‘প্রতিহিংসার আগুনে পুড়ছে গ্রামীণ ব্যাংক’ শীর্ষক যে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে ১৮ নভেম্বরের শেয়ার বিজে, সেটি সত্যিই বেদনাদায়ক। ড. মুহাম্মদ ইউনূসের হাতে গড়ে ওঠা গ্রামীণ ব্যাংক এখন একটি স্বাধীন সত্তা। প্রায় এক যুগের বেশি সময় ধরে তিনি ব্যাংকটির সঙ্গে জড়িত নন। তবে তিনি অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হওয়ার পর থেকে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার হচ্ছে দারিদ্র্য বিমোচন ও কর্মসংস্থানের লক্ষ্য নিয়ে গড়ে ওঠা ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠানটি।
শান্তিতে নোবেলবিজয়ী খ্যাতনামা অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূস রাজনীতিতে যোগ দিতে চেয়েছেন। ২০০৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে নাগরিকদের এ বিষয়ে জানতে চেয়ে জাতীয় দৈনিকে চিঠি দিয়েছেন। সাধারণ মানুষের উৎসাহের পরিপ্রেক্ষিতে তিনি রাজনীতিতে যোগদান এবং রাজনৈতিক দল গঠন করার সিদ্ধান্ত নেন। দলের সম্ভাব্য নাম কী হতে পারে, তা জানিয়েও চিঠি দিয়েছেন। সাধারণ মানুষের কাছ থেকে পাওয়া উৎসাহেই তিনি নতুন ধারা সৃষ্টির সম্ভাবনায় উদ্দীপ্ত হয়েই রাজনীতিতে আসার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। ওই সিদ্ধান্তের মাধ্যমে তিনি সারা জীবনের গড়া সব কাজ পেছনে ফেলে নতুন জীবনে প্রবেশ করার জন্য প্রস্তুতি নিয়েছেন এবং রাজনৈতিক দল গঠনের করার প্রক্রিয়া শুরু করেছেন। দল গঠনের প্রাথমিক প্রক্রিয়া হিসেবে মজবুত সাংগঠনিক টিম গঠনে হাত দিয়েছেন। তাদের পরিকল্পনা ছিল, ঘরোয়া রাজনীতির ওপর নিষেধাজ্ঞা উঠে গেলে ওই টিমকে সবার কাছে পরিচয় করিয়ে দিয়ে দল গঠনের কাজ আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু করবেন। সেই সময়ই তার বিরুদ্ধে নানা অপপ্রচার শুরু হয়। এর আগেও ‘যোগ্য প্রার্থী আন্দোলন’ নিয়ে তিনি এ ধারণা পেশ করেন। সে সময়ও তার সমালোচনা করা হয়। রাজনৈতিক দল গঠনের একপর্যায়ে তিনি অনুধাবন করেন, দীর্ঘদিন অপেক্ষা করলেও তিনি সফল হবেন না। বাস্তবতাকে মেনে নিয়ে তিনি রাজনীতির পথে আর অগ্রসর হননি। এ বিষয়েও তিনি জাতীয় দৈনিকে লিখেছেন।
ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে নিয়ে সমালোচনার ভাষা এমন মানে চলে গেছে, তা কার্যত গালাগালির পর্যায়ে পড়ে। অথচ আগের বছর রাজনৈতিক সংকট নিরসনে মধ্যস্থতাকারী হিসেবে কাকে চান—এ মর্মে অনলাইন পাঠক জরিপ করে একটি জাতীয় দৈনিক। ওই জরিপে দেশের বিভিন্ন স্তরের বিপুল পাঠক ছাড়াও প্রবাসী বাংলাদেশীরা অংশ নেন। অংশগ্রহণকারীদের ৬৫ শতাংশই মধ্যস্থতাকারী হিসেবে ড. ইউনূসের প্রতি আস্থা জানান। এর পর নানা কারণে তিনি প্রধান উপদেষ্টা হননি। গত দেড় দশকে তার প্রতি কর্তৃতবাদী রাষ্ট্রনেতারা ভালো আচরণ করেননি। তাকে নানাভাবে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করেছেন। এতদসত্ত্বেও তার প্রতি সাধারণ মানুষের আস্থা এতটুকু কমেনি। জুলাই আন্দোলনের সংগঠকরাও তার প্রতি আস্থা রেখেছেন। তাদের আহ্বানে সাড়া দিয়ে ড. মুহাম্মদ ইউনূস প্রধান উপদেষ্টার দায়িত্ব নিয়েছেন। প্রধান উপদেষ্টা হওয়ার পর কারা তার বিরোধিতা করতে পারে, কর্তব্যকাজে কারা বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে—এটি সবার জানা।
গ্রামীণ ব্যাংকের বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগ থাকলেও সেটি যে কেবল ‘বিরোধিতার জন্য বিরোধিতা’, সে বিষয়ে কারও দ্বিমত নেই। হতদরিদ্র মানুষ স্বপ্নপূরণের জন্য গ্রামীণ ব্যাংককেই বেছে নেয়। গ্রামীণ ব্যাংকই একমাত্র প্রতিষ্ঠান যেটি ভিক্ষুকদের জামানত ছাড়া ঋণ দেয়। এ প্রতিষ্ঠানের সহায়তা নিয়ে দরিদ্র পরিবারের অনেক শিক্ষার্থী উচ্চশিক্ষা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। এ ধরনের অনেক দৃষ্টান্ত সমজাতীয় প্রতিষ্ঠানের জন্য অনুকরণীয়। তাই আমরা বিশ্বাস করি, নাগরিকরা গ্রামীণ ব্যাংক ক্ষতিগ্রস্ত করার হীনতা পরিহার করবেন এবং এটিকে সগৌরবে টিকে থাকতে সহায়তা করবেন।
প্রিন্ট করুন




Discussion about this post