বিশ্বজুড়ে চাকরিজীবী মানুষের দিনের বড় একটা সময় কাটে কর্মস্থলে। ফলে সেই কর্মস্থলের পরিবেশ কেমন, কর্তৃপক্ষ কর্মীদের কথা কতটা ভাবছে—এ সবকিছু এখন অনেক গুরুত্বপূর্ণ। মানুষের মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্যের সঙ্গেও কর্মস্থলের পরিবেশের সম্পর্কও রয়েছে। আবার কর্মস্পৃহা তৈরিতেও কর্মস্থলের রয়েছে বড় ভূমিকা। সম্মান, নিরাপত্তা, উন্নতির সুযোগ ও কাজের যথাযথ মূল্যায়ন—চাকরিজীবীরা সাধারণত এমন কর্মস্থলই প্রত্যাশা করেন। এসব মানদণ্ডের ভিত্তিতে প্রতিবছর ফরচুন ম্যাগাজিন বিশ্বের সেরা কর্মস্থলের তালিকা প্রকাশ করে থাকে। মূলত বহুজাতিক কোম্পানিগুলোকে নিয়ে এই তালিকা করা হয়। তারা মূলত বিশ্বের সেরা ২৫ কর্মস্থলের তালিকা করে। এবার বিশ্বের সেরা কর্মস্থল হিসেবে ফরচুনের বৈশ্বিক তালিকায় শীর্ষে রয়েছে সেবা খাতের প্রতিষ্ঠান হিলটন হোটেল।
এবারের তালিকায় ২৫টি সেরা কর্মস্থলের মধ্যে ১৬টিই যুক্তরাষ্ট্রের। এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে তথ্যপ্রযুক্তি খাতের প্রাধান্য বেশি। ২৫টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে আটটিই এই খাতের। এ ছাড়া নির্মাণ, জৈব ওষুধ, উৎপাদন, কুরিয়ার, আর্থিক ও পেশাদার সেবা দেয়া প্রতিষ্ঠানও তালিকায় আছে।
ফরচুন ম্যাগাজিন যে মানদণ্ডের ভিত্তিতে ‘সেরা কর্মস্থল’ নির্বাচন করছে সে মানদণ্ড অনুসৃত হলে আমাদের দেশের কোন কর্মস্থলের অবস্থান কী হবে, তা সহজেই অনুমেয়। বিশ্বের সব দেশের পেশাজীবী ও কর্মজীবীদের সবাই একই ধরনের কর্মপরিবেশ প্রত্যাশা করে। চাকরিজীবীরা সাধারণত সম্মান, নিরাপত্তা, উন্নতির সুযোগ ও কাজের যথাযথ মূল্যায়ন চান।
ফরচুন ম্যাগাজিন সেরা কর্মস্থল নির্বাচনে কর্মীদের মতামতের ভিত্তিতে নিজস্ব ট্রাস্ট ইনডেক্স বা আস্থাসূচক অবস্থান তৈরি করেছে। এর মধ্যে রয়েছে ব্যবস্থাপনার প্রতি কর্মীদের আস্থা, সহকর্মীদের সঙ্গে সম্পর্ক, প্রতিষ্ঠানের প্রতি কর্মীদের আনুগত্য প্রভৃতি। পাশাপাশি নিয়োগকর্তা-ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে সহজে যাওয়া যায় কি না, সততা ও স্বচ্ছতার সঙ্গে কথা বলা ও কাজ করা যায় কি না, নেতৃত্বের কথা ও কাজে মিল আছে কি না, এটি বিবেচনায় নেয়া হয়। সেই সঙ্গে কর্মীরা ব্যক্তিগতভাবে সম্মানিত বোধ করেন কি না এবং তাদের প্রশিক্ষণ ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা কেমন, তাও বিবেচনায় নেয়া হয়। নেতৃত্ব কর্মীদের কৃতজ্ঞতা জানায় কি না এবং কর্মীদের সুস্থতা বজায় রাখার ব্যবস্থা নেয় কি না, বেতন, মুনাফা, পদোন্নতি, স্বীকৃতি ও সুযোগের ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠান কতটা ন্যায়নিষ্ঠ, কর্মীরা কাজের ক্ষেত্রে কেমন স্বাধীনতা ভোগ করেন, সেটিও মূল্যায়ন করা হয়।
ফরচুন ম্যাগাজিন যে পদ্ধতিতে সেরা প্রতিষ্ঠান নির্বাচন করে, সে পদ্ধতি আমাদের দেশে প্রয়োগ করা হলে আমাদের শ্রমিকদের কর্মস্থলে বেঘোরে জীবন দিতে হতো না। সুষ্ঠু কর্মপরিবেশ থাকলে রানা প্লাজা, তাজরীন ফ্যাশন ও স্পেকট্রাম গার্মেন্টসের মতো বেদনাদায়ক ঘটনা ঘটত না। বিদেশি ক্রেতাদের জোট অ্যাকর্ড-আল্যায়েন্স আমাদের পোশাক খাতের কর্মপরিবেশ নিয়ে নির্দেশনা দিতে পারত না। এ খাতের ক্রেতা বিদেশি হওয়ায় আমরা এ খাতের কথা বেশি বলি। কিন্তু জাহাজনির্মাণ শিল্প, অবকাঠামোসহ অন্য খাতের কর্মজীবীরা যেন প্রত্যাশিত পরিবেশে কাজ করতে পারেন, সে পরিবেশ তৈরি করাও প্রয়োজন।
প্রিন্ট করুন









Discussion about this post