নিজস্ব প্রতিবেদক : ন্যাশনাল ইকুইপমেন্ট আইডেন্টিটি রেজিস্টার (এনইআইআর) বাস্তবায়নকে কেন্দ্র করে দেশের মোবাইল বাজারে নতুন সিন্ডিকেট গঠনের চেষ্টা চলছে বলে অভিযোগ তুলেছে মোবাইল বিজনেস কমিউনিটি বাংলাদেশ। সংগঠনের দাবি, দেশের মোট ব্যবসায়ীর ৬০-৭০ শতাংশকে কার্যত প্রক্রিয়ার বাইরে রেখে মাত্র ৩০ শতাংশ প্রভাবশালী ব্যবসায়ীর স্বার্থরক্ষায় সিন্ডিকেট তৈরি করতে চাইছে একটি চক্র।
ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে গতকাল বুধবার এসব অভিযোগ তুলে ধরেন সংগঠনটির নেতারা। এসময় সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনের সিনিয়র সহসভাপতি শামীম মোল্লা, কেন্দ্রীয় নেতা ও চট্টগ্রাম বিজনেস ফোরামের সভাপতি আরিফুর রহমান, শাহ আলম বোখারীসহ বিভিন্ন মার্কেটের ব্যবসায়ীরা উপস্থিত ছিলেন।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, এনইআইআর পুরোপুরি বাতিল চান না তারা। এক বছর নিয়ে সিস্টেমটি পুনর্গঠন এবং বাস্তবায়নের আগে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে গোলটেবিল বৈঠক আয়োজনের দাবি জানিয়েছেন।
সংগঠনের নেতারা অভিযোগ করেন, পরিকল্পিতভাবে প্রেস কনফারেন্স ভণ্ডুল করতে বাংলাদেশ মোবাইল বিজনেস কমিউনিটির সাধারণ সম্পাদক পিয়াসকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তারা বলেন, ‘মঙ্গলবার রাত ৩টায় শুধু এ সংবাদ সম্মেলন ঠেকানোর উদ্দেশ্যে তাকে আটক করা হয়। তাদের দাবি, কিছু ব্র্যান্ড ও বাজারনিয়ন্ত্রক স্বার্থগোষ্ঠী এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত।’
এক ব্যবসায়ী নেতা বলেন, বাজার নিয়ন্ত্রণে সক্রিয় সেই সিন্ডিকেটই আমাদের সাধারণ সম্পাদককে টার্গেট করেছে। মোবাইল ব্যবসায়ীরা এনইআইআর পুরোপুরি বাতিল চান না, বরং এক বছরের সময় নিয়ে সিস্টেমটি পুনর্গঠন এবং বাস্তবায়নের আগে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে গোলটেবিল বৈঠকের আয়োজন করার দাবি জানান।
আরিফুর রহমান বলেন, ‘ব্যাগেজ রুলস অনুযায়ী বৈধভাবে আনা মোবাইল সেট বাজারে বিক্রির সুযোগ সীমিত হলে লাখো ব্যবসায়ী ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। এনইআইআর সিস্টেম চালুর ফলে সম্ভাব্য ৫৭ শতাংশ পর্যন্ত কর বৃদ্ধি মোবাইলের দাম কয়েকগুণ বাড়িয়ে দেবে। এতে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন দিনমজুর, রিকশাচালক, দর্জি, নিম্ন-মধ্যবিত্ত পরিবার ও শিক্ষার্থীরা।’
তিনি বলেন, ‘গ্রে মার্কেটে কম দামে ভালো কনফিগারেশনের ফোন পাওয়ায় সাধারণ মানুষ দীর্ঘদিন উপকৃত হয়েছে। ব্যবসায়ীদের দাবি, এআইনির্ভর ভবিষ্যতে মোবাইল ফোনের দাম বেড়ে গেলে প্রযুক্তিগত অগ্রগতি বাধাগ্রস্ত হবে। মাত্র ১৮ জনের লাইসেন্সের মাধ্যমে পুরো বাজার নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।’
সংগঠনের অভিযোগ, দেশের মোবাইল বাজার বর্তমানে মাত্র ১৮ জন লাইসেন্সধারীর হাতে কেন্দ্রীভূত। তাদের দাবি, ২০ কোটি মানুষের দেশে মোবাইল ব্যবসার লাইসেন্স এত অল্পসংখ্যক ব্যক্তির হাতে থাকা অযৌক্তিক। বাজারের ভারসাম্য ও প্রতিযোগিতা নিশ্চিত করতে লাইসেন্স সংখ্যা অন্তত পাঁচ হাজারে উন্নীত করতে হবে।
বিটিআরসি চেয়ারম্যানের মন্তব্যে ক্ষোভ প্রকাশ করে শামীম মোল্লা বলেন, ‘চেয়ারম্যানের ‘চোর’ মন্তব্যে ব্যবসায়ীরা অপমানিত বোধ করেছেন। তাদের প্রশ্নÑব্যাগেজ রুলস অনুযায়ী সরকার অনুমোদিত পণ্য বিক্রি করলে সেটি কীভাবে অবৈধ হতে পারে?’
তিনি বলেন, ব্যবসায়ীরা ট্যাক্স দিতে প্রস্তুত, তবে এজন্য প্রয়োজন যৌক্তিক নীতিমালা। বাস্তবায়নের আগে গণশুনানির মাধ্যমে জনগণের মতামত নেয়ার জন্য তিনি প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ সংশ্লিষ্ট উপদেষ্টাদের প্রতি আহ্বান জানান।
এসময় হুঁশিয়ারি দিয়ে ব্যবসায়ী নেতারা বলেন, ‘সিন্ডিকেটের প্রভাবে এনইআইআর বাস্তবায়নের এ সিদ্ধান্ত সরাসরি কোটি মোবাইল ব্যবহারকারীর ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। তাদের দাবি, জনগণ ক্ষুব্ধ হলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হয়ে পড়বে। নেতারা সতর্ক করে বলেন, জনগণকে উত্তেজিত করার মতো পদক্ষেপ নেয়া উচিত নয়, প্রয়োজন হলে গণআন্দোলনের ডাক দেয়া হবে।’
প্রিন্ট করুন






Discussion about this post