শেয়ার বিজ ডেস্ক : স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) তালিকা থেকে উত্তরণের পর বড় ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে পারে বাংলাদেশের ওষুধশিল্প। মেধাস্বত্ব বিধি আরও কড়াকড়ি হবে। এতে ওষুধের দাম বাড়ার পাশাপাশি সফটওয়্যার, বইসহ বিভিন্ন পণ্যের কপিরাইট ইস্যুতেও অতিরিক্ত ব্যয় গুনতে হতে পারে। এ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন অর্থনীতি ও শিল্প বিশ্লেষকরা।
গতকাল শনিবার (১৬ আগস্ট) রাজধানীর তেজগাঁওয়ে বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রিজ (বিসিআই) আয়োজিত ‘মেধাসম্পদ এবং বাণিজ্য রূপান্তরের চ্যালেঞ্জ: স্থানীয় শিল্পের জন্য সর্বোত্তম কৌশল’ শীর্ষক সেমিনারে এসব কথা বলেন বক্তারা। এতে সভাপতিত্ব করেন বিসিআই সভাপতি আনোয়ার-উল আলম চৌধুরী (পারভেজ)।
সেমিনারে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন বলেন, উন্নত দেশগুলোর নিজস্ব ও ভূরাজনৈতিক ইস্যু বাণিজ্যের ওপর প্রভাব ফেলছে। এর ফলে সময়ে সময়ে সংরক্ষণশীল বাণিজ্য ভীতি তৈরি হচ্ছে। ডব্লিউটিও দিন দিন দুর্বল হয়ে যাচ্ছে। সম্প্রতি বিভিন্ন দেশের ওপর আরোপ করা যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক সব নিয়ম-নীতি পরিবর্তন করে দিয়েছে। এ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বহুপক্ষীয় বাণিজ্যের বাইরে গিয়ে কিছু দেশ জোটবদ্ধভাবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য করছে।
তিনি বলেন, বিভিন্ন দেশ এখন মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) করছে। তবে এফটিএ করলেই যে খুব সুবিধা হবে, তা নয়। এর সুফল নির্ভর করে দরকষাকষির সক্ষমতার ওপর।
বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের সাবেক সদস্য ড. মোস্তফা আবিদ খান বলেন, এলডিসি উত্তরণের ফলে রপ্তানিতে যে চ্যালেঞ্জ আসবে, তা মোকাবিলা কঠিন হবে না। তবে মূলত সমস্যা হবে মেধাস্বত্বের ক্ষেত্রে। উত্তরণের পর ওষুধের দাম বাড়বে। একই সঙ্গে কপিরাইট ইস্যুতে সফটওয়্যার, বইসহ বেশ কিছু ক্ষেত্রে বাড়তি দাম দিতে হবে। এগুলো কীভাবে মোকাবিলা করা যায়, সেদিকে নজর দিতে হবে।
গবেষণা সংস্থা র্যাপিডের চেয়ারম্যান ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, সরকার রাজস্বের ২৭ শতাংশ আহরণ করে আমদানি শুল্ক থেকে। এফটিএ করলে এ খাত থেকে রাজস্ব কমে যাবে। এ অবস্থায় প্রয়োজন যৌক্তিকতার ভিত্তিতে এফটিএ কৌশল নির্ধারণ।
পলিসি এক্সচেঞ্জ বাংলাদেশের চেয়ারম্যান ড. মাসরুর রিয়াজ বলেন, বাংলাদেশের রপ্তানির ভিত্তি মজবুত রাখতে পণ্য ও বাজারের বৈচিত্র্য দরকার। কর্মসংস্থান বাড়াতে বেসরকারি বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। ডিজিটাল অর্থনীতি এবং এসএমইর মতো খাতে বিনিয়োগ বাড়ালে কর্মসংস্থান বৃদ্ধিতে সহায়তা করবে।
আনোয়ার-উল আলম চৌধুরী বলেন, এলডিসি উত্তরণ পেছানোর জন্য ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে। কারণ জোর করে এলডিসি উত্তরণের কারণে বিভিন্ন দেশের সঙ্গে এফটিএ করতে হচ্ছে। আমদানি শুল্ক কমে যাওয়ায় সরকার রাজস্ব হারাবে। শুল্ক কমানোর ফলে প্যাকেজিং, সিমেন্টসহ বেশ কিছু শিল্প বসে যাবে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে ব্যবসা পরিচালন ব্যয় বেশি। এর অন্যতম কারণ সুদহার বেশি। এর সঙ্গে চট্টগ্রাম বন্দরে ওয়্যারহাউস ব্যয় প্রায় চার গুণ বাড়ানো হয়েছে। ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ বেশি হওয়ায় আগামীতে বিদেশি ব্যাংকগুলো এলসি নেবে কিনা, তাও চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
থার্ড ওয়ার্ল্ড নেটওয়ার্কের জ্যেষ্ঠ পরামর্শক সানিয়া রিড স্মিথ বলেন, এখন বাংলাদেশ মেধাস্বত্বের বিধিনিষেধ ছাড়াই ওষুধ উৎপাদন ও রপ্তানি করতে পারছে। কিন্তু এলডিসি স্ট্যাটাস হারালে ওই ওষুধগুলোর ওপর পেটেন্ট বসবে, যা বিনিয়োগ কমাতে পারে।
বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) বিজনেস ডেভেলপমেন্ট প্রধান নাহিয়ান রহমান রোচি বলেন, এলডিসি থেকে উত্তরণের পর ওষুধসহ বেশ কয়েকটি খাতে ১০ থেকে ১৫ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক আরোপ হতে পারে। এ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে এফটিএ, পিটিএসহ অন্যান্য দ্বিপক্ষীয় চুক্তি করার প্রস্তুতি নিতে হবে। এ জন্য এফটিএ কৌশল গ্রহণ করতে হবে।
সেমিনারে আরও বক্তব্য দেন- মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এমসিসিআই) সভাপতি কামরান টি রহমান, বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকসের (বিএবি) সভাপতি আব্দুল হাই সরকার প্রমুখ।
আরআর/