নির্ধারিত সময় অনুযায়ী অর্থাৎ আগামী বছর স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে উত্তরণের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। এলডিসি থেকে উত্তরণ হলে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে নিজেদের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হওয়ার পাশাপাশি অর্থনৈতিক সক্ষমতার বহিঃপ্রকাশ ঘটে। এতে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা আস্থা রাখতে পারেন। অবশ্য বর্তমান অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জের মধ্যে এলডিসি থেকে উত্তরণের সিদ্ধান্ত নেয়ায় ব্যবসায়ীদের একটি অংশ নাখোশ। এলডিসি থেকে উত্তরণের পর পণ্য রপ্তানিতে বাজার সুবিধা মিলবে না, দেওয়া যাবে না প্রণোদনা। এতে বাংলাদেশি পণ্যের প্রতিযোগিতা সক্ষমতা কমবে। চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সুনির্দিষ্ট উদ্যোগ ছাড়া এলডিসি থেকে উত্তরণের সিদ্ধান্ত আত্মঘাতী—এমন আখ্যা দিয়ে তারা উত্তরণের সময় পেছানোর পক্ষপাতী। এলডিসি থেকে বের হলে চ্যালেঞ্জের মধ্যে পড়বে বাংলাদেশের রপ্তানি খাত, কারণ এলডিসি হিসেবে বাংলাদেশ বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) আওতায় শুল্কমুক্ত বাজার-সুবিধা পায়। এর ফলে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ), যুক্তরাজ্য, ভারত, চীন, অস্ট্রেলিয়াসহ বিভিন্ন দেশে শুল্কমুক্ত সুবিধায় পণ্য রপ্তানি করা যায়। বিদ্যমান নিয়ম অনুযায়ী, এলডিসি থেকে উত্তরণের পর এই বাজার-সুবিধা বন্ধ হয়ে যাবে। তবে ইইউ জিএসপির আওতায় এই শুল্কমুক্ত সুবিধা থাকবে ২০২৯ সাল পর্যন্ত। যুক্তরাজ্যও একইভাবে সুবিধা দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। তবু ব্যবসায়ীরা বিরোধিত করছেন। আমাদের ব্যবসায়ীদের যতই প্রণোদনা ও শুল্ক ছাড় দেয়া হোক না কেন তাদের চাহিদা অফুরান।
এলডিসি হিসেবে যেকোনো দেশ তার দেশে উৎপাদিত পণ্য বা সেবার ওপর নগদ সহায়তা ও ভর্তুকি দিতে পারে। বাংলাদেশও পণ্য রপ্তানিতে নগদ সহায়তা দেয়। করসুবিধা, ভর্তুকিসহ নানা ধরনের সুবিধা পান দেশীয় উদ্যোক্তারা। তবে এলডিসি থেকে উত্তরণের পর নগদ সহায়তা না দেয়ার বাধ্যবাধকতা তৈরি হবে। তাই রপ্তানি কমার আশঙ্কা থেকেই যায়। কিন্তু সবাই যখন এগিয়ে যাচ্ছে, আমাদের তখন পিছিয়ে থাকা প্রত্যাশিত নয়। সমসাময়িক সময়ে যেসব দেশ উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে উত্তরণের প্রস্তুতি নিচ্ছে, তাদের তৈরি পোশাক রপ্তানি নেই। কিন্তু আমাদের তা আছে এবং ভালোভাবেই আছে। এ বিবেচনায় যুগের চাহিদার সঙ্গে আমরা কেন তাল মেলাতে পারব না! এলডিসি থেকে উত্তরণ নিয়ে পর্যালোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে বুধবার। প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণের প্রস্তুতিবিষয়ক উচ্চপর্যায়ের পর্যালোচনা সভায় ১৬টি সিদ্ধান্তের অগ্রগতি বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। এর মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) চারটি, শিল্প মন্ত্রণালয় তিনটি, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ দুটি, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় তিনটি ও প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় চারটি সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে কাজ করছে। এরই মধ্যে ১৯টি সংস্থা যুক্ত হয়েছে। আরও সংস্থাকে যুক্ত করা হচ্ছে। সাভারে অবস্থিত চামড়াশিল্প নগরে স্থাপিত বর্জ্য পরিশোধনাগার (ইটিপি) পূর্ণমাত্রায় চালু করা, মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ায় বাস্তবায়নাধীন ওষুধের মূল কাঁচামাল অ্যাকটিভ ফার্মাসিউটিক্যাল ইনগ্রেডিয়েন্ট (এপিআই) উৎপাদনের পার্ক পূর্ণমাত্রায় চালু করা এবং ২০২২ সালে প্রণীত শিল্পনীতি হালনাগাদ করতে কী কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, এ বিষয়েও সভায় আলোচনা হয়। এলডিসি থেকে উত্তরণের কারণে প্রণোদনা না থাকলে ক্রয়াদেশ হারানোর যে শঙ্কা করছেন উদ্যোক্তারা, সেসব বিবেচনায় নিয়ে দ্রুতই ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেই প্রত্যাশা।