নুরুন্নাহার চৌধুরী কলি : পতনের ধাক্কা সামলে ঘুরে দাঁড়িয়েছে দেশের পুঁজিবাজার। সপ্তাহের তৃতীয় কার্যদিবসে গতকাল মঙ্গলবার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) সূচকের উত্থানের মধ্য দিয়ে লেনদেন শেষ হয়েছে। তবে গতকাল আগের কার্যদিবসের তুলনায় ডিএসইতে লেননে কিছুটা কমেছে। এদিকে ডিএসইতে লেনদেন হওয়া বেশিরভাগ কোম্পানির শেয়ার এবং মিউচুয়াল ফান্ডের ইউনিটের দরও বেড়েছে।
ডিএসইর সূত্রে জানা গেছে, গতকাল ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের চেয়ে ৫০ দশমিক ৯৪ পয়েন্ট বেড়ে অবস্থান করছে ৫ হাজার ২৭০ পয়েন্টে। ডিএসই শরিয়াহ সূচক ১৪ দশমিক ৮৭ পয়েন্ট বেড়ে এক হাজার ১৬১ পয়েন্টে এবং ডিএস৩০ সূচক ৩৩ দশমিক ৩৮ পয়েন্ট বেড়ে ২ হাজার ৩০ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। লেনেদেন ভিন্ন চিত্র দেখা গেছে। ডিএসইতে গতকাল লেনদেন আগের কার্যদিবসের তুলনায় কিছুটা কমেছে।
ডিএসইর তথ্যমতে, গতকাল লেনদেন হওয়া বেশিরভাগ কোম্পানি এবং ফান্ডের শেয়ার ও ইউনিটের দর বেড়েছে। ডিএসইতে গতকাল মোট ৩৯৩টি কোম্পানি এবং মিউচুয়াল ফান্ডের শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে ১৭৩টি ফান্ড ও কোম্পানির দর বেড়েছে। এর বিপরীতে ১৫১টি ফান্ড ও কোম্পানির দর কমেছে। দিনশেষে ৬৯টি ফান্ড ও কোম্পানির দর অপরিবর্তিত ছিল।
এদিকে বিভিন্ন ক্যাটেগরির মধ্যে ‘এ’ ক্যাটেগরির ২১৪টি কোম্পানি ও ফান্ডের মধ্যে লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে মাত্র ১০২টি কোম্পানি ও ফান্ডের দর বেড়েছে। এর বিপরীতে ৭৭টি ফান্ড ও কোম্পানির দর কমেছে। দিনশেষে অপরিবর্তিত ছিল ৩৭টি কোম্পানির শেয়ার ও ইউনিট দর।
একইভাবে ‘বি’ ক্যাটেগরির ৮২টি কোম্পানি ও ফান্ডের মধ্যে লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে ৪০টি ফান্ড ও কোম্পানির দর দাম বেড়েছে। এর বিপরীতে ৩০টি ফান্ড ও কোম্পানির দর কমেছে। দিনশেষে অপরিবর্তিত ছিল ১২টি ফান্ড ও কোম্পানির দর।
‘জেড’ ক্যাটেগরির ৯৫টি কোম্পানি ও ফান্ডের মধ্যে লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে ৩১টি ফান্ড ও কোম্পানির দর বেড়েছে। এর বিপরীতে ৪৪টি ফান্ড ও কোম্পানির দর কমেছে। দিনশেষে অপরিবর্তিত ছিল ২০টি ফান্ড ও কোম্পানির দর।
এদিকে মিউচুয়াল ফান্ড খাতেও বেশিরভাগ ফান্ডের ইউনিটের দর কমেছে। লেনদেন হওয়া ৩৬টি ফান্ডের মধ্যে মাত্র ৭টি ফান্ডের ইউনিট দর বেড়েছে, বিপরীতে ১০টি ফান্ডের ইউনিট দর কমেছে। দিনশেষে অপরিবর্তিত ছিল ১৯টি ফান্ডের ইউনিট দর।
ডিএসইতে গতকাল মোট ২৩ কোটি ৮২ লাখ ৭৫ হাজার ৮৮৫টি শেয়ার ও ইউনিট দুই লাখ ৭ হাজার ৬২৮ বার হাতবদল হয়েছে। এর জের ধরে দিনশেষে ডিএসইতে মোট লেনদেন দাঁড়িয়েছে ৭২২ কোটি ২৯ লাখ টাকা। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয়েছিল ৮৬০ কোটি ৭০ লাখ টাকা।
এ লেনদেনে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রেখেছে বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন। কোম্পানিটির ২৯ কোটি ২২ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। দ্বিতীয় স্থানে থাকা সিটি ব্যাংকের শেয়ার লেননে হয়েছে ২০ কোটি ৭৯ লাখ টাকার। ১৯ কোটি ৮৩ লাখ টাকার শেয়ার লেনেদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে ওরিয়ন ইনফিউশন।
এছাড়া ডিএসইতে লেনদেনের দিক থেকে শীর্ষ ১০ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছেÑখান ব্রাদার্স পিপি ওভেন ব্যাগ, এক্সপ্রেস ইন্স্যুরেন্স, ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো, ব্র্যাক ব্যাংক, বেক্সিমকো ফার্মা, ইস্টার্ন ব্যাংক এবং সি পার্ল বিচ রিসোর্ট।
পট পরিবর্তনের পর নতুন সরকার গঠন এবং রাজনৈতিক অনিশ্চয়তায় বেসরকারি বিনিয়োগ স্থবির হয়ে আছে। এছাড়া পুঁজিবাজারে কারসাজির সঙ্গে জড়িত অনেকের বিরুদ্ধে বর্তমান কমিশন ব্যবস্থা নেয়ায় নতুন করে বড় বিনিয়োগ হচ্ছে না এবং আগের বিনিয়োগকারীরাও ভয়ে সরে যাচ্ছিলেন। তবে আগামী জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আস্থা বাড়তে শুরু করেছে। ফলে বাজার কিছুদিন যাবত ইতিবাচক ধারায় আছে। এর মধ্যে শেষ ছয় কার্যদিবসে টানা উত্থানের ফলে প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) মূল্য সূচক ডিএসইএক্স বেড়েছে ২১০ পয়েন্ট।
এদিকে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) গতকাল মোট ২৩২টি কোম্পানি এবং ফান্ডের শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে ৮৯টি কোম্পানি ও ফান্ডের শেয়ার দর বেড়েছে। এর বিপরীতে ১১০টি কোম্পানি ও ফান্ডের শেয়ার দর কমেছে। দিনশেষে ৩৩টি কোম্পানি ও ফান্ডের দর অপরিবর্তিত ছিল। সিএসইতে গতকাল মোট ৬ কোটি ৬২ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। যা আগের কার্যদিবসে ছিল ১১ কোটি ৬৬ লাখ টাকা।
পুঁজিবাজার বিশ্লেষকদের মতে, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং বৈশ্বিক অর্থনীতির ধীরে ধীরে উন্নতি বিনিয়োগকারীদের উৎসাহিত করছে। বর্তমান প্রবণতা বজায় থাকলে বাজার আরও চাঙ্গা হতে পারে। গতকাল পুঁজিবাজারের এই তেজিভাব বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আশার সঞ্চার করেছে। আগামী দিনগুলোয় বাজারের এই ইতিবাচক ধারা বজায় থাকে কিনা, সেটাই এখন খোর বিষয়। সূচক বাড়ার পাশাপাশি পুঁজিবাজারে লেনেেনরও পরিমাণ বেড়েছে। এটি বাজারে বিনিয়োগকারীদের সক্রিয় অংশগ্রহণ বৃদ্ধি এবং ইতিবাচক মনোভাবের ইঙ্গিত দেয়। বিনিয়োগকারীরা আশা করছেন, আগামী দিনগুলোতেও এই ঊর্ধ্বমুখী ধারা বজায় থাকবে।

Discussion about this post