শেয়ার বিজ ডেস্ক : আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী বাংলাদেশ ব্যাংক স্বাধীনভাবে কাজের ক্ষেত্রে নানা বাধার শিকার হচ্ছে বলে অভিযোগ তুলেছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তবহবিলের (আইএমএফ) ঢাকায় সফররত মিশনের সদস্যরা। বিশেষ করে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের স্বাধীনতায় অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের (এফআইডি) ‘অযাচিত হস্তক্ষেপ’ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে তারা। আর রাজনৈতিক বিবেচনায় বিভিন্ন ব্যাংকের লাইসেন্স ইস্যু, ব্যাংক দখল করে লুটপাট, ইচ্ছাকৃত খেলাপিকে নীতি সুবিধার আড়ালে অবৈধভাবে সুযোগ প্রদান নিয়ে উষ্মা জানিয়েছে সংস্থাটি। অযাচিত হস্তক্ষেপ বন্ধ করে অর্থব্যবস্থার স্বার্থে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের স্বায়ত্ব শাসন নিশ্চিত করতে হবে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।
আইএমএফের সাথে চলমান এই বৈঠকে উপস্থিত একাধিক কর্মকর্তা জানান, পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের সুবিধাভোগী বিতর্কিত ব্যবসায়ী এস আলম, সালমান এফ রহমান, নজরুল ইসলাম মজুমদারসহ ব্যাংক লুটেরাদের অনিয়ম ছিল ওপেন সিক্রেট। রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে অনেক ব্যবসায়ী ব্যাংকের লাইসেন্স নিয়েছেন। তারা দলীয় বিবেচনায় ঋণ ছাড় এবং খেলাপিদের ঋণ নিয়মিত দেখাত। আর খেলাপিরা অর্থ লুটপাট করে পাচারে মত্ত হয়ে ওঠে। যা ঢাকতে লোক দেখানো পরিদর্শন করে বাংলাদেশ ব্যাংক। এভাবে ব্যাংক খাত খাদের কিনারায় যায়। এসব বিষয় নিয়ে আইএমএফের সদস্যরা প্রশ্নে জর্জরিত করে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তাদের। সেখানে বাংলাদেশ ব্যাংকের স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগ নেই এমন অভিযোগ বারবার উঠে এসেছে। আর সরকারের হয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কার্যক্রমের ওপর অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের হস্তক্ষেপ নিয়ে তুমুল তর্ক-বিতর্ক হয়।
সূত্র জানায়, আইএমএফ প্রতিনিধি দলের ভাষ্য অনুযায়ী, ব্যাংক খাতের ওপর সরাসরি হস্তক্ষেপ করে সরকারের মদদপুষ্ট প্রভাবশালী ব্যবসায়ীরা। আন্তর্জাতিক ব্যবসা করার ক্ষেত্রে ওভার ইনভয়েসিং ও আন্ডার ইনভয়েসিংয়ের মাধ্যমে ৪০০ শতাংশ পর্যন্ত দাম কম-বেশি করা হত।
গত আওয়ামী লীগ সরকারের সময় ২৮ লাখ কোটি টাকা পাচারের সন্ধান পেয়েছে জাতীয় শ্বেতপত্র কমিটির সদস্যরা। আর ২০০৯ সালের ২২ হাজার কোটি টাকার খেলাপি ঋণ প্রায় পৌনে ৭ লাখ কোটি টাকার রেকর্ড সৃষ্টি করেছে। অথচ এতদিন ঋণ গোপন করে তা মাত্র ২ লাখ কোটি টাকা দেখানো হতো। পাচারকে সহায়তা করতে সুদের হার ৯ শতাংশের মধ্যে আটকে রাখা হয়েছে। তখন অসাধু ব্যবসায়ীরা রাজনৈতিক পরিচয়ে নামে-বেনামে ঋণ নিয়ে ডলার কিনে বিদেশে পাচার করে। এতে ২০২১ সালের করোনাকালীন ৪৮ বিলিয়ন ডলার রিজার্ভ নেমে এসেছিল ২০ বিলিয়নের ঘরে। আর দুর্বল ব্যাংকগুলো বিনা জামানতে ঋণ নেয় প্রায় ৭০ হাজার কোটি টাকা। যার বিপরীতে জামানত রাখার পরামর্শ দিয়েছে আইএমএফ সদস্যরা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক আরিফ হোসেন খান বলেন, ‘আইএমএফ মিশন নিয়মিত ভিজিট চলমান রেখেছে। তারা দেশের ঋণে শর্তের বাস্তবায়নের অগ্রগতি জানার চেষ্টা করছে। আমাদের দুই-একটা ইস্যু ছাড়া প্রায় সব সূচকে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছে। মিশন শেষে তারা আনুষ্ঠানিকভাবে সংবাদ সম্মেলনের অগ্রগতি ও পরিদর্শন নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করবে। সেখানে সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংকের মধ্যে একটি সমঝোতা স্মারক চুক্তি স্বাক্ষর হওয়ার কথা রয়েছে।’
বৈঠকে আইএমএফ জানিয়েছে, তাদের ৪৭০ কোটি ডলারের ঋণ কর্মসূচির শর্ত অনুযায়ী, ২০২৬ সালের মধ্যে সরকারি ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণের হার ১০ শতাংশের নিচে নামানোর প্রতিশ্রুতি ছিল। কিন্তু বাস্তবে পরিস্থিতি উল্টো। সরকার পরিবর্তনের পর গোপন করা প্রকৃত তথ্য প্রকাশিত হলে দেখা গেছে, মাত্র এক বছরে খেলাপি ঋণের পরিমাণ প্রায় চার লাখ কোটি টাকা থেকে বেড়ে সাড়ে ছয় লাখ কোটি টাকা হয়েছে। সরকারি ব্যাংকগুলোর খেলাপি হার ৪০ শতাংশ ছাড়িয়েছে, আর বেসরকারি খাতেও ঋণ হার ১০ শতাংশের ওপরে পৌঁছেছে। আর ডলার দর বাজারের ওপর শতভাগ ছেড়ে দেওয়ার নামে বাজারকে নিয়ন্ত্রণ করছে।
এস এস/
প্রিন্ট করুন






Discussion about this post