Print Date & Time : 4 August 2025 Monday 9:23 pm

কুড়িগ্রামে ভুয়া দলিলে গণপূর্তের সরকারি ১১ বাড়ি জবরদখল

 

আমানুর রহমান খোকন, কুড়িগ্রাম : কুড়িগ্রামের গণপূর্ত বিভাগের সরকারি ১১টি বাড়ি জবরদখল করা হয়েছে। একাধিক দলিল রেজিস্ট্রি করে ব্যক্তির কাছে কেনাবেচা করা হয়েছে সরকারি এ লিজ দেয়া বাড়িগুলো। গণপূর্ত বিভাগের কাছে বাড়িগুলো কাগজে-কলমে থাকলেও বাস্তবে কোনো অস্তিত নেই। বর্তমানে সরকারি এসব বাড়ি ভূমিদস্যুদের দখলে থাকলেও উদ্ধারের জন্য জোরালো ভূমিকা রাখছে না গণপূর্ত বিভাগ।

জানা যায়, ১৯৭১-এর মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশে থাকা পরাজিত শক্তি পশ্চিম পাকিস্তানের বিহারি জনগোষ্ঠী তাদের জমি, বাড়ি ও অন্য সম্পদ ছেড়ে রাতারাতি পালিয়ে যায়। সুযোগসন্ধানী মানুষরা তাদের সম্পদ লুটপাট করেন এবং কিছু সম্পদ নিজেরাই দখল করে নেয়। পরে বাংলাদেশ সরকারের গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের পরিত্যক্ত সম্পত্তি অনুবিভাগ ১৯৮৮ সালে অতিরিক্ত সংখ্যায় একটি গেজেট প্রকাশের মাধ্যমে বাড়িগুলো সরকারি সম্পদে পরিণত করা হয়। এ সময় সারাদেশের ন্যায় কুড়িগ্রাম জেলা শহরের জমির দাগ, খতিয়ান ও পরিমাণ উল্লেখ করে মোট ১১টি বাড়ি পরিত্যক্ত ঘোষণা করে গণপূর্ত বিভাগ। পরে আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে স্ব-স্ব দখলকারীদের নামেই এ বাড়িগুলো মাসিক ভাড়া আদায়ের স্বার্থে লিজ দেয়া হয়।

এর মধ্যে কুড়িগ্রাম মৌজার মোল্লা পাড়া গ্রামের বিহারি বদিউজ্জামানের ৮নং ক্রমিকের গণপূর্ত বিভাগের সরকারি বাড়ি নং ৭/১ দাগের ২৪ শতাংশ জমির কোনো অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। গেজেট প্রকাশের সময় বাড়িটি বদিউজ্জামানের ওয়ারিশ দাবিকারী শফিউন্নেসা নামের এক মহিলার অবৈধ দখলে ছিল। গেজেট প্রকাশের পর শফিউন্নেছা কাউকে কিছু না বলেই রাতের আঁধারেই এই বাড়ি ছেড়ে চলে যায়। এরপর রাতারাতি বাড়িটি এবং ২৪ শতাংশ জমি জবরদখলে নিয়ে অবস্থান ও শ্রেণি পরিবর্তন করেন ভূমিদস্যুরা। তবে এর পাশের গেজেটের ৯নং ক্রমিকের পরিত্যক্ত বাড়ির নং ৭/২ নিয়মিত ভাড়া পরিশোধের মাধ্যমে লিজ সূত্রে মনির হোসেনের দখলে আংশিক আছে। গত পাঁচ বছর আগে সেই বাড়ির ১৭ শতাংশ জমিও সন্ত্রাসী কায়দায় অস্ত্রের মুখে দখল করে নেয় ভূমিদস্যুরা।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, ৭/১ ও ৭/২ বাড়ি দুটির ৪৮ শতাংশের মধ্যে ৪১ শতাংশ জমি জবরদখল হলেও গণপূর্ত বিভাগ তা রক্ষা ও উদ্ধারে কোনো ভূমিকা রাখেনি। অপরদিকে, কুড়িগ্রাম পৌরসভা সড়কে সোনাপট্টির গলিতে ১০/এ এবং পুরোনো থানা পাড়া রোডে ১০/বি নং বাড়ি দুটির অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। এই বাড়ি দুটির পূর্ব মালিক ছিলেন হাবিবুল হোসেন ও আবু লাইছ। এই সরকারি বাড়িগুলোর একাধিক দলিল রেজিস্ট্রি করে মালিকানা বদল দেখিয়ে জবরদখল করা হয়েছে। অবশিষ্ট বাকি ৭টি বাড়ির হালনাগাদ কোনো তথ্য নেই স্থানীয় গণপূর্ত অফিসে। বর্তমানে কারা এই বাড়িতে আছেন এবং বাড়িগুলোর অবস্থান কোথায় তাও জানে না।

কুড়িগ্রাম শহরের স্থানীয় বাসিন্দা রহমতুল্লাহ ব্যাপারী ও ইয়াকুব মণ্ডল বলেন, বিহারিদের বাড়িগুলো কোথায় উধাও হয়ে গেল। বাড়ির মালিকানা বদল করলেই সরকারের সম্পদ নিজের হয়ে যায় না। গণপূর্তের অসাধু কর্মকর্তাদের জন্যই সরকারি বাড়িগুলো হাতছাড়া হয়েছে।

এ বিষয়ে গণপূর্ত বিভাগের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মোশাররফ হোসেন বলেন, বাড়ির শ্রেণি ও ধরন পরিবর্তন করায় আমরা বাড়িগুলোর অস্তিত্ব খুঁজে পাচ্ছি না। তবে খুঁজে বের করার চেষ্টা করছি। বাড়িগুলোর লোকেশনে গেলে দলিল মুলে ক্রয়কৃত একাধিক মালিক পাওয়া যাচ্ছে। দু-একটি বাড়ির লিজারকে পাওয়া গেলেও বেশির ভাগ লিজার ও বাড়ির অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়নি।

কুড়িগ্রাম গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল্লা আল ফারুক বলেন, আমরা তদন্ত করে দেখছি বাড়িগুলো কারা দখল করেছেন। যারা সরকারি বাড়ির দলিল রেজিস্ট্রি মূলে কেনাবেচা করেছেন তাদের বিরুদ্ধে নিয়ম অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।