রেজাউল করিম খোকন : জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় পুলিশের গুলিতে সবচেয়ে বেশি মৃত্যু হয়েছে রাজধানী ঢাকায়। এর মধ্যে যাত্রাবাড়ী, উত্তরা, মিরপুর, মোহাম্মপুর ও রামপুরাÑশুধু এই পাঁচ এলাকায় নিহত হয়েছেন অন্তত ৩২৪ জন। প্রাণহানির এই চিত্রই বলে দিচ্ছে গণ-অভ্যুত্থানের সময় রাজধানীর পরিস্থিতি কতটা ভয়ংকর ছিল। গত বছরের ১৬ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত মাত্র ২১ দিনে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় নিহত হয়েছেন কমপক্ষে ৪২৬ জন। গণ-অভ্যুত্থানের পুরোটা সময় রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা আক্রমণাত্মক ছিলেন। নির্বিচার গুলিতে তখন যাত্রাবাড়ীতে নিহত হন ১১৭ জন, উত্তরায় ৭০ জন, মিরপুরে ৬২ জন, মোহাম্মদপুরে ৪৩ জন ও রামপুরায় ৩২ জন। এর বাইরে বাড্ডা, ভাটারা, নিউমার্কেট, বংশালসহ রাজধানীর ২২টি এলাকায় গুলিবিদ্ধ হয়ে মৃত্যু হয়েছে কমপক্ষে ১০২ জনের।
রাজধানীর বাইরে সাভার, চট্টগ্রাম, নরসিংদী, ফেনী ও রংপুরে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে ব্যাপক মাত্রায় বলপ্রয়োগ করা হয়েছিল। ছাত্র-জনতার ৩৬ দিনের (১ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট) আন্দোলন সবচেয়ে বেশি মৃত্যুর ঘটনা ঘটে ১৮, ১৯ ও ২০ জুলাই এবং ৪ ও ৫ আগস্টে। এর মধ্যে ১৮ জুলাই ৫৩ জন, ১৯ জুলাই ১৭৭ জন, ২০ জুলাই ৬৫ জন, ৪ আগস্ট ১০৮ জন এবং ৫ আগস্ট ৩৪৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। অর্থাৎ এই পাঁচ দিনেই মৃত্যু হয়েছে ৭৪৭ জনের।
সরকারি গেজেট অনুযায়ী, এখন পর্যন্ত জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে শহীদ হয়েছেন ৮৪৪ জন। এর মধ্যে ৮০২ জনের বিষয়ে সুনির্দিষ্ট তথ্য রয়েছে। এই ৮০২ জনের মধ্যে ৭০৬ জনের মৃত্যু হয়েছে গুলিতে। অর্থাৎ ৮৮ শতাংশই মারা গেছেন গুলিতে। অধিকাংশেরই গুলি লেগেছিল বুকে, পিঠে ও মাথায়। ওই সময়ে বাসাবাড়িও নিরাপদ ছিল না। বাসাবাড়িতে গুলিবিদ্ধ হয়ে নারী-শিশুসহ ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে। গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে পুলিশ, র্যাব ও বিজিবি প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার করেছিল, যা জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনারের প্তরের প্রতিবেনেও উঠে এসেছে। পুলিশের পাশাপাশি রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় আওয়ামী লীগের (এখন কার্যক্রম নিষিদ্ধ) বিভিন্ন সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের অনেক নেতা-কর্মীকে গুলি করতে দেখা গেছে। জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনারের দপ্তরের তথ্যানুসন্ধান প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয় গত ফেব্রুয়ারি মাসে। এই প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, শেখ হাসিনার সরকার ক্রমাগত নৃশংস পদক্ষেপ নিয়ে পদ্ধতিগতভাবে বিক্ষোভ মনের চেষ্টা করেছিল। ওই সময়ে (১৫ জুলাই থেকে ৫ আগস্টের মধ্যে) ১ হাজার ৪০০ জনের বেশি মানুষকে হত্যা করা হয়ে থাকতে পারে। ওই প্রতিবেনে আরও বলা হয়, বিক্ষোভ চলাকালে নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে ৬৬ শতাংশ মিলিটারি রাইফেলসে (এমন অস্ত্র সশস্ত্র বাহিনী ব্যবহার করে), ১২ শতাংশ শটগানের গুলিতে এবং ২ শতাংশ পিস্তলের গুলিতে প্রাণ হারান।
আন্দোলনকারীরে সড়ক থেকে সরিয়ে দিতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং তৎকালীন সরকার সমর্থকেরা আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে মাঠে ছিলেন। পুলিশ নির্বিচার গুলি করত। গুলি থেকে বাঁচতে কখনো সড়ক বিভাজকের পাশে শুয়ে, আবার কখনো পিলারের পেছনে লুকিয়ে থাকতেন তারা। বহু মানুষ গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গেছেন। কিন্তু গুলির মধ্যেও তারা আন্দোলন চালিয়ে গেছেন, সড়কে বিক্ষোভ করেছেন।যাত্রাবাড়ী এবং নারায়ণগঞ্জে স্কুল, কলেজ ও বিশ্বব্যিালয়ের শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি বিপুলসংখ্যক মাদ্রাসার ছাত্রদেরও আন্দোলনে অংশ নিতে দেখা গেছে। মৃত্যুর তথ্য বিশ্লেষণেও দেখা গেছে, অনেক মাদ্রাসাশিক্ষার্থী মারা গেছেন যাত্রাবাড়ী-নারায়ণগঞ্জ অঞ্চলে।
যাত্রাবাড়ী এলাকায় পুলিশ নির্বিচার গুলি করেছে, এমন অনেকে ভিডিও আন্দোলন চলার সময়েই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। একটি ভিডিওতে দেখা যায়, একের পর এক গুলি করছে একদল পুলিশ। যাকে সামনে পাচ্ছে তাকেই গুলি করছে। ওই ভিডিওটি ৫ আগস্টের। অন্য একটি ভিডিওতে (২০ জুলাই) দেখা যায়, একদম কাছ থেকে পুলিশ এক তরুণকে গুলি করছে। গুলিবিদ্ধ তরুণের সঙ্গে আরেকজন ছিলেন। গুলিবিদ্ধ ওই তরুণকে টেনে নেওয়ার চেষ্টা করছিলেন তিনি। পুলিশের আক্রমণের মুখে একপর্যায়ে ওই ব্যক্তি গুলিবিদ্ধ তরুণকে ছেড়ে দৌড়ে চলে যান। পুলিশ তখনো গুলি করছিল। পরে জানা যায়, গুলিবিদ্ধ তরুণের নাম ইমাম হাসান। তিনি একটি কলেজের শির্ক্ষাী। তার বাবা ময়নাল ইসলাম ভূঁইয়া পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই)। ময়নাল হোসেন সেদিন সন্ধ্যায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের মর্গে ছেলের লাশ শনাক্ত করেন। ছেলের লাশ দেখার পর এই পুলিশ কর্মকর্তা নিজ বাহিনীর আরেকজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে ফোনে বলেছিলেন, ‘একজনকে মারতে কতগুলো গুলি লাগে, স্যার?’
উত্তরায় বিভিন্ন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীর পাশাপাশি নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ আন্দোলনে অংশ নিয়েছিলেন।এর মধ্যে ১৮ জুলাই উত্তরার আজমপুরে কপালে গুলি লেগে মীর মাহফুজুর রহমান মুগ্ধ শহী হন। ওই দিন অভ্যুত্থানে অংশ নেওয়া আন্দোলনকারীদের মধ্যে পানি বিতরণ করছিলেন মুগ্ধ। পানির কেস হাতে নিয়ে ‘পানি লাগবে, পানি, পানি…’ বলছিলেন মুগ্ধ। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সেই ভিডিও ব্যাপকভাবে ভাইরাল (ছড়িয়ে পড়ে) হয়। ভাইরাল সেই ভিডিও ও মুগ্ধর মৃত্যুর ঘটনা ভীষণভাবে নাড়া য়ে স্কুলশিক্ষার্থী জুবায়ের আহম্মেকে। একপর্যায়ে আন্দোলনে অংশ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন তিনি। ২ আগস্ট উত্তরার আন্দোলনে যেদিন তিনি প্রথম অংশ নেন, সেদিনই তার শরীরে ছররা গুলি লাগে। এরপরও আ›োলন চালিয়ে যান তিনি। ৪ আগস্ট একটি গুলি তার পাঁজরের নিচের অংশ ভে করে পাকস্থলী স্পর্শ করে। এখনো সেই গুলি বের করা যায়নি। মিরপুর, মোহাম্মদপুর ও রামপুরায় ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাশাপাশি আওয়ামী লীগের (এখন কার্যক্রম নিষিদ্ধ) অনেক নেতা-কর্মী অস্ত্র হাতে মাঠে ছিলেন। তারে গুলিতে অসংখ্য মানুষ হতাহত হন। বিশেষ করে মিরপুর এলাকার পরিস্থিতি এমন ছিল যে বাসাবাড়িও নিরাপ ছিল না। গত বছরের ১৯ জুলাই বাসায় গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যায় সাফকাত সামির নামে ১১ বছরের এক শিশু।
তার মৃত্যুর পর ময়নাতদন্ত করতে বাধা দেন ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সদস্য মো. ইসমাইল হোসেন। পরে পরিবার বাধ্য হয়ে ময়নাতদন্ত ছাড়াই লাশ দাফন করে।মিরপুরে অস্ত্র নিয়ে সবচেয়ে বেশি সক্রিয় ছিলেন যুবলীগের (এখন কার্যক্রম নিষিদ্ধ) সাধারণ সম্পাদক ও তার সহযোগীরা। সরকার পতনের পর তিনি আত্মগোপনে যান। মোহাম্মপুর এলাকায় ঢাকা উত্তর সিটির ৩৩ নম্বর ওয়ার্ডের তৎকালীন কাউন্সিলর আসিফ আহমে (সাবেক সেনাপ্রধান আজিজ আহমেদের ভাতিজা), একই ওয়ার্ডের আরেকজন সাবেক কাউন্সিলর তারেকুজ্জামান ওরফে রাজীব এবং আওয়ামী লীগের সভাপতিমøলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানকের ব্যক্তিগত সহকারী মাসুদুর রহমান ওরফে বিপ্লব আগ্নেয়াস্ত্র হাতে ছাত্র-জনতাকে লক্ষ্য করে গুলি ছুড়তে দেখা গেছে। মোহাম্মদপুরে ছাত্র–জনতার ওপর গুলি ছুড়ছেন এমন দুটি ভিডিও যাচাই করে দেখা গেছে, আওয়ামী লীগ সরকার পতনের ঠিক এক দিন আগে অস্ত্র হাতে আসিফ আন্দোলনকারীদের গুলি করছেন। আরেকটি ভিডিওতে তারেকুজ্জামান ও মাসুদুরকে গুলি করতে দেখা যায়। মোহাম্মদপুর এলাকায় গুলিতে নিহত হন ৪৩ জন।গণ–অভ্যুত্থানের সময় ছাত্র–জনতা ব্যাপক প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিল রামপুরা এলাকায়। সেখানেও আন্দোলনকারীদের দমনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাশাপাশি আওয়ামী লীগের (এখন কার্যক্রম নিষিদ্ধ) অনেক নেতা-কর্মী অস্ত্র হাতে মাঠে ছিল। গুলিতে রামপুরায় ৩২ জন নিহত হন। এর বাইরে রাজধানীর বাড্ডা, ভাটারা, নিউমার্কেট, চানখাঁরপুল, চকবাজার, গুলিস্তান, আগারগাঁও, মহাখালী, হাতিরঝিল, কলাবাগান, তেজগাঁও, ফার্মগেট, লক্ষ্মীবাজার, গোলাপবাগ, ধানমন্ডি, হাজারীবাগ, আদাবর, বাংলামোটর, শাহবাগ, পল্টন, বংশাল ও মুগদায় আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের লক্ষ্য করে তখন পুলিশ গুলি ছুড়েছিল। এর মধ্যে বাড্ডা ও ভাটারায় ৫০ জন, বংশালে ১১ জন এবং নিউমার্কেট এলাকায় ১১ জন নিহত।এর বাইরে গণ-অভ্যুত্থানের সময় নিহত অনেককে ‘বেওয়ারিশ’ হিসেবে দাফন করা হয়। রাজধানীর রায়েরবাজার কবরস্থানে বেওয়ারিশ হিসেবে দাফন করা হয় ১১৪টি মরহে। এসব মরেেহর পরিচয় এখনো শনাক্ত হয়নি।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে কোটা সংস্কার আন্দোলন শুরু হয় গত বছরের ১ জুলাই। এই আন্দোলনে মাতে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার ১৬ জুলাই থেকে ব্যাপক মাত্রায় বলপ্রয়োগ শুরু করে। ১৬ জুলাই এক দিনেইই\ ছয়জনের মৃত্যু হয়। সেদিন পুলিশের গুলিতে নিহত হন রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদ। তাকে হত্যা করার দৃশ্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে প্রতিবাদে ফেটে পড়ে দেশ। ১৮ থেকে ২১ জুলাইÍটানা চার দিন আন্দোলন দমাতে নির্বিচার গুলি করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। তবে বিপুলসংখ্যক মানুষকে হত্যার পরও আন্দোলন দমাতে না পেরে ১৯ জুলাই রাত ১২টা থেকে দেশজুড়ে কারফিউ জারি করেছিল তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার।
এই ঘোষণা দেওয়ার সময় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছিলেন, ‘শুট অ্যাট সাইট’ বা খোমাত্র গুলির নির্শে দেওয়া হয়েছে। গণ-অভ্যুত্থানের সময় গুলিতে নিহত ব্যক্তিদের তালিকায় চার বছরের শিশু থেকে শুরু করে ৭০ বছর বয়সী মানুষও রয়েছেন। ১৮ বছরের নিচে এমন ১৩১ শিশুর মৃত্যু হয়েছে তখন। যারে বেশির ভাগের মৃত্যু হয়েছে গুলিতে। সরকারি গেজেটে শহীদের তালিকায় শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি শ্রমজীবী ও পেশাজীবীরা রয়েছেন। ছাত্র-জনতার আন্দোলন মন করতে তৎকালীন সরকার নৃশংস পদ্ধতি বেছে নিয়েছিল। এমন নৃশংসতা চালানো হয়েছিল যে শিশুরাও বা যায়নি। যা ঘটেছিল, সেটি বর্বরতা। দেশে তখন চরম মানবিক বিপর্যয় ঘটেছিল। মানবাধিকারের চূড়ান্ত লঙ্ঘন হয়েছিল। জুলাই মাসে আহত অনেকে কমপক্ষে ছয় দিন পর্যন্ত বিনা চিকিৎসায় ছিলেন। কেউ গ্রেপ্তারের ভয়ে হাসপাতালে যাননি। পুলিশি হেফাজতে থাকা আহত অনেকে চিকিৎসা পাননি। বিশেষ করে সাভার ও আশুলিয়ায় পুলিশের বাধার মুখে বিনা চিকিৎসায় ছিলেন অনেকে। সে সময় চিকিৎসা পাওয়ার বিষয়েই তাদের মনোযোগ বেশি ছিল, মানসিক স্বাস্থ্যের কথা কেউ ভাবতে পারেনি।
জুলাই অভ্যুত্থানে আহত ব্যক্তিরে মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করার ওপর জোর দিতে হবে। জুলাই অভ্যুত্থানে বিপুলসংখ্যক মানুষ আহত হয়েছেন। বহু মানুষ সহিংসতা প্রত্যক্ষ করেছেন। তাদের মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করা জরুরি। তাদের জন্য বিশেষায়িত সমন্বিত চিকিৎসা দরকার। তা না হলে এটা দীর্ঘমেয়াদি জনস্বাস্থ্য সংকট তৈরি করতে পারে। আহত ব্যক্তিরে কর্মসংস্থানের ওপর বেশি জোর দিতে হবে সরকারকে। পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশন (পিকেএসএফ) ছাড়াও বেসরকারি বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সরকার আহত ব্যক্তিদের প্রশিক্ষণ ও কর্মসংস্থানের ব্যাপারে আলোচনা শুরু করেছে।
গণ-অভ্যুত্থানে আহতদের মধ্যে খ এবং গ শ্রেণিভুক্তদের শিক্ষাগত যোগ্যতা, শারীরিক অবস্থা ও সামাজিক অবস্থানের ভিত্তিতে উপযুক্ত কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করবে সরকার। আজীবন বিনা মূল্যে চিকিৎসা-সুবিধা ও বিনা মূল্যে উচ্চশিক্ষার সুযোগও দেওয়ার চিন্তা রয়েছে সরকারের। আহত ব্যক্তির শিক্ষাগত যোগ্যতা, শারীরিক অবস্থা ও সামাজিক অবস্থান বিবেচনায় উপযুক্ত বিষয়ে অর্থাৎ কম্পিউটার ট্রেড, ফ্রিল্যান্সিং, গবাদিপশু পালন, মৎস্য খামার, পোলট্রি ফার্মিং, মোবাইল সার্ভিসিং, ড্রাইভিং ইত্যাদি বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেবে সরকার। সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে এ জন্য তাদের অনুদান নেওয়া হবে। অন্যদিকে শহীদের সন্তানেরা বিনা মূল্যে শিক্ষা সহায়তা পাবেন। চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থানে গরিব মেহনতি মানুষের প্রাণ ঝরেছে বেশি। কিন্তু অন্তর্র্বতী সরকার তাদের আকাঙ্ক্ষার বাস্তবায়ন করতে পারছে না। মেহনতি মানুষের আকাঙ্ক্ষার বাস্তবায়ন না হলে আবার মানুষ রাস্তায় নেমে আসবে।
প্রয়োজনে আবার একটি গণ-অভ্যুত্থান হবে। তবে তার দোসররা এখনো ভয়ঙ্কর ষড়যন্ত্রের জাল বুনে চলেছে। তারা বিভিন্ন স্থানে নানা দাবি আদায় আন্দোলনরতরে উস্কানি নিয়ে নৈরাজ্য সৃষ্টি অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। প্রশাসনের ব্যর্থতায় পতিত স্বৈরাচারের দোসররা মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে। তাদের ঔদ্ধত্যপূর্ণ বক্তব্য , নানা ইস্যুতে প্ররোচনা সবাইকে হতবাক করেছে। প্রশাসনের মধ্যে ঘাপটি মেরে বসে থাকা আমলা সরকারি কর্মকর্তাদের যোগসাজশে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি অপপ্রয়াস চালাচ্ছে তারা।আপনারা সাবধান হোন, নইলে জুলাই যোদ্ধারা আবার রাজপে নেমে আসবে। দুঃখের সঙ্গে বলতে হয় ’২৪ অভ্যুত্থানের পরে যোদ্ধারে আবার নামতে হয়। অথচ সেই শেখ হাসিনার বিচার এখনো হলো না।একটি অভ্যুত্থান হয়েছে, কিন্তু বাংলাদেশের প্রতিটি সেক্টরে খুনি হাসিনার দোসররা নানা ষড়যন্ত্র চালিয়ে যাচ্ছে। আওয়ামী লীগকে আর কোনোভাবে পুনর্বাসন করা যাবে না। একই সঙ্গে শেখ হাসিনাকে দেশে এনে বিচারের মুখোমুখি করতে হবে। কোনোদিন আওয়ামী লীগ ও খুনি হাসিনার জায়গা হবে না এই বাংলার মাটিতে। হাজার হাজার লাশ ও হাজারো আহত ব্যক্তির অঙ্গহানির ওপর রাষ্ট্র দাঁড়িয়ে আছে। অবিলম্বে খুনি হাসিনার বিচার নিশ্চিত করতে হবে। আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে বটে। এবার বিচারের মুখোমুখি করতে হবে। এ ব্যাপারে সরকারকে কঠোর পক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। তা নাহলে আবার চব্বিশের জুলাই অভ্যুত্থানের মতো সবাই রাজপথে নেমে আসবে। সকল অনিয়ম, বৈষম্য, বিশৃঙ্খলা দূরীকরণের পাশাপাশি পতিত ফ্যাসিস্টদের নির্মূলে সক্রিয় আন্দোলনে শামিল হবে এ দেশের আবালবৃদ্ধবনিতা, সাধারণ জনগণ, তখন আর পার পাবে না কেউ।
অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংকার, কলাম লেখক

Discussion about this post