নিজস্ব প্রতিবেদক : চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ পিএলসি (সিএসই) রাজধানীর হোটেল শেরাটনে ‘ডিসকাশন অন লঞ্চিং কমোডিটি এক্সচেঞ্জ ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক মতবিনিময় সভার আয়োজন করেছে বৃহস্পতিবার। এতে বাংলাদেশের প্রথম সারির ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং চেয়ারম্যানরা অংশগ্রহণ করেন।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী এবং সিএসইর প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী এবং বিশেষ অতিথি ছিলেন সিএসইর সাবেক সভাপতি এমকেএম মহিউদ্দিন।
এছাড়া অনুষ্ঠানে সিএসইর চেয়ারম্যান একেএম হাবিবুর রহমান, পরিচালক প্রফেসর ড. সাইফুল ইসলাম, ড. মাহমুদ হাসান, এম জুলফিকার হোসেন, মেজর (অব.) এমদাদুল ইসলাম এবং মোহাম্মদ নাসির উদ্দিন চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানের মূল প্রতিপাদ্য উপস্থাপনা করেন সিএসইর ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম সাইফুর রহমান মজুমদার। এ সময় সিএসইর সব ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, আমাদের পুঁজিবাজার তার অভীষ্ট গন্তব্যে পৌঁছতে পারেনি। ব্যাংকগুলো স্বল্পমেয়াদি ঋণ নিয়ে দীর্ঘমেয়াদি ঋণ দেয়া পরিচালনা করে। অথচ পুঁজিবাজার দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগের ক্ষেত্র হলেও এতে আশানুরূপ সাড়া মেলেনি। তিনি বলেন, অর্থনৈতিক গতিশীলতার জন্য মার্কেটে প্রোডাক্ট ডাইভারসিফিকেশন আনতে হবে। সেজন্য আমাদের আত্মবিশ্বাসী হতে হবে এবং নতুন নতুন প্রোডাক্ট নিয়ে কাজ করতে হবে।
আমীর খসরু বলেন, বন্ড, কমোডিটিসহ নতুন প্রোডাক্ট যত দ্রুত চালু হবে, তত দ্রুত অর্থনীতি সুগঠিত হবে। আপনারা যারা বিভিন্ন ব্যাংক থেকে এসেছেন, আপনাদেরই ভূমিকা নিতে হবে, সিএসইর এই নতুন মার্কেট স্থাপনে আপানদের সক্রিয় অংশগ্রহণ করতে হবে। এখানে যে ইনভেস্ট করবেন, সেই ইনভেস্টমেন্ট হবে আপনার ব্যালান্স শিটের একটি নিউ উইন্ডো। তিনি বলেন, দেশের বাইরে থাকা বাংলাদেশি ভাইয়েরা এই দেশে বিনিয়োগ করতে চায়, নতুন যে কোনো ভালো উদ্যোগে তারা আসতে আগ্রহী। আমাদের সেজন্য কাজ করতে হবে এবং নতুন ইনভেস্টমেন্টের জন্য উদ্যোগী হতে হবে।
তিনি আরও বলেন, ডেরিভেটিভস মার্কেট একটি বিশাল সম্ভাবনার বাজার, যা অর্থনীতিকে গতিশীল করতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখতে পারে। আর পুঁজিবাজারের উন্নয়নে সিএসইর এই কমোডিটি মার্কেট স্থাপনের উদ্যোগকে আমরা সাধুবাদ জানাই এবং আসুন সবাই মিলে একে সফল করি।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্যে সিএসইর চেয়ারম্যান একেএম হাবিবুর রহমান বলেন, কমোডিটি এক্সচেঞ্জ বাংলাদেশের জন্য সম্পূর্ণ নতুন ধারণা এবং পুঁজিবাজারের জন্য নতুন অ্যাসেট ক্লাস।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের কমোডিটি ইকোসিস্টেমে অবকাঠামোগত উন্নয়ন সাধনের মাধ্যমে উন্নত বাজারব্যবস্থা গঠন সহজতর হবে। ফলে সুনিয়ন্ত্রিত ও অন্তর্ভুক্তিমূলক কমোডিটি ডেরিভেটিভস মার্কেট গঠনের মাধ্যমে প্রাইস ডিসকভারি ও হেজিং সুবিধার পাশাপাশি সৃষ্টি হবে নতুন বিনিয়োগ, যা প্রাতিষ্ঠানিক ও সাধারণ বিনিয়োগকারীদের জন্য ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে।
শুভেচ্ছা বক্তব্যে মেজর (অব.) এমদাদুল ইসলাম সিএসই প্রতিষ্ঠায় এবং পুঁজিবাজারের উন্নয়নে আমীর খসরুর আগের গতিশীল ভূমিকা স্মরণ করেন।
তিনি বলেন, আজকের মতবিনিময় সভা একধরনের সচেতনতামূলক সভা। সিএসই বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো কমোডিটি এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করছে এবং আপনাদের সবার সহযোগিতার মাধ্যমে আমরা সফল হব বলে আশা করছি।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে এমকেএম মহিউদ্দিন বলেন, সিএসই টিমের প্রস্তুতি এবং দৃঢ়তা প্রশংসনীয়। অর্থাৎ আজকের উপস্থাপনা এবং প্রশ্নোত্তর পর্বে রেসপন্স দেখে আমরা বুঝতে পারছি, এরই মধ্যে সিএসই কমোডিটি এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠার জন্য সব ধরনের প্রস্ততি সম্পন্ন করেছে এবং তাদের আত্মবিশ্বাস দৃশ্যমান।
তিনি বলেন, যেহেতু কমোডিটি এক্সচেঞ্জ ধারণাটি আমাদের সবার কাছে নতুন, তাই সবাইকে অনেক জানতে হবে শিখতে হবে। সেজন্য শুরু করাটা জরুরি।
ঢাকা ব্যাংকের চেয়ারম্যান আব্দুল হাই সরকার বলেন, অনেক আগে একবার উদ্যোগ নেয়া হলেও কমোডিটি মার্কেট স্থাপিত হয়নি। আজকে সিএসইর এই সাহসী উদ্যোগকে আমাদের স্বাগত জানাতে হবে এবং সহযোগিতার হাত বাড়াতে হবে।
তিনি বলেন, এক দিনে আমরা সব বুঝতে পারব না, শুরু হলে ধীরে ধীরে বিষয়গুলো আমরা সবাই বাস্তবিকভাবে বুঝতে পারব। বিশ্বজুড়ে এই মার্কেট বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। আশা করছি, আমাদের দেশেও এই নতুন মার্কেট অর্থনীতির সামগ্রিক উন্নয়নে অবদান রাখবে।
সভায় উপস্থিত অংশীজন ও আলোচকরা কমোডিটি ডেরিভেটিভস এক্সচেঞ্জ প্ল্যাটফর্মের সম্ভাব্য ব্যবসায়িক সুযোগ-সুবিধা বিষয়ে বিশদ আলোচনা করেন। তারা বৈশ্বিক অভিজ্ঞতা, পরিচালন কাঠামো ও অর্থনৈতিক প্রভাব তুলে ধরেন। তারা ডেরিভেটিভ মার্কেট গঠনে স্বচ্ছতা, কাঠামোবদ্ধতা ও ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করেন, যা বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক।
প্রিন্ট করুন







Discussion about this post