Print Date & Time : 11 August 2025 Monday 7:01 pm

গাজী গ্রুপ থেকে রবিনটেক্সের হাতে যমুনা ব্যাংক

নুরুন্নাহার চৌধুরী কলি : রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর যমুনা ব্যাংক পিএলসির পরিচালনায় এসেছে নতুন নেতৃত্ব। বর্তমানে গাজী গ্রুপের হাত থেকে ব্যাংকটির নেতৃত্ব এসেছে রবিনটেক্স গ্রুপের হাতে। ব্যাংকটির চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন রবিন রাজন সাখাওয়াত। ২০২৪ সালের অক্টোবর মাসে অনুষ্ঠিত পর্ষদ সভায় তিনি চেয়ারম্যান পদে নির্বাচিত হন।

জানা গেছে, রবিন পোশাক ও বস্ত্র খাতের সফল ব্যবসায়ীদের পথিকৃৎ আবু খায়ের মোহাম্মদ সাখাওয়াতের জ্যেষ্ঠ পুত্র।

২০০৯ সালে তিনি ফ্রান্সের গ্যথে ইউনিভার্সিটি ফ্রাঙ্কফুট থেকে ফাইন্যান্স ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ব্যাচেলর ডিগ্রি অর্জন করেন। দেশে ফিরে তিনি জার্মানির যৌথ উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত নিট পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান রবিনটেক্স গ্রুপের পরিচালক হিসেবে কাজ শুরু করেন।

ওই সময় তিনি রবিনটেক্সে অভিনবত্ব আনা, উৎপাদন বৃদ্ধি করা এবং গুণগত মান বৃদ্ধির দিকে নজর দেন।

বর্তমানে তিনি জার্মান-বাংলা কেমিক্যাল লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবেও কাজ করছেন। তিনি কম্পটেক্স (বাংলাদেশ) লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবেও কাজ করছেন।

২০২১-২২ অর্থবছরে রবিন সাখাওয়াত ৫ম শীর্ষ তরুণ করদাতা (অনূর্ধ্ব ৪০ বছর) হিসেবে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সম্মাননা পান। তিনি বর্তমানে ব্যাংকিং, লজিস্টিকস এবং আবাসন ব্যবসাসহ বিভিন্ন ধরনের ব্যবসার সঙ্গে জড়িত রয়েছেন।

ব্যাংকটির পর্ষদে তার সঙ্গে রয়েছেন পরিচালকবৃন্দÑইঞ্জিনিয়ার এ.কে.এম. মোশাররফ হোসেন, ইঞ্জিনিয়ার মো. আতীকুর রহমান, আল-হাজ নূর মোহাম্মদ, মো. সাইদুল ইসলাম, রেদওয়ান-উল করিম আনসারি এবং মো. বেলাল হোসেন।

ব্যবস্থাপনা পর্যায়ে সাম্প্রতিক সময়ে দুটি গুরুত্বপূর্ণ পদোন্নতি হয়েছে। মো. শাহিদুল ইসলাম উপব্যবস্থাপনা পরিচালক (ডিএমডি) পদে উন্নীত পেয়েছেন গত ২৮ এপ্রিল। এছাড়া মো. জাহাঙ্গীর আলম ১ জুলাই থেকে ডিএমডি হিসেবে যোগ দিয়েছেন।

পর্ষদের নেতৃত্বে এবং শীর্ষ পর্যায়ের এ পরিবর্তনগুলো ব্যাংকের নীতি, কৌশল ও সেবায় নতুন গতি সঞ্চারের প্রত্যাশা তৈরি করেছে।

বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে সাবেক মন্ত্রী মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম ও গাজী গোলাম দস্তগীরের দখলে ছিল যমুনা ব্যাংক।

২০২১ সালে বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী ছেলে গাজী গোলাম আশরিয়া যমুনা ব্যাংকের চেয়ারম্যান হন। তিনি গাজী গ্রুপ ক্রিকেটার, রূপগঞ্জ টাইগার্স, গাজী টায়ার ক্রিকেট একাডেমির সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। তার বড় ভাই গাজী গোলাম মর্তুজা যমুনা ব্যাংকের একজন উদ্যোক্তা পরিচালক ছিলেন।

ওই সময়ে যমুনা ব্যাংক থেকে আইটি সামগ্রী সরবরাহের নামে বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাতের অভিযোগের তদন্তে নেমেছিল দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

দুদক সূত্রে জানা যায়, তাজুল ইসলামের ছেলে ও ব্যাংক চেয়ারম্যান মো. সাইদুল ইসলাম ২০২৩ সালের আগস্ট মাসে বোর্ড মিটিংয়ে ১৫ কোটি টাকা মূল্যের হার্ডওয়ার সামগ্রী ৮০-৯০ কোটি টাকা জোরপূর্বক চেয়ারম্যান হিসেবে প্রভাব খাটিয়ে আইটির হার্ডওয়্যার ও অন্যান্য সরঞ্জামাদি ক্রয় দেখিয়ে এই টাকা আত্মসাৎ করেন। আর তার এ কাজে সার্বিক সহযোগিতা করেছে সাবেক মন্ত্রী গাজী গোলাম দস্তগীর ও তার ছেলে মর্তুজা এবং সেই সঙ্গে ছিল পরিচালক রেদোয়ান করিম আনসারী, পরিচালক রবিন রাজন সাখাওয়াত আইটি হেড জাহিদ।

এছাড়া ব্যাংকের বিভিন্ন খাতে শতকোটি টাকার বেশি আত্মসাৎ করে ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান সাইদুল ইসলাম বিদেশে পলাতক রয়েছেন। তিনি তার বাবার রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে অনিয়ম ও দুর্নীতি করে দেশে-বিদেশে বিপুল পরিমাণ অবৈধ সম্পদের পাহাড় গড়েছেন।

সূত্রে জানা গেছে, যমুনা ব্যাংকের খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৯০৬ কোটি টাকা; খেলাপির হার ৫ শতাংশ। যমুনা ব্যাংকের বিনিয়োগ বেড়েছে ৫৬ শতাংশ। পরিচালন মুনাফা বেড়েছে ১৭ শতংশ। আর আমানত বেড়েছে ২৩ শতাংশ এবং গ্রাহক ও আমানতকারীর সংখ্যা ১৩ শতাংশ বেড়েছে। চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত ব্যাংকটির কাছে জমা ছিল গ্রাহকদের ৩২ হাজার ৭৮৩ কোটি টাকার আমানত। একই সময়ে যমুনা ব্যাংক ১৭ হাজার ৬৪৬ কোটি টাকার ঋণ বিতরণ করেছে। আর সরকারি ট্রেজারি বিল-বন্ডে বিনিয়োগ ছিল ১৪ হাজার ৮৭২ কোটি টাকা।

যমুনা ব্যাংক প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ছিলেন মরহুম আলহাজ এম. এ. খায়ের। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএসসি পাস করেন। একজন সফল ব্যবসায়ী এবং শিল্পপতি ছিলেন। তিনি মেসার্স গ্লোব ইন্ডাস্ট্রিয়াল এন্টারপ্রাইজ লিমিটেড, ইস্ট এশিয়া কোম্পানি লিমিটেড এবং রিও মুভিজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ছিলেন। তিনি একজন সমাজসেবক ছিলেন এবং গোপালগঞ্জ জেলা সমিতির সভাপতি ছিলেন।

এম এ খায়ের ২০০১ সালের ২ এপ্রিল থেকে ২০০২ সালের ২৬ এপ্রিল পর্যন্ত ব্যাংকের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়ি?ত্ব পালন করেন। পরবর্তীতে এই ব্যাংকের পর্ষদে নেতৃত্ব দেন নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের ব্যবসায়ী গাজী গোলাম দস্তগীর ও তার পরিবার।

সার্বিক বিষয়ে কথা বলতে যমুনা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মির্জা ইলিয়াস উদ্দিন আহমেদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে মোবাইল ফোনটি বন্ধ পাওয়া যাব।