Print Date & Time : 20 November 2025 Thursday 4:43 am

খেলাপি ঋণ অবলোপনের শর্ত শিথিল

নিজস্ব প্রতিবেদক : বাংলাদেশ ব্যাংক খেলাপি ঋণ অবলোপনের সময়সীমার নিয়ম তুলে দিয়েছে। এখন থেকে কোনো ঋণ যদি ‘মন্দ’ বা ‘ক্ষতিকর’ শ্রেণিতে পড়ে, তাহলে সঙ্গে সঙ্গেই তা হিসাব থেকে বাদ দেয়া যাবে। গতকাল বুধবার এ-সংক্রান্ত একটি সার্কুলার জারি করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

বাংলাদেশ ব্যাংক জানিয়েছে, বহুদিন ধরে ঝুলে থাকা পুরোনো শ্রেণিকৃত ঋণগুলোকে অবলোপনে অগ্রাধিকার দিতে হবে। তবে অবলোপনের আগে সংশ্লিষ্ট ঋণগ্রহীতাকে কমপক্ষে ১০ কর্মদিবস আগে নোটিশ দিয়ে বিষয়টি জানানো বাধ্যতামূলক।

নিয়ন্ত্রক সংস্থার মতে, এই পদক্ষেপে ব্যাংকগুলোর আর্থিক হিসাব আরও বাস্তবসম্মত হবে এবং দীর্ঘমেয়াদি ঝুঁকি ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা বাড়বে।

নতুন নির্দেশনার ফলে আগের শর্ত ‘যে কোনো ঋণকে টানা দুই বছর মন্দ বা ক্ষতিজনক অবস্থায় থাকতে হবে, তবেই অবলোপন করা যাবে’Ñএই বাধ্যবাধকতা বাতিল করা হয়েছে। নির্দেশনা জারি হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই তা কার্যকর হয়েছে।

ব্যাংক যে ঋণ বিতরণ করে তার বেশির ভাগই আসে আমানতকারীদের অর্থ থেকে। তাই তাদের অর্থ যেন ঝুঁকির মুখে না পড়ে, সেজন্য বাংলাদেশ ব্যাংক বিভিন্ন নিয়ম-কানুন প্রয়োগ করে থাকে। এর একটি হলো প্রভিশন সংরক্ষণ।

নিয়ম অনুযায়ী, নিয়মিত ঋণের বিপরীতে দশমিক ২৫ থেকে ৫ শতাংশ পর্যন্ত নিম্নমানের ঋণের ক্ষেত্রে ২০ শতাংশ, সন্দেহজনক ঋণের জন্য ৫০ শতাংশ এবং মন্দ ঋণের ক্ষেত্রে ১০০ শতাংশ প্রভিশন রাখতে হয়। এই প্রভিশনের অর্থ ব্যাংককে তাদের আয় খাত থেকেই জোগান দিতে হয়।

যখন খেলাপি ঋণ বাড়ে, কিন্তু ব্যাংকের আয় বাড়ে না, তখন প্রভিশন ঘাটতি দেখা দেয়। ব্যাংক কোম্পানি আইন অনুযায়ী, কোনো ব্যাংকের প্রভিশন ঘাটতি থাকলে তারা শেয়ারহোল্ডারদের লভ্যাংশ ঘোষণা করতে পারে না।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, সর্বশেষ তথ্যে খেলাপি ঋণের অঙ্ক ছাড়িয়েছে ছয় লাখ ৬৭ হাজার কোটি টাকা বা মোট ঋণের ৩৩ শতাংশ। আর ঋণ অবলোপনসহ এই খেলাপি ঋণের মোট অঙ্কটা আরও বড়। সাত লাখ ৩১ হাজার ৬৫৬ কোটি টাকা। ব্যাংকাররা বলছেন, বছরের পর বছর রাজনৈতিক প্রভাবশালী গোষ্ঠী ব্যাংক থেকে লাখ লাখ কোটি টাকা ঋণ তুললেও সেগুলোকে ইচ্ছাকৃতভাবে খেলাপি দেখানো হয়নি। এটিই এখন বের হচ্ছে।

২০২৫ সালের জুন শেষে মোট ব্যাংকঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২০ লাখ ৪৪ হাজার ৩৯৬ কোটি টাকা। মাত্র তিন মাসে খেলাপি ঋণ বেড়েছে দুই লাখ ৪৬ হাজার ৭৮১ কোটি টাকা। এক বছরের ব্যবধানে এই ঋণের পরিমাণ বেড়েছে চার লাখ ৫৫ হাজার ৭২৪ কোটি টাকা। ২০২৪ সালের জুনে খেলাপি ঋণের অঙ্ক ছিল দুই লাখ ১১ হাজার ৩৯১ কোটি টাকা। মাত্র এক বছরের মধ্যে খেলাপির পরিমাণ তিনগুণ বেড়েছে।