শেয়ার বিজ ডেস্ক : আমদানি করা ওষুধে ব্যাপক শুল্ক আরোপের প্রস্তাব করেছে ট্রাম্প প্রশাসন। এপির প্রতিবেদনের সূত্রে এনডিটিভি বলেছে, কিছু ওষুধের ক্ষেত্রে এই শুল্ক ২০০ শতাংশ পর্যন্ত হতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইতোমধ্যেই গাড়ি ও ইস্পাতের মতো পণ্যে শুল্ক আরোপ করেছেন, এবার তার চোখ পড়েছে ওষুধ শিল্পে। দীর্ঘ কয়েক দশক ধরে অনেক ওষুধ যুক্তরাষ্ট্রে শুল্কমুক্তভাবে প্রবেশ করেছেÑ এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত হলে বাজারে বড় প্রভাব পড়তে পারে বলেই শঙ্কা। খবর-এনডিটিভি।
১৯৬২ সালের ট্রেড এক্সপ্যানশন অ্যাক্টের ২৩২ ধারার আলোকে জাতীয় নিরাপত্তার যুক্তি তুলে ধরে এই পদক্ষেপের ব্যাখ্যা দিয়েছে হোয়াইট হাউস। যুক্তি হলো, কভিড-১৯ মহামারির সময় যে ঘাটতি তৈরি হয়েছিল, সেই অভিজ্ঞতার আলোকে স্থানীয় উৎপাদন বাড়ানো জরুরি।
সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র-ইউরোপ বাণিজ্য কাঠামোয় ইউরোপের কিছু পণ্যের ওপর ১৫ শতাংশ শুল্ক নির্ধারণ করা হয়েছে, যার মধ্যে ওষুধও আছে। তবে প্রশাসন অন্যান্য আমদানি পণ্যে আরও শুল্ক আরোপের হুমকি দিচ্ছে। লিরিংক পার্টনার্সের বিশ্লেষক ডেভিড রিসিঙ্গার ২৯ জুলাইয়ের নোটে উল্লেখ করেছেন, বেশির ভাগ ওষুধ কোম্পানি ৬ থেকে ১৮ মাসের মতো মজুত করে রেখেছে।
অন্যদিকে জেফারিজের বিশ্লেষক ডেভিড উইন্ডলি সতর্ক করেছেন, যদি শুল্ক ২০২৬ সালের শেষ নাগাদ কার্যকর হয়, তবে প্রকৃত প্রভাব বোঝা যাবে ২০২৭ বা ২০২৮ সালে। স্বল্প মেয়াদে বিঘ্ন কম হলেও দীর্ঘমেয়াদে ব্যয় ও সরবরাহে চাপ বাড়বে।
স্টাডিগ জানান, মাত্র ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ হলেও যুক্তরাষ্ট্রে ওষুধের দাম ১০ থেকে ১৪ শতাংশ বেড়ে যেতে পারে। বিদ্যমান মজুত শেষ হলে এই পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে। স্থায়ী আয়ের মানুষদের জন্য এটি বোঝা নয়।
যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসক্রিপশনের ৯২ শতাংশ জেনেরিক ওষুধ। জেনেরিক উৎপাদকেরা খুব স্বল্প মুনাফা করেন, সে কারণে তাদের পক্ষে বড় শুল্ক সামাল দেয়া কঠিন। বিশ্লেষকদের মতে, কেউ কেউ শুল্ক না দিয়ে বাজার ছেড়ে দিতেও পারেন।
বিশ্বের অনেক কোম্পানি চীন ও ভারতে উৎপাদন সরিয়ে নিয়েছে। সেই সঙ্গে নিম্ন করহারের কারণে আয়ারল্যান্ড ও সুইজারল্যান্ডের মতো দেশেও উৎপাদন স্থানান্তর করেছে তারা। যুক্তরাষ্ট্রের অনেক কোম্পানিও ওইসব দেশে উৎপাদন সরিয়ে নিয়েছে। গত বছর যুক্তরাষ্ট্রের ওষুধ ও ফার্মা পণ্যে বাণিজ্য ঘাটতি ছিল প্রায় ১৫০ বিলিয়ন বা ১৫ হাজার কোটি ডলার।
আমেরিকান অ্যাকশন ফোরামের বিশ্লেষক জ্যাকব জেনসেন বলন, অ্যান্টিবায়োটিকের ৯৭ শতাংশ, অ্যান্টিভাইরালের ৯২ শতাংশ ও জনপ্রিয় জেনেরিক ওষুধের ৮৩ শতাংশের অন্তত একটি সক্রিয় উপাদান বিদেশে তৈরি হয়।
তাই তাৎক্ষণিকভাবে এর সমাধান কঠিন। নতুন কারখানা বানাতে বছর লেগে যায়, খরচও অনেক।
কিছু বড় কোম্পানি ইতোমধ্যেই যুক্তরাষ্ট্রে বড় বিনিয়োগের ঘোষণা দিয়েছে। রোশে জানিয়েছে, তারা যুক্তরাষ্ট্রে ৫০ বিলিয়ন বা ৫ হাজার কোটি ডলার বিনিয়োগ করবে। জনসন অ্যান্ড জনসন আগামী চার বছরে ৫৫ বিলিয়ন বা ৫ হাজার ৫০০ কোটি ডলার বিনিয়োগের পরিকল্পনা করছে।
পিডব্লিউসির মাইটি পেরেইরা বলেন, ওষুধশিল্প খাত শূন্য শুল্ক থেকে সম্ভাব্য ২০০ শতাংশ শুল্কের দিকে যাচ্ছেÑ এটি বড় ধাক্কা। তিনি সতর্ক করে বলেন, শুল্ক থেকে প্রকৃতপক্ষে রক্ষা পেতে হলে যুক্তরাষ্ট্রেই সম্পূর্ণ সরবরাহ শৃঙ্খল তৈরি করতে হবে।
ভারত বিশ্বের বৃহত্তম জেনেরিক ওষুধ সরবরাহকারী। ইন্ডিয়ান ফার্মাসিউটিক্যাল অ্যালায়েন্সের সেক্রেটারি জেনারেল সুদর্শন জৈন এএনআইকে বলেন, জেনেরিক ওষুধ যুক্তরাষ্ট্রের সাশ্রয়ী চিকিৎসার জন্য ‘অত্যন্ত জরুরি’, তাই ভারতের ওষুধ কিন্তু ট্রাম্পের ৫০ শতাংশ শুল্কের আওতার বাইরে আছে।
বাসভ ক্যাপিটালের সহপ্রতিষ্ঠাতা সন্দীপ পান্ডে জানান, যুক্তরাষ্ট্রের ওষুধ আমদানির প্রায় ৬ শতাংশ ভারত থেকে আসে। মার্কিন নীতিনির্ধারকেরাও ভারতের ওপর নির্ভরশীলতা স্বীকার করেন।

Discussion about this post