নিজস্ব প্রতিবেদক : জাতীয় ভ্যাট দিবস আজ। এ উপলক্ষে ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত ভ্যাট সপ্তাহ পালন করবে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। এছাড়া আজ থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত দেশব্যাপী বিশেষ নিবন্ধন ক্যাম্পেইন পরিচালনা করবে সংস্থাটি। এই ক্যাম্পেইন থেকে নতুন এক লাখ বিজনেস আইডেন্টিফিকেশন নম্বর (বিন) নিবন্ধনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। ভ্যাট দিবস ও ভ্যাট সপ্তাহ উপলক্ষ্যে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানানো হয়েছে। সভায় সভাপতিত্ব করেন এনবিআর চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান।
নিবন্ধনকে গুরুত্ব দিয়ে এ বছরের ভ্যাট দিবসের প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে ‘সময়মতো নিবন্ধন নিব, সঠিকভাবে ভ্যাট দিব।’ এ প্রতিপাদ্যকে গুরুত্ব দিয়ে আগামী ১০ থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত দেশব্যাপী বিশেষ নিবন্ধন ক্যাম্পেইন পরিচালিত করা হবে। বর্তমানে দেশের নিবন্ধিত প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ৬ লাখ ৪৪ হাজার। ক্যাম্পেইনের মাধ্যমে এই সংখ্যা আরও এক লাখ বাড়ানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
সভায় এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, গত অর্থবছরে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের মোট আদায়ের ৩৮ শতাংশই ভ্যাট থেকে আদায় হয়েছে। আর চলতি অর্থবছরের প্রথম মাসে গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ২২ শতাংশ বেশি ভ্যাট আদায় বেড়েছে।
তিনি বলেন, ভ্যাট আদায় ব্যবস্থাপনা জোরদার করার মাধ্যমে ভ্যাট আদায় বাড়িয়ে দেশের অর্থনীতি মজবুত ও শক্তিশালী করা সম্ভব। করদাতাদের স্বেচ্ছায় কর প্রদান নিশ্চিত করা ও কর ফাঁকি কমানোই এনবিআরের লক্ষ্য। এ লক্ষ্য বাস্তবায়নে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের প্রচেষ্টার পাশাপাশি দেশের সর্বস্তরের ভোক্তা, ব্যবসায়ী, শিল্প মালিক ও প্রচার প্রচারণার মাধ্যমে যুগ উপযোগী সহযোগিতা প্রয়োজন।
মো. আব্দুর রহমান খান বলেন, আগামী বছর এমন একটি নতুন মেকানিজম চালু করা হবে, যার ফলে ভ্যাট নিবন্ধন ছাড়া কোনো প্রতিষ্ঠানই ব্যবসা করতে পারবে না। আগামী এক থেকে দুই বছরের মধ্যে ৩০ থেকে ৪০ লাখ প্রতিষ্ঠানকে ভ্যাট নিবন্ধনের আওতায় আনার লক্ষ্য নিয়ে কাজ চলছে। বর্তমানে দেশে নিবন্ধিত ভ্যাট পেয়ার রয়েছে মাত্র ৬ লাখ ৪৪ হাজার, যা মোট ব্যবসার সঙ্গে কোনোভাবেই সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। ভ্যাট নেট এখনো খুবই ছোট এবং প্রচুর ব্যবসা প্রতিষ্ঠান নিবন্ধন ছাড়াই কার্যক্রম চালাচ্ছে। চলতি মাসেই এক লাখ নতুন প্রতিষ্ঠানকে ভ্যাট নিবন্ধনের আওতায় আনার পরিকল্পনা রয়েছে।
আবদুর রহমান বলেন, চলতি মাসের মধ্যে এক লাখ নতুন নিবন্ধিত প্রতিষ্ঠান বাড়বে। সবচেয়ে বড় সমস্যা যেটা, সেটা হচ্ছে আমাদের ভ্যাট পেমেন্ট যারা করে, যাদের হাত দিয়ে ভ্যাট পেমেন্ট হয়, বিশেষ করে ব্যবসায়ীগণ তাদের যে ভ্যাট নেট, এই ভ্যাট নেটটা যথেষ্ট ছোট। এনবিআর চেয়ারম্যান আরও বলেন, যে জাতি দেশের জন্য যুদ্ধ করে, সে জাতি দেশের স্বার্থে ট্যাক্স ফাঁকি দিতে পারে না। রাষ্ট্রের স্বার্থ সবার ওপরে। তাই আমাদের দেশের স্বার্থেই ভ্যাট দিতে হবে।
আমদানি করা মোবাইল ফোনে কর কমানো হবে কি না-এমন প্রশ্নের জবাবে এনবিআর চেয়ারম্যান আবদুর রহমান বলেন, রাষ্ট্রের স্বার্থ সবার ওপরে। সবাই একসঙ্গে মিলে যদি চিন্তা করি যে এই কাজটি রাষ্ট্রের স্বার্থে প্রয়োজন। তাহলে সবাইকে নিয়ে আলোচনা করে যেটা যৌক্তিক, সেটা করার জন্য প্রস্তুত আছি। অবশ্যই এটা রাষ্ট্রের সিদ্ধান্ত। এনবিআরের এটা নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতাও নেই। কর অব্যাহতি পলিসি নেওয়া হয়েছে; এর ফলে এনবিআরের হাতে এখন আর কর অব্যাহতি দেওয়ার ক্ষমতাও নেই, যোগ করেন তিনি।
এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, ‘এখন এটা সরকার জনস্বার্থে যদি প্রয়োজন মনে করে তাও এটা দিতে পারবে অল্প সময়ের জন্য পরবর্তী সংসদ বসা পর্যন্ত। পরবর্তী সংসদ বসে সিদ্ধান্ত নেবে কী করবে। আমরা যদি মনে করি, দেশের বৃহত্তর স্বার্থে এটা প্রয়োজন এবং আমাদের রাষ্ট্রের নীতিনির্ধারকরা যদি এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে বলেন আমরা পজিটিভ।
অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের এই সচিব আরও বলেন, করদাতারা কর দিলে তা শতভাগ সরকারের কোষাগারে জমা হয়। এখন কর আদায় ব্যবস্থা অনলাইনে হওয়ায় করদাতারা ঝামেলামুক্তভাবেই কর দিতে পারছেন। গত অর্থবছরে ১৭ লাখ ই-রিটার্ন জমা পড়েছে। চলতি অর্থবছরে সেটি ৪০ লাখে উন্নীত হবে বলে আমরা আশাবাদী। আজকের দিন (গতকাল) পর্যন্ত ২২ লাখ ই-রিটার্ন জমা পড়েছে।
চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ৫৫ হাজার কোটি টাকা বাড়ানোর বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা যদি আমাদের আয় বাড়াতে না পারি, তাহলে রাষ্ট্র ঝুঁকিতে পড়বে। তবে কোনো অবস্থাতেই করদাতাদের প্রতি জুলুম করা হবে না। যারা ট্যাক্স ফাঁকি দিচ্ছে, আমরা তাদের কাছ থেকে ট্যাক্স বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছি।
সংবাদ সম্মেলনে এনবিআর সদস্য (মূসক বাস্তবায়ন ও আইটি) এবং আহ্বায়ক মো. আজিজুর রহমান ও ভ্যাটসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
প্রিন্ট করুন









Discussion about this post