স্বরূপ ভট্টাচার্য, চট্টগ্রাম : চট্টগ্রাম বন্দরে ট্যারিফ বাড়ানোর ফলে ভোক্তা পর্যায়ে চাপ বাড়ার আশঙ্কা করছেন বন্দর ব্যবহারকারী ব্যবসায়ীরা। এছাড়া আমদানি করা বিভিন্ন ভোগ্যপণ্য এবং গার্মেন্টসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কাঁচামালের নতুন করে দাম বাড়তে পারে বলে জানান বন্দর ব্যবহারকারী ব্যবসায়ীসহ ভোগ্যপণ্য ও গার্মেন্ট পণ্যের আমদানীকারকরা। বন্দরের এই উচ্চ হারে মাশুল বৃদ্ধির কারণে বাজারের স্থিতিশীলতা যেমন নষ্ট হবে, তেমনি রপ্তানি খাতেও চাপ পড়বে বলে ধারণা এসব ব্যবসায়ীর।
বন্দর ব্যবহারকারীদের আপত্তি সত্ত্বেও গত সোমবার থেকে চট্টগ্রাম বন্দরের বিভিন্ন সেবা খাতের মাশুল বা ট্যারিফ কার্যকর করা হয়েছে। গড়ে ৪১ শতাংশ বেড়েছে এ ট্যারিফ বা মাশুল। নতুন ট্যারিফের হিসাবে প্রতিটি ২০ ফুট দৈর্ঘ্যরে কন্টেইনার পরিবহনের ক্ষেত্রে সাড়ে চার হাজার টাকার মতো বাড়তি মাশুল গুনতে হবে।
বন্দরের এ ট্যারিফ বাড়ানোয় বর্তমান বিশ্বপরিস্থিতিতে ক্রমবর্ধমান ভোগ্যপণ্যের চাহিদা ও রপ্তানিতে প্রতিযোগী দেশগুলোর সঙ্গে প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশের সামগ্রিক ব্যবসা-বাণিজ্যে ধস নামতে পারে বলেও উদ্বেগ প্রকাশ করেন ব্যবসায়ীরা।
গত রোববার প্রায় ৩৯ বছর পর চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের ট্যারিফ বাড়ানোর বিষয়ে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এসএম মনিরুজ্জামানের স্বাক্ষরিত বিজ্ঞাপন প্রকাশিত হয়।
সোমবার থেকে এই মাশুল কার্যকর করে বন্দর কর্তৃপক্ষ। ট্যারিফ কার্যকরের বিষয়টি নিশ্চিত করেন চট্টগ্রাম বন্দরের সচিব মো. ওমর ফারুক। সচিব বলেন, ১৯৮৬ সালের পর মাশুল বাড়ানো হয়েছে। দীর্ঘ সময়ের ব্যবধানে এ মাশুল খুব বেশি বাড়েনি।
মাশুল বাড়ানোর পর বন্দর ব্যবহারকারীরা এ নিয়ে আপত্তি তুলে বলছেন, নতুন ট্যারিফে স্বাভাবিক আমদানি-রপ্তানিতে এর প্রভাব পড়বে। ভোক্তাপর্যায়ে এর প্রভাব সবচেয়ে বেশি হবে বলে উল্লেখ করেছেন তারা। তাদের দাবি নতুন মাশুল কার্যকর হওয়ায় ব্যবসায়ীরাও ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।
বাংলাদেশ শিপিং এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের পরিচালক খায়রুল ইসলাম সুমন বলেন, এই উচ্চ হারে মাশুল বাড়ানোর কারণে ভোক্তা পর্যায়ে চাপ বেড়ে যাবে। অন্যান্য দেশের সঙ্গে রপ্তানি খাতের প্রতিযোগিতা সক্ষমতা কমে যাবে।
সীকম গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আমিরুল হক বলেন, চট্টগ্রাম বন্দরের মতো সেবামূলক একটি সংস্থার সেবা মাশুল এক লাফে ৪১ শতাংশ বাড়ানোয় রপ্তানি সক্ষমতা চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে। কারণ রপ্তানিতে এখন দুই দফায় বাড়তি মাশুল গুনতে হবে। কাঁচামাল আমদানির সময় এবং কনটেইনারে পণ্য রপ্তানির সময় এ বাড়তি মাশুল দিতে হবে। এর ফলে রপ্তানিতে প্রতিযোগিতা সক্ষমতা কমবে। আবার আমদানি ব্যয়ও বেড়ে যাবে। বাড়তি এই মাশুলের বোঝা শেষ পর্যন্ত ভোক্তাদের ওপরই চাপবে। বন্দরের নতুন মাশুলের কারণে আমদানি-রপ্তানিতে বড় ক্ষতি হয়েছে বলে মনে করছেন তিনি।
তিনি বলেন, আমরা মনে করেছিলাম, অন্তত যাচাই-বাছাই করে যেসব খাতে মাশুল বৃদ্ধি যুক্তিসংগত, সরকার সেসব খাতে মাশুল বাড়াবে। কিন্তু এখন দেখছি সরকারের পক্ষ থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করে দিনে দিনে এই মাশুল কার্যকর করা হয়েছে। আমরা সব সময় ব্যবসার খরচ কমানো এবং রপ্তানি সক্ষমতার কথা বলে আসছি। অথচ এসব নীতির বিরুদ্ধে গিয়ে মাশুল বাড়ানো হলো। এটা অপ্রত্যাশিত।
চট্টগ্রামের কয়েকজন ভোগ্যপণ্যের আমদানিকারক তাদের পরিচয় গোপন রাখার শর্তে বলেন, এখন থেকে যেহেতু আমদানিপণ্যের ওপর বাড়তি মাশুল চাপবে, সেহেতু ভোক্তা পর্যায়ে এবং আমদানির পণ্যে বানানো রপ্তানির পণ্যেও বাড়তি টাকা গুনতে হবে। এতে দেশের সামগ্রিক ব্যবসা-বাণিজ্যের ওপর সুদূরপ্রসারী নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।