Print Date & Time : 15 August 2025 Friday 9:11 am

ঘিওরের নৌকার হাট

শেয়ার বিজ ডেস্ক : মানিকগঞ্জের ঘিওরে জমে উঠেছে ২০০ বছরের পুরোনো নৌকার হাট। চরাঞ্চল ও নিম্নাঞ্চলের মানুষের জীবন-জীবিকা আর চলাচল নৌকা ছাড়া যেন অনেকটাই অচল। দেশের বিভিন্ন স্থানে ভয়াবহ বন্যা, অবিরাম বর্ষণ এবং অভ্যন্তরীণ নদ-নদীর পানি বৃদ্ধির ফলে মানুষ নৌকা কেনার জন্য ভিড় করছেন এই হাটে।

গত বুধবার উপজেলা সদরের কেন্দ্রীয় ঈদগাহের মাঠে নৌকার হাটে গিয়ে দেখা যায়, জায়গার সংকুলান না হওয়ায় পাশের ডিএন পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ে মাঠে দৃষ্টিনন্দনভাবে সাজানো হয়েছে হাজারো নৌকা। ক্রেতাদের ভিড়ে সরগরম পুরো এলাকা। এখানে সাধ্যের মধ্যে সব শ্রেণি-পেশার মানুষের জন্য রয়েছে নানা ধরনের নৌকা। পদ্মা-যমুনা, কালীগঙ্গা, ইছামতী ও ধলেশ্বরীসহ ছোট বড় বেশ কয়েকটি নদীবেষ্টিত জেলা মানিকগঞ্জে এরই মধ্যে বর্ষার পানি প্রবেশ করছে।

এ এলাকার নদী-নালা ও খাল-বিল পানিতে ভরপুর। বিশেষ করে ঘিওর, হরিরামপুর, শিবালয় ও দৌলতপুর উপজেলার বেশিরভাগ এলাকা নিচু। পদ্মা-যমুনার সঙ্গে এই চারটি উপজেলার সরাসরি সম্পর্ক থাকায় সাধারণ বর্ষাতেই নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়। এই সব অঞ্চলের মানুষ বন্যার পানি আসার আগে থেকেই নৌকা প্রস্তুত করে রাখেন। এসব এলাকায় বর্ষা মৌসুমে একমাত্র ভরসা হলো নৌকা। জেলা ও জেলার বাইরের মানুষ এ হাটে এসে নৌকা কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। হাটে প্রতিদিন লাখ টাকার নৌকা বেচাকেনা হয়। তবে সাপ্তাহিক হাট বুধবারে সবচেয়ে বেশি নৌকা বেচাকেনা হয়ে থাকে। প্রতি হাটে ২০০ থেকে ৩০০ নৌকা বেচাকেনা হয়।

স্থানীয় বাসিন্দা আব্দুল আলিম মানিক বলেন, বর্ষার সিজন চলছে। সাধারণত এই সময় সচরাচর বন্যার প্রকোপ দেখা দেয়। ঘিওর নৌকার হাটে এ সময় ভিড় লেগেই থাকে। নৌকা তৈরির কারিগররাও দিনরাত ব্যস্ত সময় পার করছেন।

ঘিওর বাজারের কাঠমিস্ত্রি সুবল সূত্রধর ও আশিষ সূত্রধর বলেন, প্রতি বছরই বর্ষা মৌসুমের অপেক্ষায় থাকি। সপ্তাহে আমাদের কারখানা থেকে কমপক্ষে ২০-২২টি নৌকা হাটে নেওয়া হয়। বর্তমানে কাঠ, লোহা ও অন্যান্য সরঞ্জামের দাম বেড়ে যাওয়ায় নৌকা তৈরিতে খরচ বেড়েছে। আমরা সাধারণত জামরুল, রেইনট্রি, আম, কদম, শিমুল, বৈন্যা, ডোমরা ইত্যাদি কাঠ দিয়ে ডিঙ্গি, কোশা ও স্টিল বডির নৌকা তৈরি করছি।

হাটে নৌকা কিনতে আসা আশাপুর গ্রামের বিপ্লব মোল্লা বলেন, আমাদের গ্রামটি খুবই নিচু। সামান্য বর্ষাতেই রাস্তাঘাট তলিয়ে যায়। বর্ষার সময় একমাত্র বাহন হচ্ছে নৌকা। পানি বেড়ে রাস্তায় উঠেছে। নৌকা ছাড়া কোনো উপায় নেই। তাই ঘিওর হাট থেকে আট হাজার টাকা দিয়ে একটি বড় নৌকা নিয়ে যাচ্ছি।

ঘিওর নৌকার হাট পরিচালনা কমিটির সদস্য গৌরাঙ্গ ঘোষ জানান, মানিকগঞ্জের নিচু এলাকাগুলোয় বর্ষার শুরুতেই পানি আসে। নিত্যদিনের যাতায়াত ব্যবস্থা স্বাভাবিক রাখতে তখন প্রয়োজন হয় নৌকার। আর এসব প্রয়োজন মেটাতে ঘিওরে শত বছর ধরে চলে আসছে নৌকার হাট। ঘিওর হাটবাজার ব্যবস্থাপনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মতিন মুসা বলেন, ঘিওর হাটের ঐতিহ্য ২০০ বছরের অধিক। এখানে সাধ ও সাধ্যের মধ্যে মানুষ নৌকা ক্রয়-বিক্রয় করে থাকেন।

ঘিওর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ হাবিবুর রহমান বলেন, এই নৌকার হাটটি আমাদের জেলা ও উপজেলার ঐতিহ্যের সঙ্গে মিশে আছে। আমার জšে§র পর থেকে এই নৌকার হাটটি দেখে আসছি। এই হাটের সুনাম রয়েছে দেশজুড়ে। প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে এ হাটে নৌকা কিনতে আসেন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার বলেন, ঘিওর হাটে বর্ষা মৌসুমে নৌকার কদর বাড়ে। ঘিওর উপজেলাসহ আশপাশের প্রায় ১০টি উপজেলার মানুষ এই হাট থেকে নৌকা কিনে নেয়। সরকারিভাবে নৌকার কারিগররা যদি স্বল্প সুদে ঋণ পেত তাহলে ঘিওর হাটে নৌকার ঐতিহ্য ধরে রাখতে পারবেন।