Print Date & Time : 21 July 2025 Monday 12:44 am

এমন সুশৃঙ্খল সমাবেশ আগে দেখেনি নগরবাসী

নিজস্ব প্রতিবেদক : রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জাতীয় সমাবেশ করল দেশের অন্যতম বৃহৎ রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। গতকাল শনিবার শহরের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে এই সমাবেশ অনুষ্ঠিত হলেও নগরবাসীকে পড়তে হয়নি তেমন কোনো ভোগান্তিতে। সড়কে দেখা যায়নি দীর্ঘ যানজট। ঘটেনি কোনো সংঘর্ষ বা হানাহানির ঘটনা। এমন শান্তিপূর্ণ রাজনৈতিক সমাবেশ আগে দেখেনি কেউ।

প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, জামায়াতের কেন্দ্রীয় পর্যায়ের নেতারে উপস্থিতিতে এই সমাবেশকে ঘিরে লাখো মানুষের সমাগম ঘটে। এতে যোগ দিতে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ঢাকায় আসেন দলটির নেতাকর্মী ও সর্মকরা। তবে অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোর চেয়ে কিছুটা ব্যক্তিক্রম ছিল জামায়াতের এই সমাবেশের চিত্র। জামায়াতে ইসলামীর নেতাকর্মীরা যেসব বাসযোগে ঢাকায় আসেন, তা তারা খুব সুশৃঙ্খলভাবে সমাবেশস্থল থেকে কমপক্ষে এক কিলোমিটার দূরে রাস্তার একপাশে সারিবদ্ধভাবে দাঁড় করিয়ে রাখেন।

অন্যসব রাজনৈতিক দলের মতো জামায়াতের নেতাকর্মীরা রাস্তায় মিছিল করতে করতে সমাবেশস্থলে যেতে খো যায়নি। তারা রাস্তার একপাশ দিয়ে হেঁটে হেঁটে সমাবেশে যান।

গতকাল শনিবার সমাবেশস্থল ও এর আশেপাশের এলাকা ঘুরে খো যায়, দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে সমাবেশে অংশ নিতে ছুটে এসেছেন জামায়াতের নেতাকর্মীরা। নির্ধারিত স্থানে গাড়ি রেখে পায়ে হেঁটে এবং অটোরিকশায় করে সমাবেশস্থলে যাচ্ছেন সর্মক।

এছাড়া সকাল থেকেই রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে কর্মমুখী মানুষের উপস্থিতিও দেখা গেছে। সড়কে গণপরিবহন কম থাকায় এসব কর্মমুখী মানুষদের অটোরিকশা ব্যবহার করতেও দেখা যায়।

তবে কোনো কোনো সড়কে গণপরিবহন সংকট ছিল। কর্মস্থলগামী মানুষকে ভিড় ঠেলে বাসে চলাচল করতে দেখা গেছে। সমাবেশ শুরু হয় বেলা ২টায়। এ কারণে এর আগের এক-দেড় ঘণ্টা সময় মেট্রোরেলে ছিল উপচে পড়া ভিড়। এ সময় অনেকেই নিকট দূরত্ব হেঁটে অফিসে যান। অনেকে রিকশায় চলাচল করেন। এ সময় যাত্রীর অতিরিক্ত চাপ দেখে বাড়তি ভাড়া আদায়ের চেষ্টা করেন অনেক রিকশাচালক।

রাজধানীর বাসাবো থেকে কারওয়ান বাজারগামী এক নারী যাত্রী শেয়ার বিজকে বলেন, রাস্তায় কোনো গাড়ি নেই। টুকটাক যেসব গাড়ি চলছে সেগুলোও অন্যান্য রাস্তা আটকে রাখা হয়েছে বলে তীব্র যানজটে পড়ে। এখন আর কী করার? অফিসেও যেতে হবে। তাই বেশি ভাড়া দিয়ে রিকশা নিতে হলো।

অন্য এক যাত্রী বলেন, রাস্তায় শুধু মানুষ আর মানুষ। কোনো গাড়ি নেই। গাড়ি না থাকার কারণে রিকশায় যে ভাড়া ৪০ টাকা সেই ভাড়া ৮০ টাকা দিতে হচ্ছে। এখন রিকশা ছাড়া চলাচলের কোনো উপায় নেই। তাই ভাড়া বেশি হলেও বাধ্য হয়ে যেতে হচ্ছে।

এক রিকশাচালক বলেন, বিভিন্ন জায়গায় রাস্তা বন্ধ। ভেতরের রাস্তা দিয়ে ঘুরে ঘুরে যেতে হচ্ছে। তাই ভাড়া একটু বেশি।

এদিকে সমাবেশ শেষে কেউ পায়ে হেঁটে, কেউ ভ্যানে, কেউ আবার বাসে করে ফিরছেন গন্তব্যে। তারা বেশিরভাগই দলীয় পোশাক ও মাথায় ধর্মীয় পোশাক পরিহিত। রমনা পার্ক, শাহবাগ, টিএসসি এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, কর্মীরা ক্লান্ত হলেও উজ্জীবিত চিত্তে সমাবেশের বার্তা নিয়ে ফিরছেন।

নেতাকর্মীদের অনেকেই জানিয়েছেন, তারা শান্তিপূর্ণভাবে সমাবেশে অংশ নিয়েছেন এবং একইভাবে ঘরে ফিরছেন। মগবাজার এলাকার বাসি্নদা ডিজিটাল কনসালট্যান্সি অব অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের স্বত্বাধিকারী মোহাম্মদ আবু তাহের এই সমাবেশে অংশ নেন। তিনি শেয়ার বিজকে বলেন, আমারে সব ধরনের নির্শেনা দেয়া ছিল। সুশৃঙ্খলভাবে আমরা এই সমাবেশে অংশ নিই। এ কারণে খুব সুন্দরভাবে এই সমাবেশ শেষ হয়েছে।

জামায়াতের জাতীয় সমাবেশের কারণে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় যান চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়। সমাবেশের আশেপাশের এলাকা যেমন শাহবাগ, সায়েন্সল্যাব, বাংলামোটর পর্যন্ত সড়কে যানজট দেখা গেছে।

একইভাবে রমনা থেকে মৎস্য ভবন হয়ে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে তোপখানা রোড, পুরানা পল্টন, গুলিস্তান থেকে চানখাঁরপুল এলাকায়ও চলাচল করতে অসুবিধা হয় সাধারণ পথচারীদের। এছাড়া কাকরাইল মোড় থেকে তেজগাঁও রোডেও যানজট ছিল।

তবে এত বিপুল পরিমাণ মানুষ নিয়ে রাজনৈতিক দলের সমাবেশকে ঘিরে এই যানজট থাকলেও তা তূলনামূলক স্বস্তিদায়ক রাজনৈতিক কর্মসূচি বলে মন্তব্য করেছেন নগরবাসীরা।

সম্প্রতি দেশে ফেরা এক প্রবাসী গতকাল বিমানবন্দর এলাকা থেকে কারওয়ান বাজারে আসেন। এ সময় তিনি খুব অল্প সময়ে গন্তব্যে পৌঁছাতে পেরে স্বস্তি প্রকাশ করেন। তিনি শেয়ার বিজকে বলেন, আমি হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে কারওয়ান বাজার এসেছি মাত্র ৪০ মিনিটে। বিমানবন্দর থেকে আসার সময় এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে ব্যবহার না করেই এত দ্রুতসময়ে পৌঁছাতে পারব তা কখনও ভাবিনি। তাও আবার জামায়াতের সমাবেশের দিনে। এমন সুশৃঙ্খল রাজনৈতিক সমাবেশ এর আগে কখনও দেখিনি।

এই সমাবেশকে ঘিরে শহরে তীব্র যানজট এবং ভোগান্তি হতে পারে এমন আশঙ্কা থেকে আগেভাগেই নিজেদের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে নগরবাসীর কাছে দুঃখপ্রকাশ করে জামায়াত ইসলামী বাংলাদেশ।

এর আগে গত ২৮ মে বিএনপির তিন সংগঠনের তারুণ্যের সমাবেশকে ঘিরে ঢাকা তীব্র যানজট দেখা দেয়। ওই দিন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার (ট্রাফিক) মো. সরওয়ার গণমাধ্যমকে বলেন, রাজধানীতে বিএনপির তিন সংগঠনের তারুণ্যের সমাবেশ আছে। সেখানে কয়েক লাখ লোক আসার কথা। এ জন্য গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, কুমিল্লা থেকে বাসে করে নেতাকর্মীরা রাজধানীতে আসছেন। নগরীর আশপাশ থেকেও বাস ভর্তি করে লোকজন আসছেন। এ ছাড়া নগরীর বিভিন্ন এলাকা থেকে মিছিল নিয়ে লোকজন আসছে। শুধু মিরপুর ও উত্তরার কিছু অংশ বাদ দিয়ে পুরো নগরেই ওইদিন যানজট।

এর আগে শহরে এ ধরনের সমাবেশে রাজনৈতিক দলগুলোর নিজেদের কর্মীদের মধ্যে গণ্ডগোল, অন্যান্য রাজনৈতিক দলের কর্মীদের বাধার মুখে পড়তেও দেখা গেছে। এতে সাধারণ মানুষেরও অনেক ভোগান্তিতে পড়তে হয়। তবে জামায়াতে ইসলামীর এই সমাবেশে ঘটতে দেখা যায়নি।