Print Date & Time : 4 July 2025 Friday 6:22 pm

কাজে ফিরেছেন এনবিআরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা

নিজস্ব প্রতিবেদক : সব ধরনের আন্দোলন প্রত্যাহার করে কাজে ফিরেছেন আন্দোলনরত জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কর্মকর্তারা। এর মধ্যদিয়ে রাজস্ব আদায়কারী সংস্থাটিতে দুই সপ্তাহেরও বেশি অচলাবস্থার অবসান ঘটল। গতকাল সোমবার এনবিআরের বিভিন্ন শ্রেণির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কাজে যোগ দিয়েছেন। এনবিআরের চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

মো. আবদুর রহমান খান বলেন, গতকাল সকাল থেকেই আমাদের সব দপ্তরে কাজ শুরু হয়েছে। সম্পূর্ণ উপস্থিতি আছে। সব কাস্টমস হাউজ, আইসিডি, ভ্যাট ও কর অফিস সবাই কাজ করছে। যেহেতু আজ ৩০ জুন (অর্থবছরের শেষ দিন), আমাদের একটা বড় ড্রাইভ থাকে। রেভিনিউগুলো যেগুলো পাইপলাইনে আছে, সেগুলো ট্রেজারিতে নিয়ে আসার একটা ক্রমাগত চেষ্টা থাকে। সেই চেষ্টাটা চলছে।

তবে এনবিআরে পুরোপুরি কর্মচাঞ্চল্য ফিরে আসেনি। চট্টগ্রাম বন্দর, বেনাপোল, ঢাকা কাস্টম হাউস, ভোমরা, বুড়িমারী, সোনা মসজিদ, আখাউড়াসহ দেশের সব স্থলবন্দর ও শুল্ক স্টেশনে আমদানি-রপ্তানি সংক্রান্ত শুল্কায়নের কাজ শুরু হয়েছে। সেখানেও শুল্ক-কর কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কাজে যোগ দিয়েছেন বলে জানা গেছে।

আন্দোলনের সঙ্গে সম্পৃক্ত একাধিক কর্মকর্তা জানান, এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের সামনের সারির নেতাদের মধ্যে বদলি আতঙ্ক বিরাজ করছে। অবশ্য দেড় মাস ধরে সব পক্ষের মতামতের ভিত্তিতে এনবিআরের যৌক্তিক সংস্কারে দাবিতে এনবিআরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা আন্দোলন করছেন। এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের ব্যানারে এই আন্দোলন হয়।

গত কয়েক দিনের আন্দোলনে বিশেষ করে গত শনিবার ও রোববারের কমপ্লিট শাটডাউন কর্মসূচিতে দেশের আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য অচল হয়ে পড়ে। আন্দোলন প্রত্যাহারের বিষয়ে গত দুই দিন দেশের শীর্ষ ব্যবসায়ীরা সমঝোতার উদ্যোগ নেন। গত রোববার দিনভর তারা নানা উদ্যোগ নেন। ব্যবসায়ীদের একটি প্রতিনিধিদল অর্থ উপদেষ্টার সঙ্গে সচিবালয়ে বৈঠক করে। এরপর এনবিআরের আন্দোলনরত ব্যক্তিদের সঙ্গে বৈঠক শেষে গতকাল রাতে ব্যবসায়ী ও আন্দোলনকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীরা যৌথ সংবাদ সম্মেলন করেন। সংবাদ সম্মেলনে এনবিআরের কর্মকর্তারা আন্দোলন প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন। এদিকে সরকারও কঠোর অবস্থানে যায়। সরকার এনবিআরের চাকরিকে অত্যাবশ্যক সেবা ঘোষণার পাশাপাশি এনবিআরের ছয় কর্মকর্তার বিরুদ্ধে তদন্তে নামে।

এনবিআর ও অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ (আইআরডি) বিলুপ্ত করে রাজস্ব নীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা বিভাগ নামে দুটি বিভাগ করে গত ১২ মে সরকার অধ্যাদেশ জারি করে। উদ্দেশ্য হলো, করহার নির্ধারণের মতো নীতিগত কাজ এবং কর আদায়ের কাজ পৃথক রাখা। এরপর থেকেই এনবিআরের যৌক্তিক সংস্কারের দাবিতে এনবিআরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা আন্দোলন করছিলেন।

এনবিআরের কর্মকর্তারা দুটি বিভাগ করা নিয়ে তেমন আপত্তি করেননি। তবে তারা মূলত ওই দুই বিভাগে পদায়নের ক্ষেত্রে রাজস্ব খাতের কর্মকর্তাদের অগ্রাধিকার চাইছেন। সরকার উপযুক্ত ব্যক্তিদের নিয়োগের কথা বলছে, যার মাধ্যমে প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের নিয়োগ করা যায়। আন্দোলনকারী ব্যক্তিরা এনবিআরের চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খানের পদত্যাগও দাবি করেছেন।

এদিকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) ছয় শীর্ষ কর্মকর্তার দুর্নীতির অনুসন্ধান করছে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক)। গত রোববার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছেন দুদকের উপপরিচালক ও জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. আকতারুল ইসলাম।

তিনি জানান, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের কিছু অসাধু সদস্য ও কর্মকর্তারা মোটা অঙ্কের ঘুষের বিনিময়ে কর দাতাদের কর ফাঁকি দেয়ার সুযোগ করে দিচ্ছেন। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মালিক ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের কর্মকর্তারা নিজেরা লাভবান হওয়ার জন্য নির্ধারিত পরিমাণ কর আদায় না করে তাদের করের পরিমাণ কমিয়ে দিতেন বলে অভিযোগ রয়েছে দুদকের কাছে।