আমানুর রহমান খোকন, কুড়িগ্রাম : আর নয় খোলা স্থানে মলমূত্র ত্যাগ, ঘরে ঘরে তৈরি করে দেয়া হচ্ছে স্বাস্থ্যকর পাকা টুইন পিট ল্যাট্রিন। এবারে কুড়িগ্রাম জেলায় প্রায় ১৭ হাজার হত দরিদ্র পরিবার পেয়েছে সরকারের পক্ষ থেকে বিনামূল্যে পাকা ল্যাট্রিন। এতে জেলার ৭৩ ইউনিয়নের প্রায় সোয়া লাখ মানুষ স্বাস্থ্যকর ল্যাট্রিনের সুফল পেলেও এই জেলার চরাঞ্চলের মানুষের জন্য এই ল্যাট্রিনের চাহিদা রয়েছে আরো অনেক।
জানা যায়, দেশের দশমিক ৯৪ শতাংশ পরিবারের সদস্য খোলা জাযগায় মলত্যাগ করতেন। ২০২২ সালের জরিপ অনুযায়ি দেশের দশমিক ৭৭ শতাংশ মানুষ খোলা জায়গায় মলত্যাগ করেন। এই জরিপে সীমান্তঘেঁষা চরাঞ্চলে ভরপুর কুড়িগ্রাম জেলার অবস্থান সবার ওপরে। বাড়িতে টয়লেট না থাকায় এই জেলার মানুষ মাঠ, বন, খাল, রাস্তা বা অন্যান্য জায়গায় মলত্যাগ করেন। ফলে পরিবেশ মারাত্মকভাবে দূষিত হয়। সেই সঙ্গে বৃদ্ধি পায় নানা রোগ-বালাই। মানুষকে খোলা জায়গায় মলত্যাগের ক্ষতিকর অবস্থা েেক ফিরিয়ে আনতে বাংলাশে সরকার ও বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়নে যৌথ উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
২০২৪-২৫ অর্থবছরে কাজ শুরু করা হয়েছে যা শেষ করা হবে ২০২৫-২৬ অর্থবছরে। মানবসম্পদ, স্যানিটেশন ও স্বাস্থ্যবিধিশীর্ষক প্রকল্পের আওতায় ঘরে ঘরে টুইন পিট ল্যাট্রিন তৈরি করে দেয়ার কাজ দ্রুত এগিয়ে চলছে। এর বাস্তবায়ন করছে স্থানীয় জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগ।
কুড়িগ্রাম জেলার ৭৩টি ইউনিয়নে ২২৯টি করে সর্বমোট ১৬ হাজার ৭১৭টি পাকা ল্যাট্রিন তৈরির কাজ চলমান আছে। এতে ব্যয় হবে ৫৬ কোটি টাকা। জেলার স্বাস্থ্যকর ল্যাট্রিন তৈরিতে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ৭৬ জন স্থানীয় উদ্যোক্তাদের মাধ্যমে সিরামিক, পানি সংযুক্ত মেঝে পাকা টিনশেড ল্যাট্রিনের নির্মাণকাজ সু›রভাবে এগিয়ে যাচ্ছে। সরের উত্তর নওয়াবশ গ্রামের ঘোড়াচালক ইসমাঈল হোসেন বলেন, আগে আমার বাড়িতে কো ল্যাট্রিন ছিল না। আমার বাড়ির সদস্য সংখ্যা ১০ জন। আমরা সবাই খোলা জায়গায় মলমূত্র ত্যাগ করতাম। সরকারিভাবে আমার বাড়িতে ল্যাট্রিন দেয়ায় আর খোলা জায়গায় যেতে হয় না। পাঁচগাছী ইউনিয়নের মাঝের চরের আর্জু বেগম বলেন, আমার স্বামী দিনমজুরের কাজ করেন। বাড়িতে সদস্য সংখ্যা সাতজন। সরকারি ল্যাট্রিন পেয়ে আমরা অনেক আনন্দিত। আমার ছোট ছোট সন্তানরাও এখন স্বাস্থ্যকর টয়লেট ব্যবহার করে। যাত্রাপুর ইউনিয়নের নওয়ানীপাড়া গ্রামের অটো রিকশাচালক সুলতানের স্ত্রী আমিনা বেগম বলেন, আগে আমরা নদীর তীরের খোলা জায়গায় মলমূত্র ত্যাগ করতাম। এখন আমার সব ছোট বাচ্চাটাও টয়লেটে বসে মলত্যাগ করেন। এতে আমাদের সামাজিক মর্যাদাও অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। একই কথা বলেন কাঁঠুরিয়া সোলাইমান মিয়ার স্ত্রী সুমী বেগম। তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রী মৌসুমি আক্তার জানায়, আমি আর বাইরে যাই না, এখন আমি ল্যাট্রিনে যাই। আমি অনেক ভালো আছি, আপনারা সবাই ল্যাট্রিনে যাবেন ভালো থাকবেন।
যাত্রাপুর ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ড সদস্য মো. মাহবুর রহমান বলেন, এই এলাকার অনেক বাড়িতেই স্বাস্থ্যকর টয়লেট ব্যবস্থা ছিল না। সবাই আগে খোলা জায়গায় মলত্যাগ করত। এতে পরিবেশের অনেক ক্ষতি হতো। সরকারি পাকা ল্যাট্রিন পেয়ে সবাই আনন্দিত হয়েছে। আরও বরাদ্দ আাসলে শতভাগ স্যানিটেশন সম্ভব হবে।
ভোগডাঙ্গা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সাইদুর রহমান বলেন, আমার ইউনিয়নে ২২৯টি পরিবার এই প্রকল্পের আওতায় ল্যাট্রিন পেয়েছে। কিছু কাজ শেষ হয়েছে। কিছু ল্যাট্রিনের নির্মাণ কাজ চলমান আছে। বাড়ি বাড়ি এই ল্যাট্রিন করতে পারলে আর কেউ খোলা জায়গায় মলত্যাগ করবে না।
কুড়িগ্রাম জনস্বাস্থ্য বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী হারুনুর রশিদ বলেন, এই প্রকল্পের আওতায় কুড়িগ্রাম জেলার ৭৩ ইউনিয়নে প্রায় ১৭ হাজার পরিবার বিনামূল্যে স্বাস্থ্যকর টুইন পিট ল্যাট্রিনের সুবিধা পাবেন। এই ল্যাট্রিন চরাঞ্চলবান্ধব। সিরামিক বসানো মেঝে পাকা ল্যাট্রিন হওয়ায় বন্যার পানি এর কোনো ক্ষতি করতে পাবে না। যারা এই প্রকল্পের আওতায় ল্যাট্রিন পেয়েছেন তাদের পরিবারের স্বাস্থ্যঝুঁকি কমার পাশাপাশি তাদের সামাজিক মর্যাদাও বেড়েছে। আমরা এই প্রকল্পের উদ্দেশ্য শতভাগ সফল করতে মাঠ পর্যায়ে স্থানীয় উদ্যোক্তাদের কাজের গুণগতমান ঠিকভাবে তদারকি করছি।