‘তীব্র গ্যাস সংকট, নাকাল নগরবাসী’ শীর্ষক যে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে গতকালের শেয়ার বিজে, তাতে রাজধানীবাসীর দুর্ভোগের কথা জেনেছেন পাঠক। প্রতিবেদনের ভাষ্য: সপ্তাহখানেক ধরে টানা গ্যাস সংকট চলছে রাজধানীর বেশ কিছু এলাকায়। ঢাকার আশপাশের জেলাগুলোর মধ্যে নারায়ণগঞ্জ, টঙ্গী ও গাজীপুরেও বাসাবাড়িতে গ্যাসের তীব্র সংকট চলছে। সারা দিনে একবার গ্যাস আসছে না, হাঁড়িতে চড়ছে না চাল-ডাল। অনেকেই রেস্টুরেন্টের খাবার কিনে খেতে বাধ্য হচ্ছেন। কেউবা অপেক্ষা করছেন গভীর রাত পর্যন্তÑকখন আসবে গ্যাস। আবার গ্যাসের অভাবে বাসাবাড়ির মতো বাণিজ্যিক কার্যক্রমও স্থবির হয়ে পড়েছে। কোনো কোনো কারখানায় উৎপাদন প্রায় বন্ধ, কোথাও কমেছে বা স্থগিত করা হয়েছে।
গ্যাসসংকট রাজধানী ঢাকার একটি নৈমিত্তিক ঘটনা। পুরো বছরই নগরবাসী এই ভোগান্তিতে আছে। গ্যাসের চাপ অনেকে ইট বসিয়ে রান্নাজুড়ে দিচ্ছে। কেউবা ঝুঁকিপূর্ণ বৈদ্যুতিক চুলা ব্যবহার করছে। কেরোসিনের চুলাও ব্যবহƒত হচ্ছে। লাইনের গ্যাসের সমস্যার কারণে অনেকে এরই মধ্যে সিলিন্ডার গ্যাস সংগ্রহ করে নিচ্ছে। তাছাড়া হোটেলনির্ভরশীলতাও বেড়ে যাচ্ছে।
অসহনীয় এ গ্যাসসংকটে যেমন জনজীবন ব্যাহত হচ্ছে, তেমনি কমছে শিল্পের উৎপাদন। কারণ শিল্প-কারখানায় চাহিদা অনুযায়ী গ্যাস পাওয়া যাচ্ছে না। পোশাকশিল্প, সিরামিক, সিমেন্ট খাতের মতো গ্যাসনির্ভরশীল উৎপাদন খাতগুলোয় উৎপাদন কমেছে। দেশের বড় রপ্তানি খাত পোশাকশিল্পে বিকল্প হিসেবে জেনারেটর ও বিদ্যুৎ ব্যবহারের ফলে উৎপাদন খরচ বেড়ে যাচ্ছে। সার কারখানায় গ্যাসসংকটে উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। ফিলিং স্টেশনগুলোয় লাইন দীর্ঘায়িত হচ্ছে। প্রয়োজনীয় গ্যাস পাচ্ছেন না সিএনজিচালিত অটোরিকশার চালকরা। অন্যান্য গ্যাসনির্ভরশীল প্রতিষ্ঠানে গ্যাসসংকটে উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। গ্যাসের এই সংকটে দেশীয় শিল্পের মতোই বিদেশি বিনিয়োগও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। বিদেশি বিনিয়োগ নিরুৎসাহ হচ্ছে।
মজুত গ্যাস ফুরিয়ে আসার খবরও আসছে গণমাধ্যমে। গ্যাস সংকটে চাহিদা ও জোগানের ভারসাম্য নষ্ট হবে। এর ফলে সাধারণ ভোক্তাদের জন্য পণ্যের দাম বেড়ে যাবে, যা মূল্যস্ফীতির চাপ বাড়াবে। গ্যাসসংকট দূরীকরণে আগের সরকার যথেষ্ট মনোযোগ দেয়নি। সে কারণেই গ্যাসের এই করুণ দশা। এ রকম বাস্তবতায় দেশীয় উৎস থেকে গ্যাসের উৎপাদন বাড়ানোর ওপর বিশেষ করে জোর দিতে হবে। সে ক্ষেত্রে সম্ভাব্য পুরোনো গ্যাস কূপগুলো সংস্কারের মাধ্যমে উৎপাদন বাড়ানোর চেষ্টা চালাতে হবে। পাশাপাশি নতুন কূপ আবিষ্কারই একমাত্র পথ। দীর্ঘমেয়াদি জ্বালানি নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে এ মুহূর্তে সরকারকে সমুদ্র অঞ্চলে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে মনোযোগ দিতে হবে। সরকার গ্যাস ঘাটতিতে এলএনজি আমদানি করে সংকট মোকাবিল করছে। এটি আপৎকালীন হতে পারে দীর্ঘ সময়ের জন্য নয়। তাই টেকসই পথ্য খুঁজতে হবে। নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহারে শিল্পকে উৎসাহিত করা যেতে পারে। গ্যাসের লাইনগুলো সংস্কার ও মেরামত করতে হবে। গ্যাস অনুসন্ধান, কূপ খনন ও বিতরণ কাজে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে গ্যাস সঞ্চালনের গতি বাড়ানোর ক্ষেত্রে সরকারের আরও বেশি গুরুত্ব দিতে হবে।

Discussion about this post