শেয়ার বিজ ডেস্ক : লন্ডনের পুঁজিবাজারে ইতিহাস সৃষ্টি করেছে ব্লু-চিপ সূচক এফটিএসই ১০০। গত মঙ্গলবার লেনদেনের শুরুতে সূচকটি ৯,০১৬.৯৮ পয়েন্টে পৌঁছে ২০২৫ সালে ১০ শতাংশ এর বেশি লাভের মাইলফলক ছুঁয়েছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, ডোনাল্ড ট্রাম্পের অর্থনৈতিক নীতির কারণে অনেক বিনিয়োগকারী মার্কিন শেয়ার থেকে সরে এসে যুক্তরাজ্যের বাজারে ঝুঁকছেন, যা এই উত্থানের মূল কারণ। খবর- বিবিসি।
বাণিজ্য যুদ্ধের প্রভাবেই বাড়তি সুবিধা পাচ্ছে যুক্তরাজ্য
ট্রাম্পের বাণিজ্য যুদ্ধ যখন বৈশ্বিক শেয়ারবাজারে অস্থিরতা তৈরি করছে, তখন যুক্তরাজ্য বিশেষ সুবিধা পাচ্ছে। দেশটি ইতোমধ্যেই যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ১০ শতাংশ শুল্কে বাণিজ্য চুক্তি করেছে, যেখানে কিছু শিল্প খাতে ছাড় রয়েছে। এজে বেল ইনভেস্টমেন্টের বিশ্লেষক ড্যান কোয়াটসওয়ার্থের মতে, এটি যুক্তরাজ্যের জন্য একটি স্পষ্ট সুবিধা তৈরি করেছে।
যদিও শুরুতে রেকর্ড ভেঙেছিল এফটিএসই ১০০, তবে দিনের শেষে সূচকটি কিছুটা নেমে আসে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে মুদ্রাস্ফীতি বেড়ে যাওয়ায় সুদের হার কাটার আশা ক্ষীণ হয়ে পড়ে এবং সূচকটি প্রায় ৬০ পয়েন্ট কমে ৮,৯৩৮ এ গিয়ে থামে।
অনেকে একে ‘জুরাসিক পার্ক সূচক’ বলে সমালোচনা করলেও (কারণ এতে বড় শিল্প কোম্পানি বেশি এবং দ্রুত বর্ধনশীল টেক কোম্পানি কম), এই বৈশিষ্ট্যটাই অনিশ্চিত সময়ে নিরাপত্তা দিচ্ছে বিনিয়োগকারীদের। কোয়াটসওয়ার্থ বলেন, ‘যুক্তরাজ্যের বাজার অনিশ্চিত সময়ে এক কাপ চা আর বিস্কুটের মতো নির্ভরযোগ্য ও শান্ত।’
সোনার দামের ঐতিহাসিক উত্থান ও রুপার ১৪ বছরের সর্বোচ্চ দামে পৌঁছানোয় মূল্যবান ধাতু উৎপাদনকারী ফ্রেসনিলো এফটিএসই ১০০-তে সবচেয়ে বড় উত্থান দেখিয়েছে, শেয়ার বেড়েছে ১৪০ শতাংশ এরও বেশি। প্রতিরক্ষা খাতেও প্রবল গতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে ব্যাংককের শেয়ার বেড়েছে ১১৫ শতাংশ, বিএই সিস্টেমস ৬৫ শতাংশ, আর রোলস-রয়েস ৭৫ শতাংশ। আরবিসি ব্রিউইন ডলফিনের জন মুরের মতে, ব্যাংকিং ও প্রতিরক্ষা খাতে শক্তিশালী আয়ের পাশাপাশি যুক্তরাজ্যের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতাও বড় ভূমিকা রেখেছে।
যদিও কর বাড়ানোর সম্ভাবনা রয়েছে, তবুও ইউরোপের অন্যান্য দেশের তুলনায় ব্রিটেনের রাজনৈতিক পরিস্থিতি তুলনামূলক স্থিতিশীল।
২০২৫ সালে লয়েডস ব্যাংকিং গ্রুপের শেয়ার বেড়েছে ৩৮ শতাংশ, খুচরা বিক্রেতা নেক্সট ২৮ শতাংশ এবং স্ট জেমস’স প্লেস ৪০ শতাংশ। এতে বোঝা যাচ্ছে, শুধুমাত্র বৈশ্বিক নয়, দেশীয় অর্থনীতির দিক থেকেও বাজারে ইতিবাচক গতি আছে।
মার্টিন কারির বিনিয়োগ বিশ্লেষক বেন রাসন বলেন, ‘আন্তর্জাতিক বিনিয়োগকারীরা লক্ষ্য করছেন যুক্তরাজ্যের বাজার আকর্ষণীয় দামে রয়েছে। পাউন্ড স্থিতিশীল, শেয়ারের দাম বৈশ্বিক মানদণ্ডের চেয়ে সস্তা এবং প্রাইভেট ইকুইটি কোম্পানিগুলো মাঝারি আকারের ব্রিটিশ কোম্পানিকে টার্গেট করছে।’
২০২৫ সালে এফটিএসই ১০০ বেড়েছে ১০ শতাংশ এর বেশি, যেখানে ওয়াল স্ট্রিটের এসঅ্যান্ডপি ৫০০ বেড়েছে মাত্র ৬ দশমিক ৭৫ শতাংশ। তবে জার্মানির ডিএএক্স সূচক সবাইকে ছাড়িয়ে গেছে, সরকারি ব্যয় ও বিনিয়োগ বৃদ্ধির পরিকল্পনায় ২০ শতাংশ এর বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে।

Discussion about this post