স্বরূপ ভট্টাচার্য, চট্টগ্রাম : এখন চট্টগ্রাম থেকে পাইপলাইনের মাধ্যমে মাত্র ১২ ঘণ্টায় ৫০ লাখ লিটার জ্বালানি তেল নারায়ণগঞ্জের গোদনাইল ডিপোয় পৌঁছাবে। আগে এ পরিমাণ তেল কোস্টাল ট্যাঙ্কারে করে নিয়ে যেতে সময় লাগত ৪৮ ঘণ্টা।
আগামীকাল শনিবার থেকে ১৬ ইঞ্চি ব্যাসের ২৪২ কিলোমিটার দীর্ঘ পাইপলাইনের এ প্রকল্প চালু হচ্ছে। পতেঙ্গার ডেসপাস টার্মিনালে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা পর্যন্ত পাইপলাইনে জ্বালানি তেল পরিবহন নামের ৩ হাজার ৬৫৩ কোটি টাকা ব্যয়ের এ প্রকল্প শনিবার উদ্বোধন করবেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান। উদ্বোধনের পর পাইপলাইনে নারায়ণগঞ্জ ও কুমিল্লা ডিপোতে জ্বালানি তেল পাঠানো হবে। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে থাকবেন জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের সচিব মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম ও বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ার ইন ফি মেজর জেনারেল মু. হাসান জামান।
প্রকল্পটি চালু হলে প্রতি ঘণ্টায় ২৬০ থেকে ২৮০ মেট্রিক টন ডিজেল যাবে নারায়ণগঞ্জের গোদনাইল ডিপোয়। প্রথমে পরিশোধিত তেল নেয়া হবে পদ্মা, মেঘনা-যমুনার ৯টি ট্যাঙ্কে। এরপর পাম্পিংয়ের মাধ্যমে কুমিল্লা হয়ে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ ও ফতুল্লায় পৌঁছাবে। এতে বছরে অন্তত ৩০০ কোটি টাকা সাশ্রয় হবে বলে জানিয়েছে বিপিসি সূত্র।
বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি) সূত্রে জানা গেছে, গত ২২ জুন পতেঙ্গার গুপ্তখাল থেকে পদ্মা অয়েল ট্যাঙ্কের প্রায় ২০ হাজার মেট্রিক টন ডিজেল পাইপলাইনের মাধ্যমে গোদনাইল ডিপোতে পাঠানোর কাজ শুরু হয়েছিল। এরপর গত ১১ আগস্ট মেঘনা অয়েল কোম্পানির দুটি ট্যাঙ্কের প্রায় ১৮ হাজার মেট্রিক টন ডিজেল পাঠানোর কাজ শুরু হয়। পেট্রেলিয়াম ট্রান্সমিশন কোম্পানি পিএলসি (পিটিসিপি এলসি) ও প্রকল্পের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের প্রকৌশলীরা এ জ্বালানি তেল সরবরাহের বিষয়টি তদারকি করছেন।
২০১৮ সালের অক্টোবরে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের অর্থায়নে শুরু হওয়া প্রকল্পটির কাজ শেষ হয় চলতি বছরের মার্চ মাসে। এ প্রকল্পের আওতায় পতেঙ্গা থেকে সিদ্ধিরগঞ্জ পর্যন্ত ১৬ ইঞ্চি ব্যাসার্ধের ২৪২ কিলোমিটার এবং সিদ্ধিরগঞ্জ থেকে ফতুল্লা পর্যন্ত ১০ ইঞ্চি ব্যাসার্ধের আরও ৮ কিলোমিটার পাইপ বসানো হয়েছে। এছাড়া কুমিল্লায় পেট্রোলিয়াম ডিপে স্থাপনসহ পদ্মা অয়েল ও মেঘনা পেট্রোলিয়ামের এবং ফতুল্লায় যমুনা অয়েল ও মেঘনা অয়েলের রিজার্ভার বসানো হয়েছে।
পেট্রোলিয়াম ট্রান্সমিশন কোম্পানির প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী মো. আমিনুল হক জানান, নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ ও ফতুল্লার ডিপো থেকে পাইপলাইনের মাধ্যমে বিভিন্ন ডিপোতে জ্বালানি তেল পাঠানো যাবে।
পদ্মা অয়েল কোম্পানির তত্ত্বাবধানে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ২৪ কন্সট্রাকশন ব্রিগেডের বাস্তবায়নে নির্মিত হয়েছে এ প্রকল্প। পতেঙ্গার নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকেই পাইপলাইনের তেল সরবরাহের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যাবে।
বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের চেয়ারম্যান মো. আমিন উল আহসান জানান, এই পাইপলাইনের মাধ্যমে তেল লেনদেনের সময় নিয়ন্ত্রণ কক্ষে বসেই পুরো পাইপলাইনের তেল সরবরাহ মনিটরিং করা যাবে।