Print Date & Time : 20 September 2025 Saturday 5:08 am

কমেছে বাণিজ্য ঘাটতি সংকটেও ফিরেছে স্বস্তি

নিজস্ব প্রতিবেদক : রেমিট্যান্সের প্রবাহ ও রপ্তানি আয় বাড়ার প্রভাবে বিদায়ী অর্থবছরে বিদেশি লেনদেনের ভারসাম্য বা ব্যালান্স অব পেমেন্টে (বিওপি) উন্নতি ঘটেছে। বিওপির যে হিসাব বাংলাদেশ ব্যাংক দিয়েছে, তাতে বাণিজ্য ঘাটতি বেশ কমেছে। এতে অর্থনৈতিক সংকটেও স্বস্তি দেখা দিয়েছে। চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরে জুলাই মাসে সামগ্রিক বাণিজ্য ঘাটতির স্থিতি দাঁড়িয়েছে ৫৪ কোটি ৫০ লাখ ডলার, যা আগের ২০২৪-২৫ অর্থবছরে জুলাই মাসে ছিল ৬৯ কোটি ৩০ লাখ ডলার। সেই হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে বাণিজ্য ঘাটতির পরিমাণ কমেছে ১৪ কোটি ৮০ লাখ ডলার, শতকরা হিসাবে যা ২১ দশমিক ৩৬ শতাংশ। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।
তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের জুলাই মাসে রপ্তানি আয় হয়েছে ৪৭৭ কোটি ৯০ লাখ ডলার, যা ২০২৪-২৫ অর্থবছরে রপ্তানি হয়েছিল ছিল ৩৮২ কোটি ৪০ লাখ ডলার। সেখানে বৃদ্ধির পরিমাণ ৯৫ কোটি ৫০ লাখ ডলার। শতকরা হিসাবে তা ২৫ শতাংশ। পাশাপাশি চলতি অর্থবছরের জুলাই মাসে আমদানি হয়েছে ৬২৭ কোটি ডলারের পণ্য, যা ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জুলাইতে ছিল ৫২৪ কোটি ৮০ লাখ ডলার। আমদানি বৃদ্ধির হার ১৯ দশমিক ৫০ শতাংশ।
বিশ্বব্যাংক ঢাকা কার্যালয়ের মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন মনে করেন, ব্যালান্স অব পেমেন্টের সার্বিক চিত্রে উন্নতি হয়েছে। তবে সূচকগুলোর উন্নতির সঙ্গে রয়েছে কিছু নেতিবাচক দিক। আর বর্তমানে যেসব সূচক উন্নতি হয়েছে, সামনে নেতিবাচক হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, বাণিজ্য ঘাটতির পরিমাণ সামান্য বেড়ে চলতি অর্থবছরের জুলাইতে দাঁড়িয়েছে ১৫০ কোটি ৫০ লাখ ডলার, যা ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জুলাইতে ছিল ১৪৬ কোটি ৩০ লাখ ডলার।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন বলছে, ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জুলাই মাসে আর্থিক হিসাবের স্থিতি নেতিবাচক বা ঘাটিত হিসাবে দাঁড়িয়েছে ৭১ কোটি ৮০ লাখ ডলার, যা গত ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জুলাইতে নেতিবাচক বা ঘাটতি হিসাব ছিল ২৬ কোটি ৩০ লাখ ডলার। আর্থিক হিসাব করা হয় প্রবাসী আয়, বিদেশি ঋণ ও সহায়তা, বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) এবং পোর্টফলিও ইনভেস্টমেন্টের পরিসংখ্যান যোগ-বিয়োগ করে।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ড. মইনুল ইসলাম বলেন, কোনো দেশের নিয়মিত বৈদেশিক লেনদেন পরিস্থিতি বোঝা যায় চলতি হিসাবের মাধ্যমে। আমদানি-রপ্তানিসহ অন্যান্য নিয়মিত আয়-ব্যয় এতে অন্তর্ভুক্ত হয়। এখানে উদ্বৃত্ত হলে চলতি লেনদেনের জন্য দেশকে কোনো ঋণ করতে হয় না। তবে ঘাটতি থাকলে তা মেটাতে ঋণ নিতে হয়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জুলাই মাসে নেট সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগের (এফডিআই) স্থিতি দাঁড়িয়েছে ১০৪ কোটি ডলার, যা তার আগে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জুলাই মাসে ছিল ৩৮ কোটি ডলারে। এদিকে চলতি অর্থবছরের জুলাই মাসে মোট রিজার্ভ ছিল ২৯ দশমিক ৮০ বিলিয়ন ডলার, যা ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জুলাইতে ছিল ২৫ দশমিক ৮২ বিলিয়ন ডলার। আর বিপিএম ৬ হিসাবে রিজার্ভ গত জুলাই মাসে ছিল ২৪ দশমিক ৭৮ বিলিয়ন ডলার, যা তার আগের অর্থবছরে (২০২৪-২৫) ছিল ২০ দশমিক ৩৯ বিলিয়ন ডলার। তবে ট্রেড ক্রেডিট নেট হিসাবে চলতি অর্থবছরের জুলাইতে ঘাটতি ছিল ৩০ কোটি ৯০ লাখ ডলার, যা আগের অর্থবছরে বা ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ছিল ১৫ কোটি ৯০ লাখ ডলার।
তথ্য বলছে, আর মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি বিদেশি ঋণ চলতি অর্থবছরের জুলাইতে দাঁড়িয়েছে ২০ কোটি ২০ লাখ ডলার, যা ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জুলাই মাসে ছিল ২৮ কোটি ৭০ লাখ ডলার। সেই হিসাবে মধ্য এবং দীর্ঘমেয়াদি ঋণ কমেছে ২৯ দশমিক ৬ শতাংশ। শ্রমিকদের রেমিট্যান্স গত জুলাইতে এসেছে ২৪৭ কোটি ৮০ লাখ ডলার। আর ২০২৪-২৫ সালের জুলাইতে রেমিট্যান্স এসেছিল ১৯১ কোটি ৪০ লাখ ডলার। এই জুলাই থেকে জুলাইতে বৃদ্ধির হার ২৯ দশমিক ৫ শতাংশ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক আরিফ হোসেন খান বলেন, বৈদেশিক মুদ্রার সরবরাহ সামনেও ধরে রাখতে হবে। না হলে চাপের মধ্যে পড়ার শঙ্কা রয়েছে।