ড. মতিউর রহমান : বাংলাদেশের ক্ষুদ্রঋণ খাত বিশ্বজুড়ে সামাজিক ও অর্থনৈতিক রূপান্তরের এক অনন্য উদাহরণ হিসেবে পরিচিত। এই খাত প্রমাণ করেছে, সুনির্দিষ্ট আর্থিক অন্তর্ভুক্তির মাধ্যমে ব্যাপক উন্নয়ন সাধন করা সম্ভব। ব্র্যাক, গ্রামীণ ব্যাংক, আশা এবং অন্যান্য বেসরকারি ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠানগুলো শুধু আর্থিক সেবাই নয়, বরং সামাজিক ক্ষমতায়ন, দক্ষতা বৃদ্ধি এবং টেকসই জীবিকা তৈরির সুযোগও তৈরি করেছে। গত কয়েক দশক ধরে এসব প্রতিষ্ঠান প্রান্তিক জনগোষ্ঠী, বিশেষ করে নারী ও গ্রামীণ পরিবারগুলোকে ক্ষুদ্র ঋণ, সঞ্চয় ও বিমা পরিষেবার মাধ্যমে আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী করে তুলেছে।
সাম্প্রতিক বছরগুলোয় ডিজিটালাইজেশনের ফলে ক্ষুদ্রঋণ খাতে এক গভীর পরিবর্তন এসেছে। এই পরিবর্তন শুধু প্রযুক্তিগত সীমাবদ্ধতায় আবদ্ধ নয়, এটি সামাজিক সম্পর্ক, ব্যবস্থাপনা দক্ষতা, স্বচ্ছতা, আর্থিক অন্তর্ভুক্তি এবং পরিবেশগত স্থিতিশীলতাকেও নতুন রূপ দিয়েছে। ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রমে মোবাইল ব্যাংকিং, এজেন্ট ব্যাংকিং, ডেটা অ্যানালিটিক্স এবং মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসের (এমএফএস) মতো আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার সেবার মান ও জবাবদিহি বাড়িয়েছে এবং আর্থিক পরিষেবাগুলোকে আরও বেশি মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিয়েছে।
বাংলাদেশে ক্ষুদ্রঋণ খাতে ডিজিটালাইজেশনের প্রভাব বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ পরিসংখ্যানে স্পষ্ট। ২০২৪ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত, দেশের ৩১টি ব্যাংক ১৬,০২১ জন এজেন্টের মাধ্যমে ২১,২৪৮টি আউটলেটে এজেন্ট ব্যাংকিং পরিষেবা চালু করেছে। এই আউটলেটগুলোর মাধ্যমে মোট ২,৪০,৭৮,২৩০টি অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছে, যার মধ্যে ১,১৯,৮৬,৭৫টি অ্যাকাউন্ট নারী গ্রাহকদের এবং ২,০৬,১০,৪০টি অ্যাকাউন্ট গ্রামীণ গ্রাহকদের।
এই পরিসংখ্যান থেকে স্পষ্ট যে, ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মগুলো ভৌগোলিক ও লিঙ্গভিত্তিক বৈষম্য কমাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। শাখা বা অবকাঠামোগত দুর্বলতার কারণে যেসব অঞ্চলে আগে আর্থিক সেবা পৌঁছানো কঠিন ছিল, ডিজিটাল ব্যবস্থার মাধ্যমে সেসব জায়গাতেও এখন আর্থিক অন্তর্ভুক্তি সম্ভব হচ্ছে। ফলে কাগজের মাধ্যমে ঋণ বিতরণ ও পরিশোধের পুরোনো, ধীর এবং ব্যয়বহুল পদ্ধতির অবসান হয়েছে। ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মগুলো দ্রুত, নির্ভরযোগ্য এবং কম খরচে সেবা প্রদান করছে, যা গ্রাহকদের নিজেদের আর্থিক লেনদেন সহজে পরিচালনা করার সুযোগ করে দিয়েছে।
ব্র্যাকের ২০২৪ সালের বার্ষিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, ক্ষুদ্রঋণ বিতরণ এবং গ্রাহক ব্যবস্থাপনায় ডিজিটালাইজেশন এক আমূল পরিবর্তন এনেছে। ওই অর্থ বছরে ৬৯ লাখ গ্রাহক মোট ৫ দশমিক ৮৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ক্ষুদ্রঋণ গ্রহণ করেছেন। মোবাইল অ্যাপ ও এজেন্ট ব্যাংকিং নেটওয়ার্কের মতো ডিজিটাল পদ্ধতি ব্যবহার করে গ্রাহকেরা এখন সহজেই ঋণের কিস্তি পরিশোধ, অর্থ সঞ্চয় এবং দূরবর্তী স্থান থেকে বিমার দাবি জমা দিতে
পারছেন। এই ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মগুলো নতুন ঋণ অনুমোদন ও বিতরণের সময়ও উল্লেখযোগ্যভাবে কমিয়ে এনেছে, যা গ্রাহকদের জন্য দ্রুত ও ঝামেলামুক্ত সেবা নিশ্চিত করেছে।
একইভাবে, বাংলাদেশের আরেকটি শীর্ষস্থানীয় এনজিও-এমএফআই, আশা (অঝঅ) একই সময়ে প্রায় ৩৫ লাখ গ্রাহককে ৪ দশমিক ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ক্ষুদ্রঋণ বিতরণ করেছে। ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে আশা তাদের কার্যক্রমের স্বচ্ছতা বৃদ্ধি করেছে, জালিয়াতি উল্লেখযোগ্যভাবে কমিয়ে এনেছে এবং ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা আরও কার্যকর করেছে।
প্রযুক্তির ব্যবহার ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠানগুলোর কার্যক্রমের পরিধি এবং দক্ষতা বাড়িয়ে দিচ্ছে। ফলে প্রতিষ্ঠানগুলো দ্রুতগতিতে তাদের গ্রাহক সংখ্যা বৃদ্ধি করতে পারছে। একই সঙ্গে তাদের কার্যক্রমের জবাবদিহি ও মানও বজায় রাখতে সক্ষম হচ্ছে। এক্ষেত্রে, মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস (গঋঝ) গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। বিকাশের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে গঋঝ অ্যাকাউন্টের সংখ্যা ছিল ২১ দশমিক ৯২ কোটি। সেটি বেড়ে ২০২৫ সালের জানুয়ারিতে ২৩ দশমিক ৯৩ কোটিতে দাঁড়িয়েছে। এই সময়ের মধ্যে মোট লেনদেন হয়েছে প্রায় ১ দশমিক ৭২ ট্রিলিয়ন টাকা। এটি আগের বছরের তুলনায় ৩২ দশমিক ৫৬ শতাংশ বৃদ্ধি।
এই পরিসংখ্যান থেকে বোঝা যায়, শহর ও গ্রাম উভয় অঞ্চলেই ডিজিটাল লেনদেনের গ্রহণযোগ্যতা ব্যাপকহারে বৃদ্ধি পেয়েছে। ক্ষুদ্রঋণ গ্রহীতা, নারী উদ্যোক্তা এবং ছোট ব্যবসার মালিকরা এখন তাদের দৈনন্দিন লেনদেন পরিচালনা, ঋণ পরিশোধ, সঞ্চয় গ্রহণ এবং জরুরি ঋণের জন্য ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের ওপর অনেক বেশি নির্ভরশীল।
ঐতিহ্যবাহী শাখা নেটওয়ার্কের বাইরে পরিষেবা প্রসারিত করার জন্য, এনজিও-এমএফআইগুলো এখন ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মকে কাজে লাগাচ্ছে। তারা তাদের কার্যক্রমে মোবাইল ওয়ালেট, ডিজিটাল পাসবুক এবং অনলাইন ঋণ ব্যবস্থাপনা ব্যবস্থা যুক্ত করেছে। উদাহরণস্বরূপ প্রত্যন্ত চরাঞ্চল বা বন্যাপ্রবণ জেলাগুলোতে যখন চরম আবহাওয়া দেখা দেয়, তখন এনজিও-এমএফআইগুলো ডিজিটাল সমাধানের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ে। এর মাধ্যমে তারা নিশ্চিত করে যে, প্রতিকূল পরিস্থিতিতেও আর্থিক সহায়তা সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন যাদের, তাদের কাছে পৌঁছানো যায় এবং পরিষেবার ধারাবাহিকতা বজায় থাকে।
ডিজিটালাইজেশনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাবগুলোর মধ্যে একটি হলো নারীর ক্ষমতায়ন। ঐতিহ্যগতভাবে গ্রামীণ বাংলাদেশের নারীরা আর্থিক পরিষেবা পেতে সামাজিক ও লজিস্টিক বাধার সম্মুখীন হতেন। প্রায়শই ঋণ বা সঞ্চয় ব্যবস্থাপনার জন্য তাদের পুরুষ সদস্যদের ওপর নির্ভর করতে হতো। ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মগুলো এই পরিস্থিতি বদলে দিয়েছে।
এখন নারীরা স্বাধীনভাবে নিজেদের অ্যাকাউন্ট পরিচালনা করতে পারছেন, ঋণ পরিশোধ
করতে পারছেন এবং আর্থিক সিদ্ধান্ত নিতে
পারছেন। এই স্বায়ত্তশাসন তাদের শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা, ব্যবসা এবং পারিবারিক ব্যবস্থাপনার ওপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলছে। বাস্তব জীবনের অনেক ঘটনা এর উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।
গ্রামীণ চরাঞ্চলের একজন হাঁস-মুরগি পালনকারী মহিলা, আয়েশা, একসময় কিস্তি পরিশোধের জন্য দিনের পর দিন শাখা অফিসে ঘুরতেন। এখন তিনি মোবাইল ওয়ালেট এবং এজেন্ট নেটওয়ার্কের মাধ্যমে ডিজিটালভাবে পেমেন্ট করেন। এতে তার মূল্যবান সময় বাঁচে, পরিবহন খরচ কমে এবং প্রয়োজনের সময় সহজেই জরুরি ঋণ পাওয়া যায়।
একইভাবে একজন ছোট শহরের দোকান মালিকও এখন প্রতিদিনের লেনদেন করতে, মুনাফা হিসাব করতে এবং দোকান না ছেড়েই বড় ঋণের জন্য আবেদন করতে পারেন। এই উদাহরণগুলো থেকে বোঝা যায়, ডিজিটাল পদ্ধতি শুধু লেনদেন সহজ করে না, বরং মানুষের স্বায়ত্তশাসন, কার্যকারিতা এবং অর্থনৈতিক সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষমতাও বৃদ্ধি করে।
তথ্যভিত্তিক ঋণ ক্ষুদ্রঋণ খাতের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ সুবিধা হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মগুলো ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠানগুলোকে গ্রাহকদের লেনদেনের ইতিহাস, ঋণ পরিশোধের অভ্যাস এবং আয়ের উৎস বিশ্লেষণ করে ব্যক্তিগত ক্রেডিট প্রোফাইল তৈরি করতে সাহায্য করে। এই পদ্ধতি জামানতের ওপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে ঋণ অনুমোদনের প্রক্রিয়াকে দ্রুত ও স্বচ্ছ করে তোলে। ফলে যারা আগে ঋণ পেতে সমস্যায় পড়তেন, তারাও এখন সহজে ঋণ পাচ্ছেন।
এনজিও-এমএফআইগুলো ঝুঁকি ভালোভাবে মূল্যায়ন, ঋণখেলাপি কমানো এবং পোর্টফোলিও অপ্টিমাইজ করার জন্য মেশিন লার্নিং ও ভবিষ্যদ্বাণীমূলক মডেল ব্যবহার করছে। তবে সংবেদনশীল আর্থিক তথ্যের জন্য শক্তিশালী সাইবার নিরাপত্তা, ডেটা গোপনীয়তা নীতি এবং গ্রাহকদের সচেতনতা বৃদ্ধি করা জরুরি। কারণ দুর্বল জনগোষ্ঠী প্রতারণা, ফিশিং বা সিস্টেমের ত্রুটির কারণে ক্ষতির শিকার হতে পারে, যা তাদের আর্থিক স্থিতিশীলতা ও প্রতিষ্ঠানের ওপর আস্থা নষ্ট করতে পারে।
ডিজিটালাইজেশনের কারণে অপারেশনাল দক্ষতা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। মাঠ পর্যায়ের কর্মীরা এখন টাকা সংগ্রহের জন্য কম সময় ব্যয় করেন এবং ক্লায়েন্টদের প্রশিক্ষণ, আর্থিক সাক্ষরতা কর্মসূচি পরিচালনা, এবং সমস্যা সমাধানে বেশি
মনোযোগ দিতে পারছেন। এনজিও-এমএফআইগুলো তাদের মাঠ পর্যায়ের কার্যক্রমে ডিজিটাল পদ্ধতি
যুক্ত করেছে। তারা এখন ঋণ পরিশোধ ট্র্যাক
করতে, গ্রাহকের তথ্য হালনাগাদ করতে এবং স্বয়ংক্রিয় প্রতিবেদন তৈরির জন্য মোবাইল ডিভাইস ব্যবহার করছে।
প্রযুক্তিগত এই পরিবর্তন ক্ষুদ্রঋণ খাতে কর্মসংস্থানের ওপর প্রভাব ফেলবে। ঐতিহ্যবাহী পদের সংখ্যা কমলেও, ডেটা বিশ্লেষক, আইটি সহায়তা কর্মী, সাইবার নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ এবং ডিজিটাল প্রশিক্ষকের মতো দক্ষ কর্মীদের চাহিদা বাড়ছে। এই কারণে একদিকে যেমন কর্মীদের নতুন করে প্রশিক্ষণ দেয়ার প্রয়োজন রয়েছে, তেমনি অন্যদিকে তাদের সামাজিক সুরক্ষা নিশ্চিত করারও চ্যালেঞ্জ রয়েছে।
ক্ষুদ্রঋণ ডিজিটালাইজেশনের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো পরিবেশগত স্থায়িত্ব। এর মাধ্যমে কাগজের ব্যবহার এবং যাতায়াত কমে, যা কার্বন নির্গমন হ্রাস করতে সহায়তা করে। এছাড়াও ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মগুলো পরিবেশবান্ধব প্রকল্পগুলোতে অর্থায়ন সহজ করেছে।
সৌর বিদ্যুতের ব্যবস্থা, জ্বালানি সাশ্রয়ী চুলা এবং জলবায়ু-সহনশীল কৃষি সরঞ্জামের জন্য ক্ষুদ্রঋণ ও অনুদান এখন ডিজিটালভাবে বিতরণ ও পর্যবেক্ষণ করা সম্ভব, যা জবাবদিহিতা নিশ্চিত করে। এনজিও-এমএফআইগুলো ডিজিটাল পদ্ধতি ব্যবহার করে গ্রামীণ ও শহুরে অঞ্চলে জ্বালানির সহজলভ্যতা ও স্থিতিস্থাপকতা বাড়াতে পরিবেশবান্ধব আর্থিক উদ্যোগ প্রসারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।
ডিজিটাল ক্ষেত্রে সাফল্যের পাশাপাশি কিছু চ্যালেঞ্জও বিদ্যমান। এর মধ্যে রয়েছে ডিজিটাল সাক্ষরতার অভাব, যা বয়স্ক, কম শিক্ষিত বা প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষকে স্মার্টফোন, অ্যাপ বা এজেন্ট নেটওয়ার্ক ব্যবহারে সমস্যার সৃষ্টি করছে। এছাড়া ইন্টারনেট সংযোগ, নেটওয়ার্কের নির্ভরযোগ্যতা এবং বিদ্যুতের অভাব নির্দিষ্ট কিছু অঞ্চলে ডিজিটাল অংশগ্রহণকে সীমিত করছে।
নিরাপত্তার ঝুঁকিও একটি বড় চ্যালেঞ্জ, যার জন্য শক্তিশালী সাইবার নিরাপত্তা ব্যবস্থা, নিয়ন্ত্রক তদারকি এবং গ্রাহকদের সচেতন করার জন্য নিয়মিত প্রশিক্ষণের প্রয়োজন। নতুন ধরনের বৈষম্য প্রতিরোধে এমন নীতি প্রণয়ন করা উচিত, যাতে ডিজিটালাইজেশন ঐতিহ্যবাহী সহায়তা ব্যবস্থার পরিপূরক হিসেবে কাজ করে, প্রতিস্থাপন হিসেবে নয়। এই চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলায় এনজিও-এমএফআইগুলো গ্রহণকে সহজ করার জন্য ব্যাপক প্রশিক্ষণ কর্মসূচি, কমিউনিটি ওয়ার্কশপ এবং ব্যবহারকারী-বান্ধব ইন্টারফেস তৈরি করছে।
ডিজিটাল ক্ষুদ্রঋণ বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ সম্ভাবনার এক নতুন দিগন্ত খুলে দিয়েছে। সরকারি, বেসরকারি এবং উন্নয়ন অংশীদারদের মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতার মাধ্যমে এই খাত আরও প্রসারিত হতে পারে। এক্ষেত্রে ডিজিটাল ব্যবস্থার প্রসার, গ্রাহকদের তথ্য সুরক্ষা এবং দক্ষতা বৃদ্ধিতে সহায়ক নীতিগুলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
ডিজিটাল ক্ষুদ্রঋণের প্রসারে দারিদ্র্য হ্রাস, নারীর ক্ষমতায়ন, আর্থিক স্থিতিশীলতা বৃদ্ধি এবং শহর ও গ্রামের উদ্যোক্তা তৈরিতে ইতিবাচক প্রভাব দেখা যেতে পারে। এমনকি জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায়ও ডিজিটাল সরঞ্জামগুলোর সমন্বিত ব্যবহার পরিবেশগত স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে পারে। সব মিলিয়ে, ডিজিটাল ক্ষুদ্রঋণ শুধু অর্থনৈতিক উন্নয়নের একটি মাধ্যম নয়, বরং সামাজিক এবং পরিবেশগত স্থিতিস্থাপকতার জন্যও একটি গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার হিসেবে কাজ করতে পারে।
বাংলাদেশের ক্ষুদ্রঋণ খাতে ডিজিটালাইজেশন কার্যক্রম, সামাজিক প্রভাব এবং স্থায়িত্বের ক্ষেত্রে বৈপ্লবিক পরিবর্তন এনেছে। ব্র্যাক, গ্রামীণ ব্যাংক, আশা এবং অন্যান্য এনজিও-এমএফআইগুলো মোবাইল ব্যাংকিং, এজেন্ট নেটওয়ার্ক এবং ডেটা অ্যানালিটিক্স ব্যবহার করে আর্থিক পরিষেবাগুলোকে আরও দ্রুত, স্বচ্ছ এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক করেছে। এই রূপান্তরের বাস্তব ফল হলো নারীর ক্ষমতায়ন, আর্থিক অন্তর্ভুক্তি, পরিচালন দক্ষতা এবং পরিবেশগত সুবিধা বৃদ্ধি।
যদিও ডিজিটাল সাক্ষরতা, সাইবার নিরাপত্তা এবং সবার জন্য সমান সুযোগের মতো কিছু চ্যালেঞ্জ এখনও রয়েছে, তবুও চলমান উদ্ভাবন, নীতি সহায়তা এবং উপযুক্ত প্রশিক্ষণের মাধ্যমে এই ঝুঁকিগুলো মোকাবিলা করা সম্ভব। সঠিকভাবে পরিচালনা করা গেলে, ডিজিটাল ক্ষুদ্রঋণ আগামী দশকগুলোতেও বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক পরিবর্তনে বড় ভূমিকা রাখবে এবং মানুষের ক্ষমতায়ন, অন্তর্ভুক্তি ও স্থিতিস্থাপকতা বাড়াতে সহায়তা করবে।
চলমান ডিজিটাল বিবর্তন থেকে উন্নয়ন অনুশীলনকারী এবং নীতিনির্ধারকদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা হলো: প্রযুক্তি কোনো লক্ষ্য নয়, বরং মানব সক্ষমতা এবং সামাজিক অন্তর্ভুক্তি বাড়ানোর একটি মাধ্যম। ডিজিটালাইজেশনের প্রসার বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে, বাংলাদেশের এনজিও-এমএফআইগুলো ডিজিটাল বৈষম্য দূর করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।
তারা সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর জন্য প্রযুক্তিগত উদ্ভাবনকে আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে রূপান্তরিত করছে। অন্তর্ভুক্তিমূলক কৌশল এবং ডিজিটাল পদ্ধতিগুলোকে একসঙ্গে কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশের ক্ষুদ্রঋণ খাত ভবিষ্যতে ন্যায়সঙ্গত প্রবৃদ্ধি, টেকসই উন্নয়ন এবং সামগ্রিক সামাজিক পরিবর্তনের জন্য একটি মডেল হিসেবে কাজ করতে পারে।
গবেষক ও উন্নয়নকর্মী

Discussion about this post