ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে ৪১ বছর ধরে কাজ করেছেন মোহাম্মদ নূরুল আমিন। গত বছর রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর তাকে দুর্বল গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকে চেয়ারম্যান নিযুক্ত করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সম্প্রতি গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকসহ ৫টি ব্যাংক একীভূতকরণের উদ্যোগ নিয়েছে। এ নিয়ে কথা বলেন শেয়ার বিজের সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন শেখ শাফায়াত হোসেন
শেয়ার বিজ: ব্যাংক একীভূতকরণ কার্যক্রম শুরু হয়েছে। আপনাদের গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক এই একীভূতকরণ প্রক্রিয়ার মধ্যে রয়েছে। এ নিয়ে গত মঙ্গলবার বাংলাদেশ ব্যাংকে একটি বৈঠকও হয়েছে। তাতে কী কী সিদ্ধান্ত হয়েছে?
মোহাম্মদ নূরুল আমিন: বাংলাদেশ ব্যাংক আমাদের সঙ্গে কথা বলেছে। সব কথা এখনও বলার সময়ও হয়নি। তবে এটা ঠিক, এটা মার্জারের সূচনাপর্ব। সরকার আপাতত এই ব্যাংকগুলোকে টেকওভার করবে। মার্জারের প্রাথমিক পর্যায় হচ্ছে ইন্টিগ্রেশন। বিষয়টি এভাবে কাজ করবে। একটি দুটি ব্যাংকের তথ্য নিয়ে কাজটি শুরু হবে।
শেয়ার বিজ: গত বছরের ৫ আগস্টের পর গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক পুনর্গঠন করে নতুন একটি প্রত্যাশা নিয়ে আপনাকে ব্যাংকটির চেয়ারম্যান করা হয়। সেই প্রত্যাশা কতটুকু পূরণ হলো এই এক বছরে? এই সময় কতটা পর্যাপ্ত ছিল আর কতটা সময় পেলে আপনি ব্যাংকটিকে স্বতন্ত্রভাবে চলার পর্যায়ে নিয়ে যেতে পারতেন?
মোহাম্মদ নূরুল আমিন: আপনি জানেন বাংলাদেশ ব্যাংক ব্যাংকিং রেজ্যুলেশন অর্ডিনেন্স পাস হয়েছে। কোনো শাখা বন্ধ করবে না কেন্দ্রীয় ব্যাংক। কিন্তু কীভাবে শাখাগুলো স্থানান্তর হবে তা এখনও জানানো হয়নি। এটা খুব স্পষ্ট যে, মার্জার করতে গিয়ে সরকার যে টাকা এর পেছনে ব্যয় করবে, তার থেকে আমাদের ব্যাংকটিকে যদি আরেক দফা টাকা ধার দিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সহযোগিতা করতো, তাহলে এক-দুই বছরের মধ্যে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করা যেতো। আমরা এখনও বলি, আমরা এখনও এই চেষ্টা করার বিষয়ে আন্তরিক আছি। ২-৩ বছর লাগত। এই টাকাটা খুব বেশি না। তবে বাংলাদেশ ব্যাংক সেই ধাপ পার হয়ে গেছে।
শেয়ার বিজ: এই ৫ ব্যাংকে এমন কিছু অনিয়ম হয়েছিল যাতে ঋণগুলো নামে-বেনামে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। একীভূত হওয়া ব্যাংকের পক্ষে এই টাকা আদায় করা সম্ভব হবে?
মোহাম্মদ নূরুল আমিন: একটি অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি করে যদি মন্দঋণগুলোকে এক জায়গায় জড় করে রাখা যেত। এগুলো সেকেন্ডারি মার্কেটে বিক্রি, ডিসকাউন্টে দিয়ে দেয়াÑযে বিষয়গুলো এর সঙ্গে জড়িত সেটা আবার আরেক ধরনের নিয়ম। এটা করা গেলে অ্যাসেটগুলো কিছুটা ক্লিন হতো।
আবার এটাও ঠিক, এই ব্যাংকগুলো টাকাগুলো একটি-দুটি গ্রুপের কাছে গেছে। তারা অধিকাংশই দেশে নাই। টাকাগুলোও পাচার হয়ে গেছে। দেশে থাকা টাকাও তারা দেবে কিনা তা নিশ্চিত না।
শেয়ার বিজ: দীর্ঘ ব্যাংকিং পেশাজীবনে একাধিক ব্যাংকের এমডির দায়িত্ব পালন করেছেন। আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে রূপান্তর করেছেন পূূর্ণাঙ্গ ব্যাংকে। দীর্ঘ এ অভিজ্ঞতা থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকের এই একীভূতকরণ উদ্যোগকে কীভাবে মূল্যায়ন করবেন। দেশের অর্থনীতিতে এর প্রভাব কী হতে পারে বলে মনে করেন।
মোহাম্মদ নূরুল আমিন: একীভূকরণ একটি চ্যালেঞ্জিং এবং সাহসী পদক্ষেপ। একটি দুটি ব্যাংক মার্জ হলে আমরা একটা তুলনামূলক সহজ মনে করতাম। তবে পাঁচটি ব্যাংক একসঙ্গে মার্জ হওয়ায় এটাকে আরও বেশি চ্যালেঞ্জিং করে তুলেছে।
দ্বিতীয়ত, কিছু কিছু ক্ষেত্রে সরকার এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দৃঢ়তা এবং সদিচ্ছা কাজে লাগে। কিন্তু ৫টি ব্যাংক একসঙ্গে মার্জারের অভিজ্ঞতা গোটা বিশ্বেই কয়টা আছে সেটা দেখতে হবে। ফলে এটা এমন একটি ‘ট্রায়াল অ্যান্ড এরর’-এর মধ্য দিয়ে যাবে, এটা সফল হলে সারা দুনিয়ার জন্য মডেল হয়ে যাবে। আবার সফল না হলে এর প্রভাব আমাদের কোথায় নিয়ে যাবে তা এখনও বলা যাচ্ছে না।
তবে একটা কথা আমরা দৃঢ়ভাবে বলতে পারি, মানুষের আস্থা গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকের ওপর থেকে কমতে পারে। কিন্তু ইসলামিক ব্যাংকিংয়ের ওপর থেকে তাদের আস্থা কমেনি। আমাদের ব্যাংক থেকে টাকাগুলো কিন্তু প্রচলিত ধারার ব্যাংকের ইসলামিক উইন্ডোতে গিয়ে জমা হয়েছে। এর অর্থ হলো মানুষ ইসলামিক ব্যাংকিং করতে চায়। তারা এ ব্যাংকিংয়ে সস্তি পাবে।
শেয়ার বিজ: এই এক বছরে গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকে কতটা পরিবর্তন এসেছে বা অগ্রগতি সাধিত হয়েছে বলে আপনি মনে করেন।
মোহাম্মদ নূরুল আমিন: গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংককে একটি ভালো ব্যাংকে পরিণত করতে আমরা যথাযথ চেষ্টা করেছি। আমাদের এই ব্যাংকে এখন আর আগের মতো ঋণের নামে টাকা আত্মসাতের কোনো সুযোগ নেই। সব ধরনের ফাঁকফোকর বন্ধ হয়েছে। নতুন আমানতের শতভাগ ফেরতের নিশ্চয়তা দিয়েই আমরা আমানত চাচ্ছি। ব্যাংকটিকে ঘুরে দাঁড়াতে যত ধরনের উদ্যোগ নেয়া দরকার, মোটিভেশন থেকে শুরু করে সব ধরনের উদ্যোগ নিয়েছি। কিছু কিছু আমানতও পাচ্ছি। সব ধরনের বাহুল্য ব্যয় কমিয়ে আনা হয়েছে। তবে ব্যাংকের মূল ব্যবসা যেটাকে বলে অর্থাৎ আমরা ঋণ দিতে পারছি না। একমুখীভাবে চলছে ব্যাংকের লেনদেন। এভাবে তো একটি ব্যাংক চলতে পারে না।

Discussion about this post