শেয়ার বিজ ডেস্ক : চট্টগ্রাম বন্দরের নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনালে (এনসিটি) কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ে রেকর্ড গড়েছে চট্টগ্রাম ড্রাই ডক লিমিটেড (সিডিডিএল)। দেশের প্রধান সমুদ্রবন্দরের কার্যক্রমে দক্ষতা ও গতিশীলতা বৃদ্ধির মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানটি বন্দরের ইতিহাসে উল্লেখযোগ্য রেকর্ড গড়ে তুলেছে। চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ গতকাল মঙ্গলবার এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গত ৩১ আগস্ট আগের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে একদিনে ৫ হাজার ৬১টি ইইউএস কনটেইনার হ্যান্ডলিং করে বন্দরের ইতিহাসে এই মাইলফলক অর্জন করে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর অঙ্গপ্রতিষ্ঠান সিডিডিএল।
পাশাপাশি আগস্ট মাসে এনসিটি’তে মোট ৭৫ হাজার ৫৮৭টি বক্স কনটেইনার হ্যান্ডলিং হয়েছে। যার পরিমাণ ১ লাখ ২২ হাজার ৫১৭টি ইইউএস। এটা চট্টগ্রাম বন্দরের ইতিহাসে এক মাসের কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ে সর্বোচ্চ রেকর্ড।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ জানায়, গত ৭ জুলাই থেকে এনসিটি’র ২, ৩, ৪ ও ৫ নম্বর বার্থ পরিচালনার দায়িত্ব নেয়ার পর থেকেই টার্মিনালের কার্যক্রমে দৃশ্যমান পরিবর্তন আসে। সিডিডিএলের সুশৃঙ্খল ব্যবস্থাপনা ও অভিজ্ঞ টিমের কারণে জাহাজ আগমন, কনটেইনার ডেলিভারি, কাস্টমস অ্যাপ্রাইজাল এবং গেট অপারেশনসহ প্রতিটি পর্যায়ে উন্নতি হয়েছে। বন্দরের সার্বিক কার্যক্রমে নিরবচ্ছিন্ন গতি নিশ্চিত করেছে প্রতিষ্ঠানটি।
বিষয়টি নিশ্চিত করে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ সচিব ওমর ফারুক বলেন, ‘কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ে একদিনের রেকর্ডসহ পুরো মাসে বন্দরের ইতিহাসে এক মাসে রেকর্ড কনটেইনার হ্যান্ডলিং করার যে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি, তাতে সিডিডিএল চট্টগ্রাম বন্দরের সার্বিক সক্ষমতা ও অপারেশনাল গতিশীলতা বৃদ্ধিতে বড় ভূমিকা রেখেছে।’
সিডিডিএলের এই সফলতা শুধু আমদানি-রপ্তানি খাতেই গতি আনবে না। বরং দেশের ব্যবসাবান্ধব অবকাঠামো এবং পরিচালন দক্ষতার একটি শক্তিশালী বার্তা বৈশ্বিক বিনিয়োগকারীদের কাছেও পৌঁছাবে বলে মনে করেন তিনি।
ওমর ফারুক বলেন, ‘বাংলাদেশের অর্থনীতির সামগ্রিক প্রবৃদ্ধিতে এর ইতিবাচক প্রভাব পড়বে বলেও আশা করা হচ্ছে।’
এর আগে গত জুলাই মাসের তথ্যানুযায়ী জানা গেছে, চট্টগ্রাম বন্দরে মোট ৩২ লাখ ৯৬ হাজার ৬৭টি টিইইউ (২০ ফুট দৈর্ঘ্যরে সমতুল্য ইউনিট) কনটেইনার হ্যান্ডলিং হয়েছে, যা আগের অর্থবছরের তুলনায় ১ লাখ ২৭ হাজার ৩৭৭ টিইইউ বেশি।
আগের বছর হ্যান্ডলিং হয়েছিল ৩১ লাখ ৬৮ হাজার ৬৯০ টিইইউ। ফলে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৪ শতাংশ। ১৯৭৭ সালে চট্টগ্রাম বন্দরে কনটেইনার অপারেশন শুরুর পর থেকে এটিই সর্বোচ্চ কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ের রেকর্ড।
একই সঙ্গে, দেশের সবচেয়ে বড় কাস্টমস স্টেশন চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস ২০২৪-২৫ অর্থবছরে রাজস্ব আদায় করেছে ৭৫ হাজার ৪৩২ কোটি টাকা। আগের অর্থবছরে এ অঙ্ক ছিল ৬৮ হাজার ৭৫৫ দশমিক ৭ কোটি টাকা। বছরে রাজস্ব আদায় বেড়েছে ৬ হাজার ৬৭৬ দশমিক ৩ কোটি টাকা বা ৯ দশমিক ৭১ শতাংশ।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ ও কাস্টমস কর্মকর্তারা জানান, অর্থবছরের শেষ দিকে এনবিআর কর্মকর্তাদের কর্মবিরতি ও আন্দোলনের কারণে বন্দর ও কাস্টমসে কার্যক্রম ব্যাহত না হলে কনটেইনার হ্যান্ডলিং ৩৩ লাখ ছাড়িয়ে যেত এবং রাজস্ব আদায় আরও বেশি হতো।
বছরজুড়ে কাস্টমস ও বন্দর কার্যক্রমে ব্যাঘাত ঘটিয়েছে বিভিন্ন ঘটনাÑ বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন, দুটি ঈদ উপলক্ষে ছুটি, পরিবহন ধর্মঘট, এনবিআর কর্মকর্তাদের একাধিক ধাপের কর্মবিরতি এবং পুরোপুরি কার্যবিরতি।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের তথ্য অনুযায়ী, গত কয়েক অর্থবছরে কনটেইনার হ্যান্ডলিং ছিল: ২০২০-২১ সালে ৩০ লাখ ৪ হাজার ১৪২টিইইউ, ২০২১-২২ সালে ৩০ লাখ ৯৭ হাজার ২৩৬টিইইউ, ২০২২-২৩ সালে ৩২ লাখ ৫৫ হাজার ৩৫৮টিইইউ এবং ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ৩০ লাখ ৭ হাজার ৩৭৫টিইইউ।
বর্তমানে চট্টগ্রাম বন্দরে যে কনটেইনার হ্যান্ডলিং হয়, তার মধ্যে মূল জেটি, কমলাপুর অভ্যন্তরীণ কনটেইনার ডিপো (আইসিডি) ও পানগাঁও অভ্যন্তরীণ কনটেইনার টার্মিনালের কার্যক্রম অন্তর্ভুক্ত। এতে আমদানি-রপ্তানি উভয় কনটেইনার এবং খালি কনটেইনারও অন্তর্ভুক্ত।
চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে বর্তমানে মোট আমদানির ২৩ শতাংশ হয় কনটেইনারে। বাকি ৭৭ শতাংশ আসে বাল্ক পণ্য, তেল ও কেমিকেল ট্যাংকারে। বন্দরে ভিড়েছে এমন জাহাজের মধ্যে ৪৫ শতাংশই কনটেইনারবাহী, ৪৫ শতাংশ বাল্ক ক্যারিয়ার এবং ১০ শতাংশ তরল পণ্যবাহী জাহাজ। দেশের মোট কনটেইনার বাণিজ্যের প্রায় ৯৯ শতাংশ পরিচালিত হয় চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে। বাকিটা পরিচালিত হয় মোংলা বন্দর থেকে।

Discussion about this post