নিজস্ব প্রতিবেদক : এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার বিদেশে চিকিৎসা নেয়ার বিষয়টি এখনও স্থির হয়নি। তার শারীরিক অবস্থার ওপর সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছে মেডিকেল বোর্ড। চিকিৎসকরা যখন নিশ্চিত করবেন যে, তাকে নিরাপদে স্থানান্তর করা যাবে তখনই বিদেশে নেয়ার সিদ্ধান্ত হবে। গতকাল শনিবার বিকেলে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা নিয়ে ব্রিফিংয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন এসব কথা বলেন।
জাহিদ হোসেন জানান, দেশনেত্রীর চিকিৎসায় কোনো কমতি রাখা হবে না। তিনি বলেন, ‘এয়ার অ্যাম্বুলেন্স প্রস্তুত আছে। তবে শারীরিক অবস্থা বিবেচনা করে বিদেশে নেয়ার সিদ্ধান্ত জানানো হবে।’
বিদেশে নিতে বিলম্বের মূল কারণ হিসেবে তিনি উল্লেখ করেন, কাতারের আমিরের উদ্যোগে পাঠানো এয়ার অ্যাম্বুলেন্সের কারিগরি ত্রুটি, যা সময়মতো আসেনি। এছাড়া মেডিকেল বোর্ড জরুরি সভা করে সিদ্ধান্ত নিয়েছিল যে, উনাকে ফ্লাই করানো ওই মুহূর্তে নিরাপদ নয়।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির এ সদস্য জানান, বিদেশে নেয়ার সময় নির্ধারণ ভবিষ্যতে তার শারীরিক অবস্থার ওপরই নির্ভর করবে। চিকিৎসায় সর্বোচ্চ প্রাধান্য ও সমন্বয় নিশ্চিত করতে দেশি ও আন্তর্জাতিকভাবে বহু বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক নিয়োজিত আছেন। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে যুক্ত রয়েছেন লন্ডনের জন পেট্রিক কেনেডি, জেনিফার ক্রস প্রফেসর গোলস্টন, প্রফেসর ডক্টর রিচার্ড, শাকিল ফরিদ ও প্রফেসর গার্বি এবং যুক্তরাষ্ট্রের প্রফেসর হাবিবুর রহমান লুলু, প্রফেসর ডক্টর জন হ্যাবিল্টন, প্রফেসর ডক্টর হামিদরাও, প্রফেসর ডক্টর রফিকউদ্দিন আহমেদ, প্রফেসর ডক্টর জর্জিস।
আশা প্রকাশ করে ডা. জাহিদ বলেন, ‘আল্লাহর রহমত ও সকলের দোয়ায় বেগম খালেদা জিয়া সুস্থ হবেন।’ খালেদা জিয়া এর আগেও আরও খারাপ অবস্থা থেকে সুস্থ হয়ে ফিরেছেন। তাই এবারও তিনি পুরোপুরি সুস্থ হয়ে ফিরবেন, এমনটাই আশা তার। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানও চিকিৎসকদের পরামর্শ মেনে সিদ্ধান্ত নেয়ার কথা বলেছেন বলে জানান জাহিদ হোসেন।
ডা. জাহিদ হোসেন অনুরোধ করেন, ‘দেশনেত্রীর স্বাস্থ্য নিয়ে গুজব ছড়ানো থেকে বিরত থাকুন। শুধু সঠিক তথ্যই প্রচার করা উচিত।’ খালেদা জিয়ার চিকিৎসা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিভিন্ন গুজব ছড়ানো হচ্ছে অভিযোগ করে জাহিদ হোসেন বলেন, ‘দয়া করে যেটা ফ্যাক্ট, সেটির বাইরে গুজব ছড়িয়ে কাউকে বিভ্রান্ত করবেন না।’
১৪ দিন ধরে বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। গত ২৩ নভেম্বর রাতে শ্বাসকষ্ট দেখা দিলে খালেদা জিয়াকে এভারকেয়ার হাসপাতালে নেয়া হয়। অধ্যাপক শাহাবুদ্দিন তালুকদারের নেতৃত্বে দেশি-বিদেশি বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে গঠিত মেডিকেল বোর্ডের অধীনে খালেদা জিয়ার চিকিৎসা কার্যক্রম চলছে।
এদিকে বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে লন্ডনে নেয়ার জন্য এয়ার অ্যাম্বুল্যান্সের ফ্লাইটটিকে ‘ভিভিআইপি’ উল্লেখ করে শিডিউল অনুমোদন করেছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। ইতোমধ্যে ফ্লাইট অবতরণের ক্লিয়ারেন্সও দিয়েছে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ। বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) দায়িত্বশীল সূত্র ঢাকা পোস্টকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।
সূত্র জানায়, শুক্রবার রাতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের চূড়ান্ত অনুমোদন পাওয়ার পর বেবিচকের ফ্লাইট সেফটি রেগুলেশন (এফএসআর) বিভাগ প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করেছে। পুরো প্রক্রিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে সক্রিয় হওয়ায় যেকোনো সময় ‘অ্যাম্বুলেন্স বিমান’ ঢাকায় অবতরণ করতে পারে বলে জানা গেছে।
সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানিয়েছে, প্রথমে কাতার থেকে একটি বিশেষ এয়ার অ্যাম্বুলেন্স আসার কথা থাকলেও নির্ধারিত বিমানে প্রযুক্তিগত সমস্যার কারণে সেটি বাতিল হয়। পরে কাতার সরকারের সহায়তায় জার্মানি থেকে অন্য একটি এয়ার অ্যাম্বুলেন্সের ব্যবস্থা করা হয়েছে। নতুন বিমানটির ক্লিয়ারেন্স-সংক্রান্ত নথি ইতোমধ্যে সরকারি সংস্থাগুলোর হাতে পৌঁছেছে।
শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ভিভিআইপি মুভমেন্ট হিসেবে বিবেচনায় নিয়ে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সের ল্যান্ডিং থেকে টেকঅফ পর্যন্ত সব ধরনের নিরাপত্তা ও অপারেশনাল প্রস্তুতি রাখা হয়েছে। প্রয়োজনীয় রুট ও অবতরণের সময় চূড়ান্ত নিশ্চিতকরণ পাওয়ামাত্র সংশ্লিষ্ট ইউনিটগুলো সক্রিয় হয়ে উঠবে।
অন্যদিকে গতকাল বিএনপি চেয়ারপারসনের একান্ত সচিব এ বি এম আব্দুস সাত্তার ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘ম্যাডামের লন্ডন যাত্রা পিছিয়েছে। এই মুহূর্তে নতুন করে কোনো তারিখ বলতে পারছি না। এয়ার অ্যাম্বুলেন্স আসার পর যেকোনো দিন উনাকে নেওয়া হবে।’
বিএনপি চেয়ারপারসনের একজন চিকিৎসক বলেন, ‘ম্যাডামের শারীরিক অবস্থা গত কয়েক দিন একই জায়গায় আছে। এয়ার অ্যাম্বুলেন্স দেরিতে আসার পাশাপাশি ম্যাডামের শারীরিক অবস্থা ফ্লাই করার জন্য কতটা উপযুক্ত সেটিও বিবেচনায় নিতে হচ্ছে।’
বিএনপির একটি সূত্রে জানা গেছে, খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য লন্ডনে নিতে কাতারের ব্যবস্থাপনায় নতুন করে যে এয়ার অ্যাম্বুলেন্স আসার কথা, সেটি গতকাল ঢাকায় অবতরণের কথা থাকলেও সময়সূচি পুনঃনির্ধারণ করে ৯ ডিসেম্বর করা হয়েছে। সেটি ঢাকা থেকে ১০ ডিসেম্বর ছেড়ে যাওয়ার প্রাথমিক সময়সূচি নির্ধারণ করা হয়েছে।
প্রিন্ট করুন







Discussion about this post