্যেই খবর আসে জনগণের উদ্দেশে ভাষণ দেবেন সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ জামান।
এর মধ্যে শাহবাগে জড়ো হতে থাকে শিক্ষার্থীসহ জনতা; কারফিউ উপেক্ষা করে ঢাকার বিভিন্ন স্থান থেকে শাহবাগের দিকে এগোতে থাকে হাজার হাজার মানুষের মিছিল।
বেলা ১টায় শাহবাগে ছাত্র-জনতা এক হতে থাকে। তখন পুলিশকে পিছিয়ে যেতে দেখা যায়। সেনাসদস্যরা অবশ্য বিভিন্ন মোড়ে অবস্থান নিয়ে ছিলেন।
এরই মধ্যে বেলা ২টায় শাহবাগে উপস্থিত হন আন্দোলনের সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম। আধা ঘণ্টা পর তিনি ঘোষণা দেন গণভবনের দিকে যাত্রার। তারপর শুরু হয় মিছিল।
প্রত্যেক মোড়ে মোড়ে মিছিলে মানুষ বাড়তে থাকে। সংসদ ভবনের ভেতরে রিকশা করে মানুষজনকে ঘুরে বেড়াতে দেখা যায়। এক রিকশাচালক বলেন, ‘কোনোদিন এই রাস্তা দিয়ে যেতে পারিনি। আজকে ঢুকে পড়েছি। আজকে স্বাধীন।’
অনেককে দেখা যায়, সংসদ ভবনের সামনে ব্লুটুথ সাউন্ড বক্স দিয়ে গান ছাড়তে। আন্দোলন দিয়ে জনপ্রিয় হওয়া র্যাপার হান্নানের ‘আওয়াজ উঠা’ গানটি ব্যাপকভাবে বাজছিল।
ভুভুজেলা বাশি, মুখে বিজয় লেখা, হাতে জাতীয় পতাকা নিয়ে মানুষের উল্লাস চলে রাত পর্যন্ত।

Discussion about this post