Print Date & Time : 13 July 2025 Sunday 4:47 pm

ঘুমানোর যে অভ্যাস ওজন কমতে দেয় না

শেয়ার বিজ ডেস্ক : শরীরের ওজন স্বাভাবিকের চাইতে বেড়ে গেলে সেটা নারী-পুরুষ উভয়ের জন্যই বেশ অস্বস্তিকর। অনিয়মিত জীবনযাপনের কারণে বেশিরভাগ মানুষ ওজন বাড়ার সমস্যায় ভোগেন। বারবার ডায়েটের উদ্যোগ নিয়েও অনেকে ব্যর্থ হন। ওজন কমানোর জন্য স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, নিয়মিত শারীরিক পরিশ্রম এবং ইতিবাচক মানসিকতা প্রয়োজন, এর পাশাপাশি আমাদের অন্যান্য অভ্যাসের দিকে নজর দেওয়াও গুরুত্বপূর্ণ।

অনেক সময় এমন হয় যে, সব প্রয়োজনীয় জিনিসগুলো অনুসরণ করার পরও ওজন কমাতে সক্ষম হন না। এর কারণ হতে পারে কিছু অভ্যাস, যা ওজন কমানোর প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করছে। যা পরিবর্তন না করার ফলে ওজন কমছে না। ঘুমানোর আগে আমরা যা করি তাই কিন্তু আমাদের শরীরে উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলতে পারে।

আসুন ঘুমের আগে আপনার কোন অভ্যাস ওজন বাড়িয়ে দিচ্ছে জেনে নেওয়া যাক-

খাবার খেয়ে বিছানায় যাওয়া
খাবার খেয়ে বিছানায় খেলে শরীরে জমে থাকা ক্যালোরিগুলো পোড়ানোর জন্য পর্যাপ্ত সময় থাকে না। খেতে দেরি হলে খাবারের সব পুষ্টিগুণ শরীরে শোষিত না হয়ে ফ্যাট আকারে জমতে থাকে। এরপর সেগুলো শরীরে জমে ওজন বাড়ায়।

এছাড়া রাতের খাবারে প্রায়ই ডেজার্ট,পায়েস, কনফেকশনারি, প্যাস্ট্রি খাওয়া হয়। এগুলো ঘুমানোর আগে খেলে রক্তে সুগারের পরিমাণ বাড়ায়। কিছুক্ষণ পরই সুগারের পরিমাণ কমে গেলেও ক্ষুধা লাগে লেগেই থাকে। ফলে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ওজন বাড়াতে পারে। তাই হজমের সুবিধার্থে ও ওজন কমানোর জন্য রাতের খাবার রাত আটটার আগেই সেরে ফেলা উচিত। এতে খাবার পুরোপুরি হজম ও বিপাকক্রিয়া সম্পন্ন করার জন্য শরীরের এনজাইম ও হরমোনগুলো কাজ করার সুযোগ পায়।

গবেষণায় দেখা গেছে, যারা রাতের খাবার তাড়াতাড়ি খান, তারা দেরিতে খাওয়া মানুষের তুলনায় ২৫ শতাংশ বেশি ওজন কমাতে সক্ষম হন। যদি তাড়াতাড়ি খাওয়ার সময় বা সুযোগ না পান তাহলে আদর্শ সময় হলো ঘুমানোর কমপক্ষে দুই ঘণ্টা আগে রাতের খাবার সেরে নেওয়া।

ইলেকট্রনিক ডিভাইস ব্যবহার না করা
ঘুমানোর আগে স্মার্টফোন, ট্যাবলেট বা ল্যাপটপের মতো ইলেকট্রনিক ডিভাইস ব্যবহার করার অভ্যাস ঘুমের ব্যাঘাত ঘটায়। ডিভাইসগুলোর থেকে নির্গত নীল আলো মস্তিষ্ককে জাগিয়ে রাখে ঘুম নষ্ট করে। যারা ঘুমাতে যাওয়ার আগে এ ধরনের প্রযুক্তি-পণ্য অতিমাত্রায় ব্যবহার করেন তাদের শরীরে মেলাটোনিনের ঘাটতি দেখা দিতে পারে। এক পর্যায়ে ঘুমে সমস্যা দেখা দেয় এবং স্লিপ ডিজঅর্ডারের ঝুঁকি তৈরি হয়। হরমোনের ভারসাম্যহীনতার ফলে শরীরে ঘেরলিন বৃদ্ধি পায়। ঘেরলিনকে ক্ষুধার হরমোন বলা হয়। ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন করে ওজন বৃদ্ধি করে। ঘুমানোর অন্তত ৩ ঘণ্টা আগে মোবাইল, কম্পিউটার থেকে দূরে থাকতে বলেছেন বিশেষজ্ঞরা। এখনকার সময় এই নিয়ম মানা কঠিন। তারপরও ঘুমের ১ ঘণ্টা আগে ডিভাইস থেকে দূরে থাকতে হবে।

ভারী খাবার গ্রহণ না করা
গভীর রাতে ভারী উচ্চ কার্বোহাইড্রেট খাবার গ্রহণ করলে ওজন বৃদ্ধি পেতে পারে। রাতে তেমন পরিশ্রমের কাজ থাকে না বিধায় কার্বোহাইড্রেট পোড়ে না। শরীরে তখন অতিমাত্রায় ইনসুলিন সংবেদনশীল হয়ে যায়, এর ফলে ব্লাডস্ট্রিম বা রক্তস্রোতে বেশি করে গ্লুকোজ বা শর্করা মুক্ত হয়। যা মেদ বৃদ্ধি প্রক্রিয়ায় ভূমিকা রাখে। তাই এই সময় কার্বোহাইড্রেট জাতীয় হালকা খাবার খেলেও আপনি নিজের স্বাস্থ্যের ওপর অবিচার করবেন। রাতে কার্বোহাইড্রেট পরিবর্তে চর্বিহীন প্রোটিন সমৃদ্ধ এবং ফাইবারযুক্ত খাবার খেতে পারেন। এই খাবারগুলো আপনার রক্তে শর্করার পরিমাণ ঠিক রাখবে। ওজনও বাড়বে না।

না খেয়ে থাকা
ওজন কমাতে গিয়ে দিনের বেশির ভাগ সময় না খেয়ে থাকেন, একবারে রাতে খাবার গ্রহণ করেন। প্রয়োজনের তুলনায় কম খাবার গ্রহণ করলে ধীরে ধীরে বিপাকক্রিয়া ধীর হতে থাকে। দীর্ঘ সময় না খেয়ে থাকার কারণে শরীররে ওজন বৃদ্ধি পেতে পারে। সারাদিন না খেয়ে থাকার কারণে রাতে একবারে বেশি খাবার খেলে শরীররে ওজন বৃদ্ধি পায়। সারাদিন একেবারে খাওয়া থেকে বিরত না থেকে কিছু খাবার খেতে থাকুন। হালকা খাবারও আপনার ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করবে এবং আপনার ওজন বাড়তে দেবে না। এক্ষেত্রে বাদাম কিংবা ফল খেতে পারেন।

মানসিক চাপ
দীর্ঘস্থায়ী মানসিক চাপ আপনার ঘুমের ব্যাঘাত ঘটাতে পারে এবং কর্টিসলের মাত্রা বৃদ্ধি করে। ফলে ক্ষুধা বাড়ায় এবং ওজন বৃদ্ধির কারণ হতে পারে। মানসিক চাপমুক্ত থাকতে মেডিটেশন করতে পারেন রাতে ঘুমের আগে কিংবা সকালে।

আরআর/