আলোচিত-সমালোচিত বহু ধাপ বিপণন (এমএলএম) কোম্পানি ডেসটিনির সঙ্গে সম্পৃক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোয় লগ্নি করা অর্থ কি বিনিয়োগকারীরা ফেরত পাবেন- সে সম্ভাবনা কথা প্রশ্ন ঘুরেফিরেই আসছে। প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক রফিকুল আমীন জেলে যাওয়ার পর চাঁদপুরের সংসদ সদস্য শামছুল হক ভূঁইয়া ডেসটিনিতে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে যোগ দেন। তিনি সরকারের বিভিন্ন মহলে যোগাযোগ করেও প্রতিষ্ঠানটি চালু করতে পারেননি।
রফিকুল আমীন কিছুদিন আগে মুক্তি পেয়েছেন। মুক্তির পর ডেসটিনি চালু করার জন্য সরকারের সহায়তা চেয়েছেন। দাবি করেছেন সরকারি সহায়তা পেলে তিনি বিনিয়োগকারীরদের অর্থ ফিরিয়ে দেবেন। ডেসটিনির অঙ্গপ্রতিষ্ঠান ডেসটিনি মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটিতে প্রায় ৯ লাখ গ্রাহকের ১ হাজার ৪০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ আছে। ট্রি প্ল্যান্টেশন কোম্পানিতেও গ্রাহকদের পাওনা আছে ২০০ কোটি টাকার মতো সব মিলিয়ে ডেসটিনির কাছে গ্রাহকদের পাওনা দেড় হাজার কোটি টাকার বেশি। এই অর্থ পরিশোধ করা কোম্পানির জন্য তেমন কোনো বিষয় নয়। কেনানা বর্তমানে ট্রি প্ল্যান্টেশন কোম্পানির ৭ লাখের বেশি বিক্রয়যোগ্য গাছ। আছে এসব গাছ বিক্রি করা গেলে গ্রাহকদের অর্থ ফেরত দেয়া যাবে। এছাড়া মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটির গ্রাহকরা কোম্পানি চালু হলেই তাদের জমানো অর্থ ফেরত পাবেন।
২০০০ সালে ডেসটিনি-২০০০ লিমিটেড নামে এমএলএম কোম্পানি দিয়ে এই গ্রুপের যাত্রা শুরু। মাত্র ১০ বছরের ব্যবধানে আবাসন, বিমান পরিবহন, মিডিয়া, কোল্ডস্টোরেজ, জুটমিল, বনায়নসহ বিভিন্ন খাতে ৩৪টি কোম্পানিতে হাজার হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ হয় ডেসটিনির নামে। কিন্তু গ্রুপের শীর্ষ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে জনগণের অর্থ আত্মসাৎ ও বিদেশে অর্থ পাচারের অভিযোগ ওঠায় সবকিছুই এলোমেলো হয়ে যায়। ডেসটিনি গ্রুপের আবেদনে কিছু প্রতিষ্ঠান, যেমন- বৈশাখী টেলিভিশন, দৈনিক ডেসটিনি, প্রিটিং প্রেস, কয়েকটি ফ্ল্যাট রয়েছে। বিভিন্ন স্থানে থাকা ডেসটিনির সম্পদ হাতছাড়া হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। ডেসটিনি গ্রুপের বড় বিনিয়োগ ট্রি প্ল্যান্টেশনে। এসব বাগানে এখন আর ঠিকমতো পাহারাদার রাখা সম্ভব হচ্ছে না। অনেক জায়গায় বাগানের জমি যাদের থেকে কেনা বা লিজ নেয়া হয়, তারাই দখল করে নিয়েছে বা গাছ কেটে নিচ্ছে। বিভিন্ন ব্যাংকে ডেসটিনি গ্রুপের ৫৩৩টি ব্যাংক হিসাব জব্দ অবস্থায় আছে। সেগুলোয়ও কোটি কোটি টাকা আটকে আছে। বর্তমানে রফিকুল আমীন ও তার ভ্রাতুষ্পুত্র আশরাফুল আমিনের বিরোধ চরমে। অভিযোগ রয়েছে আশরাফুল আমিন একাই ডেসটিনি ডেসটিনি ট্রি প্লান্টেশন থেকে বড় অঙ্কের অর্থ হাতিয়ে নেন বলে অভিযোগ রয়েছে। যদিও গতকাল শেয়ার বিজ-এ সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, ট্রি প্লান্টেশনের গাছ বিক্রি করে টাকা হাতিয়ে নেয়া সুযোগই নেই। এসব অভিযোগ অসত্য।
বিনিয়োগকারীদের ভাষ্য, ডেসটিনি ট্রি প্লান্টেশনের একটি ৩০ কোটি টাকার বাগান মাত্র ১২ কোটিতে বিক্রি করে দেয়া হয়েছে। আর ওই টাকা ভাগাভাগি করে নিয়েছে প্রতারক চক্র। রফিকুল আমীনও সম্প্রতি শেয়ার বিজকে বলেন, ‘জেল থেকে বেরিয়ে অফিসে বসে পরিকল্পনা করে সবকিছু গুছিয়ে নিতে চেয়েছিলাম। নিজের লোকেরাই গাদ্দারি করে আমাকে অফিসের বাইরে রেখেছে।’ চাচা-ভ্রাতুষ্পুত্রের বিরোধ কোনো কারসাজি কিনা, তাও আমরা জানি না। সরকারের উচিত হবে বিনিয়োগকারীদের সুরক্ষা দেয়া, অন্তত তাদের যেন পথে বসতে না হয়।

Discussion about this post